'মোনেম মুন্নার দেশ তলানিতে থাকতে পারে না'

মোনেম মুন্না। ফাইল ছবি
মোনেম মুন্না। ফাইল ছবি
>

ভারতীয় সৈয়দ নঈমুদ্দিন প্রায় এক যুগ ধরে যাওয়া আসার মধ্যে আছেন বাংলাদেশের ফুটবলে। অনেক রাখঢাক রেখে ক্লাবে বসেই শোনালেন প্রতিবেশী দুই দেশের ফুটবলের বাস্তবিক চিত্র। 

ভারত ও বাংলাদেশের ফুটবলের মানের পার্থক্য কোথায়? প্রায় একই পর্যায়ে থাকা অবস্থান থেকে কীভাবে একেবারেই বাংলাদেশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেল ভারত? ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের রহস্য কী?—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ভারতীয় সৈয়দ নঈমুদ্দিনের চেয়ে ভালো আর কে জানেন! নঈমুদ্দিনই একমাত্র কোচ, যাঁর ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের-ই জাতীয় দলকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা আছে। ৭৫ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এই কোচ প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশের ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের ঘরের কোচ। অনেক রাখঢাক রেখে ক্লাবে বসেই শোনালেন প্রতিবেশী দুই দেশের ফুটবলের বাস্তবিক চিত্র। হাহাকার ঝরল সাবেক কিংবদন্তি ফুটবলার মোনেম মুন্নার স্মরণে।

ভারতকে দুইবার সাফের শিরোপা এনে দেওয়া নঈমুদ্দিন ২০০৬ সালের পর থেকেই ভারতীয় ফুটবলে ব্রাত্য। কিন্তু নিজ দেশের ফুটবল উন্নয়ন উপভোগ করছেন চুটিয়ে। বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে ৯৬ নম্বরে থাকা ভারত বাছাইপর্ব পেরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে এশিয়ান কাপে। আরব আমিরাতে প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে সুনীল ছেত্রীরা জানান দিয়েছে তাঁদের শক্তি। ঢাকায় বসে নিজ দেশের এমন দাপুটে পারফরমেন্স বেশ উপভোগ করছেন দলের সাবেক কোচ নঈমুদ্দিন। কিন্তু তাঁর দেশের ফুটবল তো আর এমনি এমনি বদলায়নি।

নিজ দেশের ফুটবল উন্নয়নের পেছনে বিনিয়োগ, ফুটবল কর্তাদের আত্ম নিবেদন ও কঠোর পরিশ্রমের রসায়নকেই মানেন নঈমুদ্দিন, ‘জাতীয় দলের কোচ থাকা অবস্থায় আমি কখনো দুই-এক মাসের বেশি অনুশীলন করানোর সুযোগ পেতাম না। এখন তো বেশির ভাগ সময় জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা দেশের বাইরেই থাকে। কোচকে দেওয়া হয় পূর্ণ স্বাধীনতা। এ ছাড়া সর্বত্রে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে, কর্তারা অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বয়সভিত্তিক দল গড়ে ভালো কোচিং স্টাফ নিয়োগ দিয়েছে। ভালো লিগের আয়োজন করেছে। এতেই বদলে গেছে ভারতের ফুটবল।’

২০০৪ সালে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন নঈমুদ্দিন। পরের বছরই আবার ভারতে ফিরে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে পুনরুদ্ধার করেছেন সাফের শিরোপা। তাও আবার ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়েই। কিন্তু ২০০৬ সালেই চুকে যায় ভারত-নঈমুদ্দিন সম্পর্ক। ২০০৭ সাল থেকে নঈমুদ্দিন তো একপ্রকার ব্রাদার্সের ঘরের-ই কোচ। মাঝে ২০০৭ সালেই নিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বও। সুতরাং এই দেশের ফুটবলের নাড়ি নক্ষত্র তাঁর জানা। এ সুবাদেই প্রতিবেদককে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনাদের দেশে কটা ফুটবল একাডেমি আছে?’ উত্তর, একটিও নয়। পরে নিজেই আবার জানালেন, ‘ভারতে গিয়ে দেখুন কটা একাডেমি বানিয়েছে ফেডারেশন। ফুটবলে উন্নয়ন করতে হলে তৃণমূলে টাকা খরচ করতে হবে। শক্তিশালী করতে হবে লিগ।’

নিজ দেশের উন্নয়ন নঈমুদ্দিনের যেমন ভালো লাগে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের ফুটবলের দুরবস্থা দেখে খারাপ লাগে তাঁর। অর্ধযুগ আগেও পাশাপাশি হাঁটা দুটি দেশের ফুটবলের পার্থক্য এত বড় হয়ে উঠবে, মানতে পারেন না নঈমুদ্দিন। মোনেম মুন্নার মতো ফুটবলারের জন্ম যে দেশে, সেই দেশের ফুটবল তলানিতে থাকা আরও বেশি মানতে পারেন না নঈমুদ্দিন, ‘আমার অধীনে ইস্টবেঙ্গলে মোনেম মুন্না খেলেছে। আমি ওকে ডিফেন্ডার থেকে মিডফিল্ডার বানিয়েছি। ও ফুটবল মাঠে যা ইচ্ছে তাই করতে পারত। ওর মতো কোয়ালিটি খেলোয়াড় বাংলাদেশে জন্মেছে। আলফাজ, আরমান, আসলাম, হাসান আল মামুনরা এই দেশেরই খেলোয়াড়। এর পর দেখলাম মামুনুলকে। অর্থাৎ দেশে প্রতিভা আছে, খুঁজে বের করতে হবে।’ বর্তমান খেলোয়াড়দের আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে বলেও জানালেন নঈমুদ্দিন।