'মিনারা'-'নার্গিস'দের কাছে প্রথম হার সাকিবদের

ব্যাট হাতে রাজশাহীর জয়ে ভূমিকা ছিল মার্শাল আইয়ুবের। ছবি: প্রথম আলো
ব্যাট হাতে রাজশাহীর জয়ে ভূমিকা ছিল মার্শাল আইয়ুবের। ছবি: প্রথম আলো
>বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসকে প্রথম হার উপহার দিল রাজশাহী কিংস

আগে ব্যাটিংয়ে নামা রাজশাহী কিংসের ইনিংসে পড়েছে ৬ উইকেট। এর মধ্যে ৫ উইকেটই স্পিনারদের। তখনই বোঝা গিয়েছিল, সিলেটের বাইশ গজে আগের দিনের পুনরাবৃত্তিই ঘটতে যাচ্ছে। যথারীতি লো-স্কোরিং ম্যাচ আর ‘কথিত’ পেসবান্ধব উইকেটে স্পিনারদের দাপট! এমনই দাপট যে, টানা চার ম্যাচজয়ী ঢাকা ডায়নামাইটসও সাদামাটা স্কোর তাড়া করতে নেমে হেরেছে ২০ রানে।

সাদামাটা স্কোরই তুলেছিল রাজশাহী। ৬ উইকেটে ১৩৬ রান। এই বিপিএলে এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ভালো ব্যাটিং করা ঢাকার জন্য এই সংগ্রহ মামুলি হওয়ার কথা। কিন্তু ঢাকা ব্যাটিংয়ে নামার পর দেখা গেল রাজশাহীর স্পিনারদের কাছে তাঁরা-ই মামুলি! ৫৩ রান তুলতেই নেই ৫ উইকেট। ততক্ষণে ১১তম ওভারের খেলা চলছে। ঢাকার এই ৫ উইকেটের মধ্যে ৪টি স্পিনারদের। আন্দ্রে রাসেল, রনি তালুকদার ও ঢাকা অধিনায়ক সাকিবকে তুলে নিয়ে দলটির মিডল অর্ডার ভেঙেছেন রাজশাহীর স্পিনার আরাফাত সানি। ওপেনার সুনীল নারাইনকে তুলে নেন রাজশাহী অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

কিন্তু কাইরন পোলার্ড তখনো উইকেটে থাকায় ঢাকার জয়ের আশা টিকে ছিল। ১৪ রান করে রনি আউট হওয়ার পর পোলার্ড যখন ব্যাটিংয়ে এলেন জয়ের জন্য ৫৭ বলে ৮৪ রানের দূরত্বে ঢাকা। পোলার্ডের ব্যাটিংয়ের জন্য একেবারে আদর্শ মঞ্চ। পরের চার ওভারে সেভাবে আর হাত খোলেননি এই ক্যারিবিয়ান। দ্রুত কয়েক উইকেট পড়ায় ঝুঁকি নেননি তিনি। ১৫তম ওভার শেষে হাতে ৫ উইকেট নিয়ে ৩০ বলে ৫৫ রানে পিছিয়ে ছিল ঢাকা। পোলার্ড তখন ১ চারে ১৪ বলে ১৩, অন্য প্রান্তে মোহাম্মদ নাঈম তুলনামূলক মারমুখী—২ চারে ১৫ বলে ১৬।

মিরাজ এসে ঢাকার রান তাড়া আরও কঠিন করে তোলেন পরের ওভারেই। ১৬তম ওভারে মাত্র ২ রান নিয়ে নাঈমকে তুলে নেন রাজশাহী অধিনায়ক। ২৪ বলে ৫৩ রানের কঠিন সমীকরণে পড়ে যায় ঢাকা। এই চাপ থেকে ম্যাচটা বের করতে পারতেন শুধু পোলার্ড। কিন্তু ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলেই রাজশাহীর জয় নিশ্চিত করে ফেলেন রায়ান টেন ডেসকাট। কামরুল ইসলাম রাব্বির ফুল টস বল তুলে মেরেছিলেন পোলার্ড। স্ট্রেট অঞ্চলে বলটা অবিশ্বাস্য বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ক্যাচে পরিণত করেছেন এই ডাচ ক্রিকেটার। ঠিক যেন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে পোলার্ডের সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচটির ‘কার্বন কপি’!

