এ তো সিনেমার স্ক্রিপ্ট!

রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং লাইন আপ ধসিয়ে দিয়েছেন আলিস আল ইসলাম। ছবি: শামসুল হক টেঙ্কু
রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং লাইন আপ ধসিয়ে দিয়েছেন আলিস আল ইসলাম। ছবি: শামসুল হক টেঙ্কু
>আজ ঢাকা ডায়নামাইটস-রংপুর রাইডার্স ম্যাচের আগেও যাঁকে মানুষ চিনত না, জানত না, সেই তিনি হঠাৎ আলোচনায়। দর্শকেরা বিস্ময়ভরা চোখে দেখল অচেনা এক তরুণ বোলার কীভাবে বিপিএলের রঙিন মঞ্চ রাঙাচ্ছেন। আলিস আল ইসলাম ছিলেন নেট বোলার, চলে এলেন লাইমলাইটে।

রাতারাতি পাদপ্রদীপের আলোয় আসাটা তাহলে একেই বলে!
আজ ঢাকা ডায়নামাইটস-রংপুর রাইডার্স ম্যাচের আগেও যাঁকে মানুষ চিনত না, জানত না, সেই তিনি হঠাৎ আলোচনায়। দর্শকেরা বিস্ময়ভরা চোখে দেখল অচেনা এক তরুণ বোলার কীভাবে বিপিএলের রঙিন মঞ্চ রাঙাচ্ছেন। এ তো সিনেমার স্ক্রিপ্ট! 

ম্যাচের আগে সুনীল নারাইনের কাছে ঘটা করে টি-টোয়েন্টি অভিষেকের টুপি পেয়েছেন। এই নারাইন তাঁর আদর্শ বোলার। বোলিং অ্যাকশনেও ক্যারিবীয় স্পিনারের সঙ্গে অনেক মিল। রংপুর ইনিংসের সপ্তম ওভারে যখন প্রথম সাকিব আল হাসান তাঁকে বোলিং আক্রমণে আনলেন, তখন প্রেসবক্সে ফিসফাঁস, এই বোলারটা কে? খানিক পরে তাঁর পরিচয়-ঠিকানা জানার আগ্রহ হলো অন্য কারণে। শুভাগত হোমের বলে মোহাম্মদ মিঠুনের দুটি সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করে হাসির খোরাক জোগালেন! স্নায়ুচাপ নির্ঘাত! স্নায়ুচাপে সহজ ক্যাচই জমাতে পারেননি আলিস।

সাকিব তাঁকে বোলিং আক্রমণ থেকে সরিয়ে নিলেন। যদিও প্রথম ওভারটা একেবারে খারাপ করেননি, দিয়েছেন ৭ রান। আলিসকে আবার আনা হলো ১৬ তম ওভারে। এসেই তাক লাগিয়ে দিলেন। স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দিলেন রংপুরের সর্বোচ্চ রান করা (৮৩) রাইলি রুশোকে। গুরুত্বপূর্ণ এক ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে যদি তাক লাগিয়ে দেন, তাহলে বড় বিস্ময় তখনো বাকি। ১৮তম ওভারে সাকিব আবার আনলেন আলিসকে। এবার যা করলেন, তাতে উঠে গেলেন রেকর্ডের পাতায়। আলিস টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই করলেন হ্যাটট্রিক, যেটি ২০ ওভারের ক্রিকেটেই দেখা গেল প্রথমবার। এখানেই থামেননি, শেষ ওভারে ১৪ রানও ডিফেন্ড করেছেন। জিতিয়েছেন দলকে।

