সেই ধোনিতেই ইতিহাস গড়ল ভারত

ফিনিশার ধোনির পুনর্জন্ম হলো অস্ট্রেলিয়াতে। ছবি: এএফপি
ফিনিশার ধোনির পুনর্জন্ম হলো অস্ট্রেলিয়াতে। ছবি: এএফপি

৪৪তম ওভারের প্রথম পাঁচ বলই ডট! শেষ বলে তড়িঘড়ি একটি রান নিয়ে মেডেন ঠেকালেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ৪২ বলে ৫৩ রানের লক্ষ্যটা ৩৬ বলে ৫২ হয়ে গেল। ধোনির দিকে সমালোচনার তির পাঠানোর জন্য হাত নিশপিশ করছিল সবার। পরের ওভারে ধোনির এক চারে ৮ রান এল। ৫ ওভারে ৪৪ রান, হাতে আছে ৭ উইকেট। ভারতের জয়ই তখন অবশ্যম্ভাবী। হার বা জয়, যাই হোক না কেন, শিরোনামে ধোনির থাকা নিশ্চিত। ২৩০ তাড়া করতে নেমে ধোনিই তো ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন। ৭ উইকেতের জয়ে সিরিজ জিতে গড়লেন ইতিহাস।

যে ম্যাচে প্রায় সবাই ধীর লয়ে ব্যাট করেছেন, সেখানে সর্বোচ্চ সংগ্রাহকের সমালোচনা করাটা বাড়াবাড়ি। তবু স্ট্রাইক রেট ৭০ এর নিচে ছিল বলেই এত দুশ্চিন্তা ছিল। পিটার সিডলের করা ৪৬তম ওভার ম্যাচটা ভারতের দিকে পাঠিয়ে দিল। প্রথম দুই বলে দুই ওয়াইড আর এক চারে এল ৮ রান। ওই ওভারের ১১ রানে সমীকরণ দাঁড়াল ৪ ওভারে ৩৩ রান। ঝাই রিচার্ডসনের ওভারটি কাটিয়ে দিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলারের ওভার শেষ হওয়ার পরও ভারত বিপদে পড়তে যাচ্ছিল। মার্কাস স্টয়নিসের প্রথম বলে ক্যাচ দিলেন ধোনি, প্রতিপক্ষ অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ সেটা ফেলে দিলেন! ৭৪ রানে দ্বিতীয়বার জীবন পেলেন ধোনি। ম্যাচটাও ওখানেই শেষ হলো।

এই স্টয়নিসের বলেই যে ধোনি প্রথমবার জীবন পেয়েছিলেন। ৫৯ রানে ২ উইকেট হারানো ভারতের ইনিংস তখন ধুঁকছিল। শূন্য রানে থাকা ধোনি ক্যাচ দিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের কাছে। অস্ট্রেলিয়া দলের সেরা ফিল্ডার সে ক্যাচ ফেলে দিলেন। মাত্র ২৩০ রানের লক্ষ্য নিয়ে নামা এক দল যখন ধোনির ক্যাচই দুবার ফেলে, তখন আর তাদের পক্ষে জয় পাওয়া সম্ভব নয়। ভারতের কাছে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হারাটাও নিশ্চিত হয়ে গেল তখন। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ২ ওভারে ১৪ রান নিতে পারবে না ভারত, এত একটা অসম্ভব চিন্তা। আর এই অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষেও অমন কোনো দুর্দান্ত পারফরম্যান্স যে দেখানো সম্ভব নয়, সেটাও তো জানা।

ধোনি ঝামেলা বাড়াননি, কেদার যাদবের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিটা ১২১ পর্যন্ত টেনে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে এসেছেন ৪ বল আগে। জয় এনে দেওয়া শটটি ৬১ রান করা যাদবের হলেও জয়টা এনে দিয়েছেন ধোনিই। ১১৪ বলে ৮৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন ধোনি। ৪৯তম ওভারে ১৩ রান দিয়ে সিডল প্রমাণ করেছেন, তাঁকে ৮ বছর দলে টেনে নির্বাচকেরা যে জুয়া খেলতে চেয়েছেন সেটা বোকামিই ছিল। বাকি তিন পেসারের তুলনায় একেবারেই নবিশ বোলিং করেছেন অভিজ্ঞতম পেসার। টানা দুই ম্যাচে বিপদে থাকা দলের ইনিংসে প্রথমে থিতু হয়ে পড়ে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচ শেষ করেছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে তাঁর দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতিয়ে সব প্রশ্ন ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছেন।