পাকিস্তানে ওয়ানডে খেলবে অস্ট্রেলিয়া?

১৯৯৮ সালে সর্বশেষ পাকিস্তান সফর করেছিল অস্ট্রেলিয়া। পেশোয়ারে ৩৩৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মার্ক টেলর। ফাইল ছবি
১৯৯৮ সালে সর্বশেষ পাকিস্তান সফর করেছিল অস্ট্রেলিয়া। পেশোয়ারে ৩৩৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মার্ক টেলর। ফাইল ছবি

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) বলছে, আলোচনা এখনো চলছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও (সিএ) সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়নি, তবে সেটি এই সিরিজেই হবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ‘হ্যাঁ’ না বললেও সরাসরি নাকচও করেননি। পাকিস্তান–সমর্থকেরা আশায় বুক বাঁধছে, বড় কোনো দলের বিপক্ষে নিজ দলকে আবার তারা খেলতে দেখবে নিজেদের মাটিতে। ২০০৮ সালের পর পাকিস্তানে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ম্যাচ ছাড়া যে একেবারেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নির্বাসিত! এর মধ্যে অনেক দলকেই পিসিবি রাজি করানোর চেষ্টা করেছে। এবার অস্ট্রেলিয়াকেই ওয়ানডে সিরিজে আতিথ্য দিতে চায় পাকিস্তান।

আগামী মার্চে এই দুই দলের পাঁচ ম্যাচের একটি ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা। সেটি মূলত হবে আরব আমিরাতে, যে দেশটিকে পাকিস্তান নিজেদের বিকল্প হোম ভেন্যু বানিয়েছে। তবে পিসিবি চাইছে, অন্তত দুটি ওয়ানডে যেন পাকিস্তানের মাটিতে আয়োজন করা যায়। এ কারণে অস্ট্রেলিয়া দলকে দেশটির নিরাপত্তাব্যবস্থা নিজ চোখে দেখে আসার আরজি জানিয়েছে পিসিবি।

অস্ট্রেলিয়া ঐতিহাসিকভাবেই পাকিস্তানে সফর করেছে খুব কম। ১৯৯৮ সালের পর তারা দেশটিতে খেলতেই যায়নি। অস্ট্রেলিয়া ২০০২ সালের সফরটি শ্রীলঙ্কা ও আরব আমিরাতে ভাগাভাগি করে খেলেছে। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঢের আগে থেকেই দেশটির নিরাপত্তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংশয় ছিল।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে গতকাল দেশটির দ্য এজ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, ‘আমরাও চাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আবার পাকিস্তানে শুরু হোক। ক্রিকেট নিয়ে দেশটির মানুষের আবেগ তো আমরা বুঝি। তবে আমাদের খেলোয়াড় এবং দলের কর্মীদের নিরাপত্তা আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার। এতে আমরা কোনো ছাড় দিতে রাজি নই। পাকিস্তানে সফর করার ব্যাপারে আমরা সরকারি নানা বাহিনী ও দপ্তরের পরামর্শ নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নেব। এই পর্যায়ে আমরা আমাদের নির্ধারিত দ্বিপক্ষীয় সফরটি আরব আমিরাতের বাইরে খেলার ব্যাপারে ভাবছি না। তবে পরে কখনো সেই দেশে খেলার ব্যাপারে আমরা অবশ্যই চিন্তাভাবনা করে দেখব। জানুয়ারির শুরুতেই পিসিবিকে আমরা এই অবস্থানের কথা বলে দিয়েছি।’

২ জানুয়ারি সিএর কাছ থেকে এই চিঠি পাওয়ার পাঁচ দিন পরে পিসিবি আবারও সিএকে চিঠি দেয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অন্তত একবার পাকিস্তানে তাদের নিরাপত্তা দলকে পাঠানোর অনুরোধ করেছে পিসিবি। নিজ চোখে নিরাপত্তা দল এসে সবকিছু ঘুরে দেখে গেলে অস্ট্রেলিয়া দুটি ম্যাচ সেখানে খেলতে রাজি হবে—এ ব্যাপারে পিসিবি এখনো আশাবাদী।

পাকিস্তানকে হয়তো আশাবাদী করছে দুটি বিষয়। ২০১৫ সালে সফর বাতিল করার পরও নিরাপত্তা আয়োজনে সন্তুষ্ট হয়ে ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশ সফর করে গিয়েছিল। এ ছাড়া বর্তমান অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে দলের বেশ কজন ক্রিকেটার এরই মধ্যে পাকিস্তানে এসে খেলে গেছেন। যাঁদের মধ্যে আছেন বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক টিম পেইনও। সতীর্থ জর্জ বেইলি ও বেন কাটিংয়ের সঙ্গে বিশ্ব একাদশের হয়ে লাহোরে তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন পেইন।

এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে কিছু ম্যাচ খেলে গেছে দেশটিতে। পিএসএল টি-টোয়েন্টি লিগের কিছু ম্যাচও পাকিস্তানে আয়োজন করা হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান ওয়ানডে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলেননি, ‘পাকিস্তানে ক্রিকেট ফিরলে সেটা দারুণ কিছু হবে। আমি জানি, তাদের সমর্থকদের ক্রিকেট নিয়ে উচ্ছ্বাসটা কেমন। কত মানুষ সেখানে ক্রিকেট দেখে। আরব আমিরাতে তো স্টেডিয়াম ফাঁকাই থাকে। পাকিস্তানে ক্রিকেট ফিরলে টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে। কিন্তু পাকিস্তানে সফর করার এটাই কি সঠিক সময়? আমি নিশ্চিত নই...আসলে এটা দুই বোর্ড আর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের সংগঠন মিলে ঠিক করবে।’