ছয় বছর টি-টোয়েন্টি না খেলেই এমন ইনিংস!

মার্শাল আইয়ুব টি-টোয়েন্টিতে ফিরলেন ছয় বছর পর। ছবি: প্রথম আলো
মার্শাল আইয়ুব টি-টোয়েন্টিতে ফিরলেন ছয় বছর পর। ছবি: প্রথম আলো
>সবশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে, বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। ছয় বছর পর মার্শাল আইয়ুব কাল আবার সুযোগ পেলেন টি-টোয়েন্টি খেলার। লম্বা বিরতিতে তাঁর প্রত্যাবর্তনটা হলো দারুণ

সবশেষ কবে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, মনে করতে পারলেন না মার্শাল আইয়ুব, ‘কবে খেলেছি ঠিক মনে নেই!’ মনে পড়া কঠিনই। সবশেষে টি-টোয়েন্টি তিনি খেলেছেন ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে, স্মৃতিতে ধুলো তো পড়বেই।

ছয় বছর যাঁর টি-টোয়েন্টি খেলা হয়নি তিনিই কাল রাজশাহী কিংসের হয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে খেললেন ৪৫ রানের অতি মূল্যবান এক ইনিংস। যে ইনিংস রাজশাহীর জয়ে বড় ভূমিকাও রেখেছে। মার্শালের এই ৪৫ রান রাজশাহীর কাছে যেন সেঞ্চুরির সমান।

ছয় বছর পর খেলতে নেমেছেন ২০ ওভারে ক্রিকেট, মার্শালের ভেতর স্বাভাবিকভাবেই স্নায়ুচাপ কাজ করেছে, ‘অনেক দিন পর নেমেছি। শুরুতে একটু স্নায়ুচাপ কাজ করেছে। তবে প্রথম বাউন্ডারিটা মারার পর স্বচ্ছন্দ হয়ে গেছি। লক্ষ্যই ছিল বলে বলে রান করা। পাওয়ার প্লে কাজে লাগানো। দলের রানরেট যেন ভালো থাকে।’

স্নায়ুচাপ তিনি কাটিয়েছেন আন্দ্রে রাসেলের করা পঞ্চম ওভারে দুই চার আর এক ছক্কা মেরে। ঘরোয়া ক্রিকেট তাঁকে সবাই চেনে স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে। সেটির ছাপ ছিল কালকের ইনিংসেও। দারুণ গতিতে এগোচ্ছিলেন। ৩০ বলে ৪৫ রানও করে ফেলছিলেন। ফিফটি যখন অনিবার্য হয়ে পড়েছে তখন সুনীল নারাইনের শিকার হয়ে ফিরলেন। লম্বা বিরতির পর প্রত্যাবর্তনটা ভালোই হয়েছে, তবে ইনিংসটা আরেকটু লম্বা না করতে পারার আফসোস মার্শালের, ‘একটু আফসোস তো আছেই। আরও কিছু রান করলে দলের জন্য ভালো হতো, নিজের জন্যও ভালো হতো। ইনিংসটা আরও ভালোভাবে শেষ করতে পারতাম।’

আফসোস থাকলেও মার্শালের চোখে খুশির ঢেউ, লম্বা বিরতি হলেও নিজেকে প্রমাণ তো তিনি করতে পেরেছেন— টি-টোয়েন্টিটাও তিনি ভালো খেলেন। মার্শালদের মতো খেলোয়াড়দের লম্বা বিরতিতে টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ হয়, দায়টা বিসিবিরই। বিপিএলের বাইরে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগই নেই, কীভাবে স্থানীয় প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা নিজেদের মেলে ধরবেন?

অনেক দিন ধরে তাই দাবি উঠেছে বিপিএলের বাইরে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের। মার্শালও সেই কোরাসে কণ্ঠ মেলালেন, ‘আমাদের চার দিনের ম্যাচ আর ওয়ানডে ছাড়া আর কোথাও তো নিজেকে প্রমাণ করার জায়গা নেই। আমিও টি-টোয়েন্টি খেলতে পারি, প্রমাণটা যে করব সেই জায়গা কোথায়? ওয়ানডেতে এটা প্রমাণ করা কঠিনই। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আমার লক্ষ্য ছিল স্ট্রাইকরেট ভালো রাখা। ভেবেছিলাম স্ট্রাইকরেট ভালো থাকলে বিপিএলের কোনো দল হয়তো আমাকে নেবে। প্রিমিয়ার লিগ ছাড়া আর কোথাও তো জায়গা নেই আক্রমণাত্মক খেলার। স্থানীয় কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয় না, এক বিপিএল ছাড়া। বিপিএলের বাইরে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হলে স্থানীয়রা প্রমাণের সুযোগ পাবে।’

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক দীর্ঘশ্বাসের নাম মার্শাল আইয়ুব। প্রতিভাবান, স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান হওয়ার পরও তাঁর ক্যারিয়ারটা আটকে আছে ঘরোয়া ক্রিকেটেই। তিনটি টেস্ট খেলার সুযোগ হয়েছিল মার্শালের। কিন্তু আলো ছড়ানো হয়নি সেভাবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে মার্শাল ভালো খেললেই পুরোনো আক্ষেপটা নতুন করে জেগে ওঠে, কালও যেমন উঠেছে।