ডি ভিলিয়ার্সকে জয় উপহার দিলেন ফরহাদ

ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাট হাতেও ভালো করেছেন ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: প্রথম আলো
ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাট হাতেও ভালো করেছেন ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: প্রথম আলো
>বিপিএলে আজ দিনের প্রথম ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স

সিলেট সিক্সার্সকে হারালেন ফিল্ডাররা।
বিস্ময়ের কিছু নেই। পুরো ব্যাপারটাই স্বাভাবিক। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানের একটি নয় দুটি নয়, তিন-তিনটি ক্যাচ ছাড়ার পর সিলেটের ফিল্ডারদের মুখভঙ্গি দেখে অন্তত এমনটাই মনে হয়েছে। ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস—ক্রিকেটের এই আপ্তবাক্যে জাকের-পুরানদের যেন কোনো আস্থা নেই!

আদতে ঘটেছে সেটাই। ১৯৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল রংপুর রাইডার্স। বেশ কঠিন লক্ষ্য। অর্থাৎ, প্রতিপক্ষ শিবিরে এবি ডি ভিলিয়ার্স থাকলেও সিলেট সিক্সার্স বোলারদের জন্য কিছুটা স্বস্তির জায়গা ছিল। কিন্তু স্বস্তি উবে গেছে সিলেটের ফিল্ডারদের অবিশ্বাস্য ক্যাচ ছাড়ার প্রদর্শনীতে। যে রাইলি রুশো আগের তিন ম্যাচেই ঝোড়ো ফিফটি পেয়েছেন, শুধু তাঁর-ই তিনটি ক্যাচ ছাড়লে ম্যাচের আর কিছু থাকে!

শেষ পর্যন্ত থাকেওনি। দুই প্রোটিয়ার মার মার কাট কাট ব্যাটিংয়ে ঠিকই জয়ের পথে ছিল রংপুর। কিন্তু ১৪তম ওভারে রংপুরের জয়ের এই সমীকরণ উল্টে দেন সিলেটের পেসার তাসকিন আহমেদ। ওই ওভারে রুশো ও ডি ভিলিয়ার্সকে তুলে নেন তিনি। এরপর জয়ের পথ থেকে ধীরে ধীরে ছিটকে পড়ার শঙ্কায় ছিল রংপুর। কিন্তু মাশরাফি ও ফরহাদ রেজা মিলে রংপুরকে এনে দিয়েছেন দুর্দান্ত এক জয়। দল ১২ বলে ২৪ রানের সমীকরণে থাকতে ১৯তম ওভারে বোলার মেহেদী হাসান রানার কাছ থেকে ১৯ রান তুলে নেন দুজন। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৫ রান। ৩ বল হাতে রেখেই ৪ উইকেটের জয় তুলে নেন ফরহাদ ও মাশরাফি। ৬ বলে ১৮ রানে অপরাজিত ফরহাদই রংপুরকে শেষ দিকে এনে দিয়েছেন এই দুর্দান্ত জয়।

আর তাতে বিদায়ী উপহারটা পেলেন না সিলেট অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। এবার বিপিএলে সিলেটের হয়ে এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ। চোটের চিকিৎসা করাতে দেশে উড়াল দেবেন এই অস্ট্রেলিয়ান। ফিল্ডাররা তাঁর এই ‘উপহার’ পণ্ড করার পরিস্থিতি তৈরি করলেও শেষ দিকে কিন্তু সিলেটের বোলাররা আশা জাগিয়েছিলেন। রংপুর ৩০ বলে ৪৫ রানের দূরত্বে থাকতে ১৬তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে চাপ বাড়ান সিলেটের নেপালি লেগি সন্দ্বীপ লামিচাঁনে। পরের ওভারে ৭ রান দিয়ে চাপটা ধরে রাখেন সিলেটের পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ইরফান।

