এই না হলে 'স্পেশাল ওয়ান'

জুভেন্টাসের বিপক্ষে সেই বিখ্যাত উদ্‌যাপন। সংগৃহীত ছবি
জুভেন্টাসের বিপক্ষে সেই বিখ্যাত উদ্‌যাপন। সংগৃহীত ছবি
>ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাঁকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছে দুই দিনও হয়নি। এখনো ইংল্যান্ড ছাড়েননি মরিনহো। এর মধ্যেই বিভিন্ন ক্লাব তাঁকে দলে নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে গেছে। কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেছে দলগুলোর মধ্যে, কে তাঁকে দলের কোচ হিসেবে নিতে পারে!

এ জন্যই হয়তোবা তাঁকে ‘স্পেশাল ওয়ান’ বলা হয়। চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়েছেন দুই দিনও হয়নি। ম্যানচেস্টার ছেড়ে চলে এসেছেন লন্ডনে। কিন্তু এর মধ্যেই চাকরির জন্য অফার পাওয়া শুরু করেছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। দলের বাজে অবস্থার কারণে ছাঁটাই হলে যেখানে দিনের পর দিন বেকার পড়ে থাকতে হয় কোচদের, সেখানে হোসে মরিনহোর সঙ্গে ইতিমধ্যে অনেক দল যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে নিজেদের কোচ হিসেবে নেওয়ার জন্য।

দুই দিন আগে ছাঁটাই হয়েছেন তিনবারের প্রিমিয়ার লিগে জেতা কোচ মরিনহো। আনুষ্ঠানিকভাবে অবশ্যই ‘ছাঁটাই’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ক্লাবের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মরিনহো। গত ২৮ বছরে এমন বাজে পারফরম্যান্স করেনি কোনো ইউনাইটেড দল। তারপর তাঁকে দায়িত্বে রাখা হবে না তা নিশ্চিতই ছিল। তার ওপর দলের অনেক সদস্যের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না। পগবা, মাতা, সানচেজের মতো খেলোয়াড়েরা কখনোই তাঁর অধীনে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি। নতুন কোচ হিসেবে আনা হয়েছে ‘বেবি ফেইসড এসাসিন’ খ্যাত ওলে গানার সোলসকায়েরকে।

সবাই ভেবেছিলেন এমন বিদায়ের পর কিছুদিন চুপচাপ থাকবেন মরিনহো। কিন্তু তিনি তো চুপচাপ থাকার পাত্র নন। আর এমন বিদায় তাঁর জন্য নতুন কিছুও নয়। এর আগেও ছাঁটাই হতে হয়েছে মরিনহোকে। লন্ডনের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে অবশ্য নরম হয়েই কথা বলেছেন মরিনহো। বলেছেন, ‘ইউনাইটেড আর আমার পথ এখন থেকে আলাদা। আমি আমার মতো চলছি, ইউনাইটেড ইউনাইটেডের মতো।’ নিজের মতো চলা শুরু করেছেন মরিনহো। এখনই কোচ হওয়ার প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে বিভিন্ন দল থেকে। গুঞ্জন উঠেছে তাঁর সাবেক দল ইন্টার মিলান ও রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে চাইছে কোচ হিসেবে।

এই মৌসুমে ইতিমধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ একবার ছাঁটাই হয়েছেন। চার মাসের মাথায় চাকরি হারিয়েছেন হুলেন লোপেতেগি। নতুন কোচ সান্তিয়াগো সোলারির অধীনে রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গে চুক্তি যে এই মৌসুমের শেষ পর্যন্ত। মৌসুম শেষে কোচ হিসেবে মরিনহোকেই নাকি পছন্দ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের। পেরেজের অধীনে এর আগেও রিয়াল মাদ্রিদের কোচ ছিলেন মরিনহো। টানা ৭ বছর চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় পর্বে বাদ হওয়ার পর প্রথম মরিনহোর অধীনে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পা দেয় রিয়াল মাদ্রিদ। চার মৌসুম পর রেকর্ড ১০০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল মাদ্রিদ। কোপা দেল রে শিরোপাও জিতে নেয় বার্সেলোনাকে হারিয়ে।

কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ড্রেসিংরুমের আনুগত্য হারিয়ে ফেলেছিলেন মরিনহো। অধিনায়ক ক্যাসিয়াসসহ অনেক খেলোয়াড় আর চাইছিলেন না মরিনহোকে। তিন বছরের চুক্তি শেষে তাই রিয়াল মাদ্রিদ আর নবায়ন করেনি মরিনহোর চুক্তি। ক্যাসিয়াস কিংবা রোনালদো কেউই এখন বর্তমান রিয়াল মাদ্রিদ দলে নেই। রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থাও খুব একটা সুবিধার নয়। সভাপতি পেরেজের নিজের পছন্দের কোচ মরিনহোকে তাই নতুন করে রিয়ালের ডাগ আউটে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে নাকি যোগাযোগও শুরু করেছে রিয়াল, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে স্প্যানিশ মিডিয়ায়।

ইতিমধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগের দৌড় থেকে বাদ পড়ে গেছে ইন্টার মিলান। এই মৌসুমে ইউরোপা খেলতে হবে তাদের। শুধু তা–ই নয়, এত টাকা খরচ করার পরও কোচ লুসিয়ানো স্পেলেত্তির অধীনে লিগে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মিলান। কিন্তু যে ইউরোপে ভালো করার জন্য স্পেলেত্তিকে নিয়োগ দেওয়া, তা পাচ্ছে না ইন্টার মিলান বোর্ড। সে জন্য নিজেদের সেরা কোচকে ফেরত আনতে চায় ইন্টার। হোসে মরিনহোর অধীনে নিজেদের একমাত্র ট্রেবল জিতেছিল ইন্টার মিলান। একসঙ্গে লিগ, কোপা ইতালিয়া আর চ্যাম্পিয়নস লিগে জেতার দুঃসাধ্য অন্য কোনো ইতালিয়ান ক্লাব করে দেখাতে পারেনি, যা মরিনহো করে দেখিয়েছিলেন। ইন্টারের ডিরেক্টর অব ফুটবল অবশ্য খুব সাবধানে এড়িয়ে যান উত্তরটা, ‘মরিনহো ভালো কোচ, আমাদেরও এখন ভালো একজন কোচ আছে, তবে ভবিষ্যতে কী হবে, তা বলা যায় না।’

হোসে মরিনহোকে নেওয়ার দৌড়ে আছে আরও অনেক দল, যেমন চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের প্রতিপক্ষ প্যারিস সেন্ট জার্মেই। পোর্তোর মতো দলকে নিয়ে যেভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সাফল্য পেয়েছেন মরিনহো, তাঁর থেকে সে রকমই কিছু আশা করছে পিএসজি। তবে এই মৌসুমে হয়তো না, তবে পরের মৌসুমে ঠিকই তাঁকে নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যাবে বিভিন্ন দলের। তবে এই জানুয়ারিতেই কোচ হিসেবে নিতে চায় চায়নিজ লিগ ও মেজর লিগ সকারের অনেক দল। তবে সেখানে গেলে ইউরোপে ফেরার সম্ভাবনা আরও কমে যাবে, সেটা ভালো করেই জানেন মরিনহো। তাই বাকি ছয় মাস হয়তো একটু আরাম করে বোর্ডের সামনে বসে নিজের সমস্যাগুলো কাটানোর চেষ্টা করবেন মরিনহো। এরপর আবার নিজের মতো করে ফিরবেন স্বঘোষিত ‘স্পেশাল ওয়ান’।