রোহিতের রেকর্ডের পরও হারল ভারত

সেঞ্চুরি করলেও দলকে জয় এনে দিতে পারেননি রোহিত। ছবি: এএফপি
সেঞ্চুরি করলেও দলকে জয় এনে দিতে পারেননি রোহিত। ছবি: এএফপি

ম্যাচের ফল যাই হোক, ম্যাচ রিপোর্টটা রোহিত শর্মাকে নিয়েই লেখা হবে। এটা নিশ্চিত করেছেন ভারতীয় ওপেনারই। ভয়ংকর এক শুরুর পরও ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভারত ছিটকে যায়নি জয়ের সমীকরণ থেকে। এর কারণ ভারতীয় ওপেনার একাই ম্যাচটা ধরে রেখেছেন, উত্তেজনার পারদ নামতে দেননি কখনো। শেষ পর্যন্ত ২৮৯ রানের লক্ষ্যে নেমে ভারত যে ৩৪ রানে হারল এর কারণ, প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে প্রায় তিন শ ছোঁয়া স্কোর তাড়া করা অসম্ভব এক কাজ।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আগে শুধু জসপ্রীত বুমরাকে বিশ্রাম দিয়েছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার দলের অবশ্য পুরো পেস অ্যাটাকই বিশ্রামে গেছে। ভারতের ক্ষেত্রে সে সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। অভিষিক্ত জ্যাসন বেহরেনডর্ফ আর নবীন ঝাই রিচার্ডসন মিলে কাঁপিয়ে দিয়েছে ভারতের টপ অর্ডার। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই একমাত্র রিভিউ নষ্ট করেছেন অভিষেকের উত্তেজনার ঘোরে থাকা বেহরেনডর্ফ। সে দুঃখ ভুলেছেন পরের বলেই শিখর ধাওয়ানকে এলবিডব্লু করে। অভিষেকে নিজের প্রথম ওভারে কোনো রান না দিয়েই উইকেট! সেটা আরও দারুণ শোনাবে যখন জানবেন, ক্যারিয়ারে এই প্রথম গোল্ডেন ডাক পেলেন ধাওয়ান!

পরের ওভারও ছিল মেডেন। ভালো পেসের সঙ্গে দুর্দান্ত আউট সুইংয়ের প্রদর্শনীতে রোহিতকে কোনো রান পেতে দেননি রিচার্ডসন। এই আউট সুইং দিয়েই ফাঁদে ফেললেন বিরাট কোহলিকে। পুরোপুরি অফ সাইডের ফিল্ড সেটিংয়ে পায়ের ওপর বল পেয়ে দুবার ভাবেননি কোহলি। ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ। এক বল পরে আম্বাতি রাইডু শুধু এলবিডব্লু হলেন না, রিভিউটাও নষ্ট করে দিলেন। চার ওভারের মধ্যে ৪ রানে ৩ উইকেট হারাল ভারত। রিচার্ডসন দুই ওভার বল করে কোনো রান না দিয়ে দুই উইকেট!

এরপরই ভারতের ঘুরে দাঁড়ানো। নিজের ১৮তম বলে প্রথম রান পেলেন রোহিত, সেটাও ফ্রি হিটে। সেটা ছক্কা হয়ে আশ্রয় নিয়েছে গ্যালারিতে। কিন্তু তখনই কোনো ঝড়ের ইঙ্গিত দেননি রোহিত। প্রথম দশ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে মাত্র ২১ রান তুলেছিল ভারত। রোহিত শর্মা ২৯ বলে ১০ রান। ২১ বলে ৩ রান মহেন্দ্র সিং ধোনির। এর মাঝে ধোনির প্রথম রানটি ছিল ভারতের হয়ে ১০ হাজারতম। এমন উপলক্ষ পেয়ে ধোনি জ্বলে উঠলেন এমন কিছু লিখতে পারলে ভালোই হতো, কিন্তু ধোনি সেটা করার সুযোগ দিলেন না। ৫৫তম বলে প্রথম চার মেরেছেন। ইনিংসের বাকি ৪১ বলে আর দুটি চার ও একটি ছক্কা যোগ করতে পেরেছেন। ৯৬ বলে ৫১ রানের প্রশ্নবিদ্ধ এক ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন ধোনি। তবু ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের পর ওয়ানডেতে ফিফটি তো পেলেন ধোনি!

ধোনির ইনিংসকে প্রশ্নবিদ্ধ বলতে বাধ্য করছেন রোহিত। প্রবল চাপে এই ওপেনারও ব্যাট করেছেন। প্রথম ২৯ বলে ১০ রান করা রোহিত পরের ১০০ বলে তুলেছেন ১২৩ রান। এ সময়ে আরও ৫টি ছক্কা মেরেছেন, পেয়েছেন গোটা ১০ চারও। ১৩৭ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে ধোনি যদি আরেকটু ইতিবাচক হতেন তাহলেই হয়তো আজ ম্যাচটা বের করে নিতে পারতেন রোহিত। কিন্তু সেটা করার সুযোগ পাননি রোহিত। তবে রেকর্ড গড়া হয়ে গেছে তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটা রোহিতের সপ্তম সেঞ্চুরি, অস্ট্রেলিয়াতে চতুর্থ। অজিদের মাঠে তাদেরই বিপক্ষে এত সেঞ্চুরি করতে পারেননি কেউ। টেন্ডুলকার, ভিভ রিচার্ডস, লারা কিংবা বর্তমানের কোহলিও নন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২৯ ইনিংসে ৭টি সেঞ্চুরি তাঁর, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এত কম ইনিংসে এত এত সেঞ্চুরি শুধু কোহলিরই আছে (২৭ ইনিংসে ৫)। টেন্ডুলকারকেও ৯ সেঞ্চুরি খেলতে ৭০ ইনিংস খেলতে হয়েছে।

এত এত রেকর্ড করেও অবশ্য লাভ হয়নি। রিচার্ডসন ও বেহরেনডর্ফ অন্যপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট তুলে নিয়েছেন। ক্লান্ত রোহিত ৪৬তম ওভারে মার্কাস স্টয়নিসকে হাঁকাতে গিয়ে বিদায় নিয়েছে। ভারতের জয় তখনো ৬৮ রান দূরে। ভুবনেশ্বর কুমারের ২৩ বলে ২৯ রান শুধু হারের ব্যবধান কমিয়ে এনেছে ৩৪-এ। ১০ ওভারের অসাধারণ এক স্পেলে ২৬ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন রিচার্ডসন।