সীমানার খুব কাছ থেকে শূন্যে লাফিয়ে বলটা তালুবন্দী করেছিলেন ডেসকাট। কিন্তু সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছেন বুঝতে পেরে বল ছুঁড়ে মারেন মাঠে তাঁর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা বদলি ফিল্ডার সৌম্য সরকারের কাছে। সৌম্য বলটা লুফে নিয়ে স্রেফ ক্যাচের আনুষ্ঠানিকতাই সেরেছেন। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ওই ক্যাচটা আসলে ডেসকাটের! ১৯ বলে ১৩ রান করা পোলার্ড ফেরার পর এই বিপিএলে ঢাকার প্রথম হার মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়।

এর আগে ঢাকার শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ২৩ রানের মধ্যে ঢাকার টপ অর্ডার ধসিয়ে দেন রাজশাহীর বোলাররা। দ্বিতীয় ওভারে সুনীল নারাইনকে (১) ফেরান মিরাজ। পরের ওভারে বিপজ্জনক হজরতউল্লাহ জাজাইকে (৬) তুলে নেন রাজশাহীর লঙ্কান পেসার ইসুরু উদানা। ঢাকার স্কোর তখন ২.৪ ওভারে ২ উইকেটে ২৩। চতুর্থ ওভারে সানির শিকার হয়ে রাসেল যখন ফিরছেন ঢাকার স্কোর তখনো ২৩! বোঝাই যাচ্ছে, সাদামাটা স্কোর নিয়েই ঢাকার ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছিল রাজশাহী, বিশেষ করে দলটির স্পিনাররা।

অধিনায়ক সাকিব আর রনি তালুকদারও পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলতে পারেননি। সানিকে মিডউইকেটে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন সাকিব (১৩)। ঠিক এর এক ওভার পরই সানির বলে বোল্ড হন রনি। পোলার্ড মন্থর ব্যাটিং করলেও তাঁকে ঘিরে আশা ছিল ঢাকার। সেই আশাও ডোবার পর শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য ৪৪ রান দরকার ছিল ঢাকার। এই অবস্থায় আসিফ হোসেন ও নুরুল হাসান শুধু হারের ব্যবধানই কমাতে পেরেছেন।

উদানার করা ১৯তম ওভারে ১৭ রান তুলে সিলেটের দর্শকদের খানিকটা বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নুরুল। শেষ ওভারে মোস্তাফিজ এসে নুরুলকে (২১) তুলে নিলেও অলআউট হয়নি ঢাকা। ৯ উইকেটে ১১৬ রানে থেমেছে দলটির ইনিংস। ২০ রানের এই হার এবারের বিপিএলে ঢাকার প্রথম হারও। রাজশাহীর হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন আরাফাত সানি। মাত্র ৮ রানে ৩ উইকেট নেন এই স্পিনার। ১৮ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ।

রাজশাহীর খেলোয়াড়েরা আজ মাঠে নেমেছেন মায়ের নামে জার্সি পরে। অধিনায়ক মিরাজের জার্সিতে লেখা তাঁর মায়ের নাম— ‘মিনারা’। আর সানির জার্সিতে তাঁর মায়ের নাম লেখা ‘নার্গিস’। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচটা জিতে মায়েদের ঠিকই গৌরবান্বিত করেছেন রাজশাহীর বোলাররা। সাকিবরা আসলে হারলেন ‘মিনারা’ ও ‘নার্গিস’-এর কাছে!