চারদিকে তখন আলোচনা, কে এই আলিস? কীভাবে, কোথা থেকে উঠে এসেছেন তিনি? তাঁর ক্রিকেটীয় পরিচয় বিস্তারিত জানাতে গুগল, ক্রিকেট ওয়েবসাইট—সব ব্যর্থ! এমনকি তিনি বিপিএল ড্রফটেও ছিলেন না। ঢাকা ডায়নামাইটসে যোগ হয়েছেন বিপিএলের সপ্তাহখানেক আগে। তাহলে আলিসকে চেনার উপায়? যাওয়া হলো সাবেক দুই অধিনায়ক আকরাম খান ও খালেদ মাসুদের কাছে। তাঁরাও তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারলেন না আলিসের পরিচয়।' প্রথম বিভাগে খেলেছে মনে হয়', শুধু এতটুকুই বলতে পারলেন।

সব প্রশ্নের উত্তর, সব কৌতূহল মেটালেন আলিস নিজেই। কখনো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলেননি, জাতীয় লিগ-বিসিএল দূরে থাক, আজ প্রথমবারের মতো স্টেডিয়ামেই খেলার সুযোগ হলো তাঁর। আর প্রথম সংবাদ সম্মেলন তো অবশ্যই। সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে ভেতরে স্নায়ুচাপ কিন্তু আত্মবিশ্বাসী চেহারায় প্রথমে নিজের পরিচয় দিলেন, ‘আমার নাম আলিস আল ইসলাম।’ জানালেন বিপিএলে আসার গল্পটাও, ‘আমি ঢাকা ডায়নামাইটসের নেট বোলার ছিলাম। আগে আমি ঢাকা প্রথম বিভাগে খেলেছি। নেটে বোলিং করার সময় সুজন স্যার (ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ) আমাকে দেখেন। দেখে তাঁর মনে হয় যে আমি ভালো করতে পারব। তারপর আমাকে দলে নেয়। টিম ম্যানেজমেন্ট, সতীর্থরা আমাকে অনেক সমর্থন দেয়। এর আমি সেরা একাদশে।’

ঢাকার সাভারের বালিয়ারপুরে বাড়ি। আলিস কাল সন্ধ্যায় জানতে পারেন এই ম্যাচে খেলবেন। সেটি তাঁকে জানান কোচ খালেদ মাহমুদই। নিজেই জানালেন, এত বড় স্টেডিয়াম, এত দর্শকের সামনে খেলা, এত তারকার সঙ্গে খেলা—শুরুতে ঘাবড়েই গিয়েছিলেন। পরে দারুণভাবে সামলে নিয়েছেন। দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। অসাধারণ বোলিং করে রাতারাতি আলোচনায় চলে এসেছেন।

ফাটকা হিসেবেই তাঁকে কাজে লাগিয়েছে ঢাকা টিম ম্যানেজমেন্ট। আজ ফাটকাটা কাজে লাগলেও সামনে যে সফল হবেন, এটির নিশ্চয়তা নেই। তাঁকে এখন ভালোভাবেই বিশ্লেষণ করবে প্রতিপক্ষ। সেটির চেয়ে আলিসের জন্য বড় চিন্তার বিষয় তাঁর অ্যাকশন। প্রথম বিভাগ খেলার সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাঁর বোলিং অ্যাকশন। যদিও তাঁর দাবি, ‘না কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। সবাই অমন ভেবেছিল।’
অ্যাকশন নিয়ে যদি চিন্তার ছেঁড়া মেঘ থেকেও থাকে আলিসের, সেটি বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসের কথায় উড়ে যাওয়ার কথা, ‘সে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল কিন্তু সেটি সংশোধন করেছে। কেউ যদি রিপোর্টেড হয়ে থাকে তবে তাকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়। সেও সংশোধনের কাজ করেছে। যদি আবার আম্পায়ার তাকে রিপোর্ট করে তবে আবার সংশোধনে যেতে হবে, আরাফাত সানি-তাসকিনের মতো। ক্লিয়ার হয়ে গেলে খেলতে তো অসুবিধা নেই।'

আলিসের স্বপ্নের আকাশটা এখন অনেক বড়, সেই আকাশ বড় হয়েছে আজকের পারফরম্যান্স দিয়ে। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যদি কোনো ত্রুটি থেকেও থাকে নিশ্চয় তাঁর স্বপ্নের অপমৃত্যু হতে দেবেন না আলিস!