কারও দরকার ৪১ মিনিট, কারও ৮৯০!

ইউরোপে সেরা ফরোয়ার্ডদের গোল পেতে কয় মিনিট দরকার হচ্ছে? ফাইল ছবি
ইউরোপে সেরা ফরোয়ার্ডদের গোল পেতে কয় মিনিট দরকার হচ্ছে? ফাইল ছবি

শীতকালীন দল বদল এবার বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অন্যান্য মৌসুমে শীতকালীন দলবদলটা হাই তুলে কাটাতে হয় সবাইকে। গতবারই শুধু ফিলিপে কুতিনহোর জন্য ১৬০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে বার্সেলোনা। এবার কিন্তু দলবদলে নড়েচড়ে বসেছে অধিকাংশ দল। অনেকেই হাপিত্যেশ করছে গোলের জন্য, তাদের দরকার গোল এনে দেওয়ার মতো স্ট্রাইকার। অনেকেরই গোল নিয়ে চিন্তা নেই, তাঁরা চিন্তিত সোনার ডিম পারা হাঁসদের (পড়ুন ফরোয়ার্ড) বিশ্রাম নিয়ে। ব্যাক আপ ফরোয়ার্ডের খোঁজে নেমেছে অনেক দল।। ফলে বাজার জুড়ে শুধুই স্ট্রাইকারদের দলবদলের গুঞ্জন।

ফরোয়ার্ড দলে টানার এ খেলাতে খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে একটি বিষয়, এক একটি গোল পেতে তাঁদের কত মিনিট দরকার হচ্ছে। কারণ, মূল স্ট্রাইকার হোক কিংবা বদলি, কত দ্রুত গোল এনে দেন এ তথ্যটি বুঝিয়ে দেয় কেমন ফর্মে আছেন তাঁরা। চলুন দেখে নেওয়া যাক, ইউরোপে এবার কোন ফরোয়ার্ড কেমন ফর্মে আছেন—

পাকো আলকাসের, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড
বার্সেলোনার জার্সি গায়ে বুট জোড়ায় ধুলো জমেছিল স্প্যানিশ স্ট্রাইকারের। সে ধুলোটা মুছে নিতে ধারে ডর্টমুন্ডে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। এতেই যেন ঘুম থেকে জেগে উঠল এক দৈত্য। প্রথম দিকে শুধু বদলি নেমেই গোল করছিলেন গুনে গুনে। পরে নিয়মিত একাদশে সুযোগ পেয়েও অভ্যাস বজায় রেখেছেন। ফলাফল, চার মাস না যেতেই বার্সেলোনার কাছ থেকে আলকাসেরকে নিয়ে নিয়েছে ডর্টমুন্ড। ১২ ম্যাচে মাত্র ৫০২ মিনিট খেলেই ১২ গোল করেছেন। অর্থাৎ প্রতি ৪১ মিনিটে ১ গোল!

কিলিয়ান এমবাপ্পে, পিএসজি
বিশ্বকাপ জয় করে ক্লাব ফুটবলে ফিরতে একটু সময় নিয়েছেন এমবাপ্পে। কিন্তু ফর্ম যে হারাননি সেটি বোঝাতে দেরি করেননি। ফিরেই টানা কয়েক ম্যাচে দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। নেইমারকে আড়ালে ফেলে দেওয়ার মতো মৌসুম কাটাচ্ছেন ফ্রেঞ্চ তারকা। ১৩ ম্যাচে ১৪ গোল। সেটাও আবার মাত্র ১ হাজার ৭ মিনিটে। অর্থাৎ প্রতি ৭১ মিনিটে এক গোল।

লিওনেল মেসি, বার্সেলোনা
বার্সেলোনার প্রাণভোমরা বিশ্বকাপের দুঃখ ভুলতে আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। গোল করছেন, গোল করাচ্ছেনও। লিগে অর্ধেক পথেই রিয়ালের চেয়ে ১০ পয়েন্ট এগিয়ে দলটি। এর মাঝে ১৭ ম্যাচে মাঠে ছিলেন মেসি। ১৪১১ মিনিট মাঠে থেকেই ১৭ গোল। অর্থাৎ প্রতি ৮৩ মিনিটে গোল পাচ্ছেন মেসি।

লুকা জোভিচ, ফ্রাঙ্কফুর্ট
বসনিয়ায় এই স্ট্রাইকারের মূল দল বেনফিকা। এ মৌসুমে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেতে ধারে এসেছেন জার্মান ক্লাবে। সিদ্ধান্তটা যে এভাবে তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুড়িয়ে দেবে, সেটা কে জানত! বুন্দেসলিগায় ১৫ ম্যাচে মাত্র ১ হাজার ৩ মিনিট খেলে করেছেন ১২ গোল। ৮৩ মিনিটে এক গোল এনে দিচ্ছেন বলেই তো বেশ কিছু বড় ক্লাবের নজরে পড়ে গেছেন এর মাঝেই।

এডিনসন কাভানি, পিএসজি
নেইমার-এমবাপ্পের সঙ্গে নাকি তাঁর ঠিক জমছে না। নানা রকম মন কষাকষির গল্প শোনা যাচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু ত্রিশোর্ধ্ব এই স্ট্রাইকার এবার চোট ঝামেলা নিয়েও ১২ ম্যাচে করেছেন ১১ গোল। প্রতি ৯১ মিনিটে একটি গোল তাঁর!

