লড়াইয়ের মধ্যে আরেক লড়াই

টি–টোয়েন্টিতে হঠাৎ কেন ব্যাটখানা কথা শুনছে না, সেই উত্তরই হয়তো খুঁজছেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। ফাইল ছবি
টি–টোয়েন্টিতে হঠাৎ কেন ব্যাটখানা কথা শুনছে না, সেই উত্তরই হয়তো খুঁজছেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। ফাইল ছবি
>

বছরের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত একটা লক্ষ্যও থাকছে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটসম্যানের সামনে—টি–টোয়েন্টিতে রানে ফেরার।


ওয়েস্ট ইন্ডিজের এবারের বাংলাদেশের সফরটা যেন অদ্ভুত সমাপাতনের এক সফর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সফরসূচক টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাইয়ের জবাব হলো ধবলধোলাইয়ে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে দুরন্ত পেস-বাউন্সের জবাব ঢাকা-চট্টগ্রামের স্পিনের ‘ভুলভুলাইয়ায়’। ওয়ানডে সিরিজে ধরনটা আবার অন্য রকম; জুলাই-আগস্টের সেই সিরিজের মতো এবারও জয়ী দলটা বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো বাংলাদেশেও দুই ম্যাচ শেষে ১-১ সমতা। সিলেটে শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতলেন মাশরাফি বিন মুর্তজারা।
চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সেই একই ঘটনা। দেশের মাটিতেও পিছিয়ে পড়ে দুই ম্যাচ শেষে আজ সন্ধ্যার অলিখিত ফাইনালে মুখোমুখি সাকিব ও ব্রাফেটের দল। মার্কিন মুলুকে ফ্লোরিডার লডারহিলের সেই রাত আজ আবার মিরপুরে ফিরে আসুক, এটাই চাইছে পুরো বাংলাদেশ। তাঁর সঙ্গে হয়তো আরেকটা বাড়তি চাওয়াও আছে, সেই লডারহিলের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির মতো করে ফিরে আসুন তামিম ইকবাল। কারণটা খুব সহজ, এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে চোটে পড়া তামিম ইকবাল বছরের অনেকগুলো ম্যাচই হারিয়ে ফেলেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ওয়ানডে সিরিজের প্রত্যাবর্তনটা যেমন রাজসিক হয়েছিল, টি-টোয়েন্টিতে ফেরার পর দুই ম্যাচ গেল, কিন্তু সেই তামিমের দেখা নেই। যিনি ফ্লোরিডার সেই ম্যাচে ৪৪ বলে ৬টি চার ও ৪ ছক্কায় করেছিলেন ৭২ রান। তাঁর সেই আগুনে ঝলকেই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিটা ১২ রানে জিতে সিরিজে ফিরেছিল বাংলাদেশ।
পরশু মিরপুরে সেই তামিমকেই খুঁজে ফিরছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের তৃষিত চোখ। তামিম শুরুটা পেয়েছিলেন, সেটি টেনে নিতে পারেননি। এক প্রান্তে লিটন যখন তুমুল বেগে ক্যারিবীয় আত্মবিশ্বাস গুঁড়িয়ে দিতে মত্ত, তামিম স্বরূপে ফিরতে পারেননি। ১৪ রানে কাভারে ক্যাচ তুলে দেন কটরেলের তৃতীয় ওভারে। যখন ফাবিয়ান অ্যালেনের বদান্যতায় বেঁচে যান, তখন আশা জাগে খোলস ছেড়ে বেরোবেন তামিম। কিন্তু এরপর আর একটি রানই যোগ করেন, পঞ্চম ওভারে সেই অ্যালেনের বলে কটরেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের মালিক।
আজ মিরপুরে সিরিজ নিষ্পত্তির ম্যাচটা জেতার পথে সত্যিকারের তামিমকে খুঁজে পাওয়াটাই তাই খুব বেশি দরকার। লড়াইটা তামিমের একারও নয়, একই যুদ্ধে আজ নামবেন দলের আরেক প্রধান ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমও। ৭৬টি টি-টোয়েন্টিতে ২০.৩০ গড়ে ১১৩৭ রান করা মুশফিকের টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ে মন্দা যাচ্ছে সেই জুনের দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পর থেকেই। সেই সিরিজের পর ঘরে-বাইরে খেলা মোট ৫টি টি-টোয়েন্টির কোনোটিতেই ২০ পেরোয়নি মুশফিকের রান (সর্বোচ্চ ১৫, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রথম টি-টোয়েন্টি)। পরশু দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১১৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর তাঁকেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল উইকেটে। কিন্তু ৩ বলের বেশি টেকেননি ‘মিস্টার ডিপেনডেবল’। ওশান টমাসের গতি কাজে লাগিয়ে হাঁকাতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন ফাবিয়ান অ্যালেনের হাতে।
আজকের ম্যাচটা তাই মুশফিকের জন্যও নিজেকে খুঁজে নেওয়ার। আর সেটা বোঝেন বলেই পুরো দল যখন কাল বিশ্রামে কাটিয়েছে হোটেলে, তখন বিশাল কিট ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে মিরপুর ইনডোরের দিকে হাঁটা দেন বাংলাদেশের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। এমনিতেই ছুটি বা বিশ্রাম বলে তেমন কিছু নেই মুশফিকের। কাল শরীরী ভাষায়ও যেন মরিয়া ভাবটা ফুটে উঠছিল মুশফিকের। বাংলাদেশের জন্য আজই এই বছরের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে রানের মধ্যে থাকার যে আত্মবিশ্বাস, সেটিকে সঙ্গী করে নেওয়ার শেষ চেষ্টাটা নিশ্চয়ই বিফলে যেতে দিতে চান না মুশফিক।