সিলেটকে ম্যাচে ফেরানোয় বড় অবদান তাসকিনের। আজ তিনি জোড়ায় জোড়ায় উইকেট নিয়েছেন। রুশো-ডি ভিলিয়ার্সকে একই ওভারে ফেরানোর পর তাসকিন ম্যাচটা আদতে শেষ করেছেন ১৮তম ওভারে। এই ওভারে আবারও জোড়া উইকেট! মিঠুন (১৪) ও নাহিদুলকে (১৯) তুলে নেন তিনি। রংপুর তখন ১২ বলে ২৪ রানের সমীকরণ। এখান থেকে ১ ছক্কা ও ২ চারের ইনিংসে জয় ছিনিয়ে আনেন ফরহাদ।

অথচ রংপুরের শুরুটা ছিল হতাশাজনক। মোহাম্মদ ইরফানের করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আকাশে ক্যাচ তুলে ফিরেছেন ক্রিস গেইল। বিপিএলে এই ক্যারিবিয়ানের রান খরা আরও দীর্ঘায়িত হলো। রুশো এখান থেকে অ্যালেক্স হেলসের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি বিপর্যয় এড়ান। হেলস-রুশো মিলে প্রথম ৬ ওভারেই তুলেছেন ১ উইকেটে ৫৯। রুশো অবশ্য থাকতেন না। এই ছয় ওভারের মধ্যে তাঁকে ১ রানে, ১২ রানে ও ২৪ রানে ‘জীবন’ উপহার দিয়েছেন সিলেটের ফিল্ডাররা। উইকেটের পেছনে প্রথম দুটি ক্যাচ ছেড়েছেন জাকির আলী। পরেরটি ছেড়েছেন নিকোলাস পুরান।

অনেকে ভেবেছিলেন সিলেটকে এই তিন ক্যাচ ছাড়ের খেসারত দিতে হবে হার দিয়ে। সেটাই হতো যদি রুশো কিংবা ডি ভিলিয়ার্স আরেকটু সময় উইকেটে থাকতেন। ২৪ বলে ৩৩ রান করা হেলস সপ্তম ওভারে ক্যাচ দেন অলক কাপালির বলে। ম্যাচে এটাই সিলেটের প্রথম ক্যাচ! এরপর রুশো-ডি ভিলিয়ার্স মিলে ৩৮ বলে ৬৭ রানের এক ‘সুপারসনিক’ জুটিতে রংপুরের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৪তম ওভারে সিলেটের পেসার তাসকিন এসে ভেঙেছেন তাঁদের জুটি। উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩৫ বলে ৬১ রানের আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন রুশো। দুই ছক্কা আর নয় চারে ‘জীবন’ পাওয়ার ভালো স্বদব্যহারই করেছেন এই প্রোটিয়া।

মজার ব্যাপার, জাকির দুটি ক্যাচ ছাড়ার পর তাঁর জায়গায় লিটন কিপিং করেছেন কিপিং-প্যাড ছাড়াই! রুশো আউট হওয়ার আগের ওভারেও তাঁকে রান আউটের সুযোগ নষ্ট করেছেন লিটন। সে যাই হোক, রুশো আউট হলেও ডি ভিলিয়ার্স উইকেটে থাকায় ভয় ছিল সিলেটের। সত্যি বলতে ভীতিজাগানিয়া ব্যাটিং-ই শুরু করেছিলেন ‘৩৬০ ডিগ্রি’। উইকেটের চারপাশেই স্ট্রোক খেলেছেন। কিন্তু তাসকিন ওই ওভারেরই শেষ বলে বোল্ড করেন ডি ভিলিয়ার্সকে। এরপরই যা একটু স্বস্তি পেয়েছেন সিলেটের ফিল্ডাররা।

২ ছক্কা ও ২ চারে ২১ বলে ৩৪ রান করা ডি ভিলিয়ার্সের বিপিএল অভিষেক ভালোই হলো। দল জেতায় তাঁর আরও খুশি হওয়ার কথা। এ তো অভিষেকেই জয়!