নেইমার, পিএসজি
দলের মূল তারকা তিনি। তবে গোল করার চেয়ে বানানোটাও তাঁর কাজ। ফলে গোলের খেলায় দুই সতীর্থের পিছিয়ে আছেন নেইমার। তবু ১২ ম্যাচে ১১ গোল বা ৯৪ মিনিটে একটি গোল সাদরে গ্রহণ করবে ইউরোপের যেকোনো দল।

আরকাদিউশ মিলিক, নাপোলি
পোলিশ স্ট্রাইকার, এটুকু বললেই সবাই মনোযোগ দেন রবার্ট লেভানডফস্কির দিকে। কিন্তু মৌসুমের প্রথমভাগে তারকা সতীর্থকে পেছনে ফেলেছেন মিলিক। কার্লো আনচেলত্তির অধীনে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। ১৬ ম্যাচে ১০ গোল তাঁর। প্রতি ৯৭ মিনিটে এক গোল তাঁর, যেখানে লেভার দরকার হয়েছে ১৪২ মিনিট।

লুইস সুয়ারেজ, বার্সেলোনা
আগের মতো গতি নেই, মাঝে মধ্যেই তাঁর বিকল্প খোঁজার কথা বলে বার্সেলোনা। কিন্তু ১৪ গোল করা এই ফরোয়ার্ড এখনো বিশ্বের যে কোনো দলের সেরা একাদশে জায়গা করে নেবেন। মেসির সঙ্গে জুটি গড়ে প্রতি ১০৯ মিনিটে এক গোল তাঁর।

এমিলিয়ানো সালা, নঁতে
২৮ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন এবার সবাইকে চমকে দিয়েছেন। ফ্রেঞ্চ লিগে ১৮ ম্যাচে ১২ গোল করেছেন এই ফরোয়ার্ড। এমন ফর্মে থাকা স্ট্রাইকারকে রেকর্ড গড়ে দলে নিতে চাইছে ইংলিশ ক্লাব কার্ডিফ। প্রতি ১১৩ মিনিটে এক গোল করেছেন সালা।

ক্রিস্টিয়ান স্টুয়ানি, জিরোনা
বার্সেলোনার দ্বিতীয় সেরা ক্লাব হয়ে উঠেছে জিরোনা। গত মৌসুমেই প্রথম লা লিগায় ওঠা দলটি এ মৌসুমে আছে দুর্দান্ত ফর্মে। ১৭ ম্যাচে প্রতি ১১৫ মিনিটে ১২ গোল করে স্টুয়ানিই এর পেছনে মূল অবদান রেখেছেন। এমন ফর্ম দেখে বার্সেলোনা তাঁকে টানতে চাইছে দলে।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, জুভেন্টাস
নতুন ক্লাবে এসে ছন্দ পেতে একটু দেরি হয়েছে রোনালদোর। ছন্দ ফিরে পেয়ে অবশ্য জুভেন্টাসের রেকর্ডও গড়েছেন। শীরে ধীরে গোলের সংখ্যা বাড়ছে। আপাতত ১৯ ম্যাচে ১৪ গোল তাঁর। অর্থাৎ প্রতি ১১২ মিনিটে এক গোল পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের।

ডিয়েগো কস্তা, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
ফর্ম হারিয়ে ফেলা আলভারো মোরাতাকে চেলসি থেকে আনতে চাইছেন ডিয়েগো সিমিওনে। এমন সিদ্ধান্ত দেখে ভ্রু কুঁচকানোর আগে অ্যাটলেটিকোর নম্বর নাইনের পারফরম্যান্স জেনে নেওয়া ভালো। চোট ঝামেলার মাঝে ১১ ম্যাচে মাঠে ছিলেন কস্তা। এই ম্যাচগুলোয় ৮৯০ মিনিট খেলেছেন। তাতে মাত্র এক গোল করেছেন এই স্ট্রাইকার। ৮৯০ মিনিটে এক গোলের এমন পারফরম্যান্স শীর্ষ লিগের সেরা স্ট্রাইকারদের মধ্যে সবচেয়ে বাজে।