গুপ্তচরবৃত্তির কথা স্বীকার করলেন আর্জেন্টিনার কোচ!

এমনিতেই ‘পাগল’ বলে ‘সুনাম’ আছে মার্সেলো বিয়েলসার! (ছবি - টুইটার)
এমনিতেই ‘পাগল’ বলে ‘সুনাম’ আছে মার্সেলো বিয়েলসার! (ছবি - টুইটার)
প্রতিপক্ষের কৌশল জানার জন্য গুপ্তচর পাঠিয়েছিলেন লিডস ইউনাইটেডের কিংবদন্তি আর্জেন্টাইন কোচ মার্সেলো বিয়েলসা। কাল ডার্বি কাউন্টির সঙ্গে ম্যাচ শেষে ডার্বির মাঠের বাইরে গুপ্তচর পাঠানোর বিষয়টি স্বীকারও করেছেন এই কোচ


লিডস ইউনাইটেড ও ডার্বি কাউন্টি, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগের দুটি দল। দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ অর্থাৎ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে উত্তরণের জন্য এই দুই দল প্রচণ্ড চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সে লক্ষ্যে যথাক্রমে মার্সেলো বিয়েলসা ও ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের মতো দুই কিংবদন্তিকেও নিয়োগ দিয়েছে এই দুই ক্লাব। দ্বিতীয় বিভাগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা লিডস ও ষষ্ঠ স্থানে থাকা ডার্বি মুখোমুখি হয়েছিল কাল। ম্যাচের আগেই অভিযোগ উঠেছিল ডার্বির মাঠের বাইরে থেকে উঁকিঝুঁকি মেরে ল্যাম্পার্ডের কৌশল সম্পর্কে আরেকটু গভীর ধারণা পাওয়ার জন্য ক্লাবের এক কর্মচারীকে পাঠিয়েছিলেন বিয়েলসা। ম্যাচ শেষে ‘দোষ’টি স্বীকারও করলেন এই আর্জেন্টাইন কোচ।

কোচিং প্রজ্ঞার দিক দিয়ে বিয়েলসার সমকক্ষ মানুষ আছেন হাতেগোনা। এই বিয়েলসার কাছ থেকেই কোচিং ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, দীক্ষা নিয়েছেন পেপ গার্দিওলা, মরিসিও পচেত্তিনো, হোর্হে সাম্পাওলি, এদুয়ার্দো বেরিজ্জো, জেরার্ডো মার্টিনোর মতো ম্যানেজার। তবে অতি প্রতিভাবান বলেই কি না, বিয়েলসার স্বভাবটা বেশ পাগলাটে। যে কারণে তাঁর ডাকনামই হয়ে হয়ে গিয়েছে ‘এল লোকো’ বা ‘পাগল লোক’! ফুটবলীয় কৌশলের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসগুলিও খুব নির্ভুলভাবে করতে চান তিনি। যে কারণে লিডসের কৌশল সম্পর্কে আরও বেশি জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জানতে গিয়েই অজান্তে অনৈতিক একটি কাজ করে বসেছেন, ডার্বির অনুশীলন মাঠের বাইরে গুপ্তচর পাঠিয়ে।

কয়েক দিন আগে ডার্বির মাঠের বাইরে একজনকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে শঙ্কিত হয় ডার্বির কর্মকর্তারা, ডার্বিশায়ারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ডেকেও আনে ক্লাবটি। যদিও সেই লোককে গ্রেপ্তার করা হয়নি, কেননা তিনি দৃশ্যত ডার্বির কোনো ক্ষতি করেননি। সেদিনই বোঝা গিয়েছিল সন্দেহভাজন লোকটি লিডস থেকেই এসেছেন। কাল বিয়েলসার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে সেই সন্দেহটাই সত্যি বলে প্রমাণিত হলো, ‘হ্যাঁ, সেই লোককে আমিই পাঠিয়েছিলাম। আমি এই পুরো ব্যাপারটার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছি। আমারই দোষ। কাজটি করার জন্য আমি ডার্বির অনুমতিও নিইনি। আমি আগেও এমন কাজ করেছি, যখন আর্জেন্টিনার কোচ ছিলাম। তখন এই কাজকে নীতিবিরোধী বলে মনে হয়নি। আমার ওখানে এটি খারাপ কাজের চোখে দেখা হয় না। পুরো ব্যাপারটাতেই আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন, কিন্তু সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো বিষয়টাকে ডার্বি ও ল্যাম্পার্ড কীভাবে দেখছে। গতকাল ল্যাম্পার্ড আমাকে বলেছে, আমি নীতিবিরোধী কাজ করেছি।’

ওদিকে ডার্বির কোচ ল্যাম্পার্ড পুরো ব্যাপারটায় বেশ বিরক্ত। বেশ কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়েছেন বিয়েলসাকে, ‘আপনি যদি এখন এই কাজটা করে বলেন এটি আপনাদের সংস্কৃতির অংশ, সেটা তো আমার দেখার বিষয় না। আমার যদি কখনো ইংল্যান্ডের বাইরে কোথাও কাজ করার সৌভাগ্য হয়, আমি অবশ্যই সেই দেশের সংস্কৃতি, রীতিনীতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। খেলোয়াড়ি দিক দিয়ে বিয়েলসা যে কাজটা করেছেন, সেটা নীতিবিরোধী।’

বিয়েলসা এর আগে ২০০২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন। আর্জেন্টিনা ছাড়াও কোচিং করিয়েছেন চিলিকে। লিল, মার্শেই, লাৎসিওর মতো ক্লাবগুলোকেও কোচিং করিয়েছেন তিনি। তার ফুটবলীয় প্রজ্ঞা বিশ্বনন্দিত।