দুই 'ম'-তে ভর করে চিটাগং শীর্ষে

বিপিএলে তৃতীয় ফিফটির দেখা পেলেন মুশফিকুর। ছবি: প্রথম আলো
বিপিএলে তৃতীয় ফিফটির দেখা পেলেন মুশফিকুর। ছবি: প্রথম আলো
>বিপিএলে দিনের প্রথম ম্যাচে রাজশাহী কিংসকে ৬ উইকেটে হারাল চিটাগং ভাইকিংস

স্কোরবোর্ডে সংগ্রহটা মাঝারি পাল্লার। ৫ উইকেটে ১৫৭। এই রান তাড়া করতে নেমে পাঁচ ওভার শেষে চিটাগং ভাইকিংস ৩ উইকেটে ৩১। পরের ওভারে এলেন মোস্তাফিজুর রহমান। রাজশাহী অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ক্রিকেট বুদ্ধির তারিফ করতেই হয়। মিরাজ হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন, ম্যাচের শেষ দিকে স্নায়ুক্ষয়ী লড়াই হবে। তাতে জিততে হলে কাজে লাগাতে হবে ‘ডেথ ওভার’-এ দলের সেরা বোলারকে। মোস্তাফিজ!

শেষ ৭ ওভারে ৬১ রান দরকার ছিল চিটাগংয়ের। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় স্পেলে মোস্তাফিজকে আক্রমণে আনেন মিরাজ। মাত্র ৬ রান দিয়ে মোস্তাফিজও চাপ ধরে রাখেন। ওদিকে উইকেটে মুশফিক ও মোসাদ্দেকের ওপর তখন দলকে জেতানোর গুরুদায়িত্ব। শেষ ৩০ বলে ৪৮ রানের সমীকরণে পড়ে যান দুজন। উইকেটে তখন দুজনেই ‘সেট’—মুশফিক ৩২ বলে ৩৮ আর মোসাদ্দেক ১২ বলে ২০ রানে অপরাজিত।

বোঝাই যাচ্ছিল, এই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হবে মুশফিক-মোসাদ্দেক বনাম মোস্তাফিজের লড়াইয়ে। কিন্তু ১৬তম ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বি এসে মোস্তাফিজকে সেই সুযোগ দিলেন কোথায়! ওই ওভারে রাজশাহীর এই পেসার দিয়েছেন ১৬ রান। দুটি চার মোসাদ্দেকের একটি মুশফিকের। অর্থাৎ ২৪ বলে দরকার ৩৩। রাব্বির ওই খরুচে ওভারই ম্যাচটা সহজ করে দেয় দুই ‘ম’-এর জন্য। এরপর ১৮তম ওভারে মোস্তাফিজ যখন বল করতে এলেন ৩ ওভারে ২৫ রান দরকার চিটাগংয়ের। ম্যাচ বাঁচাতে এই ওভারটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল রাজশাহীর জন্য।

কিন্তু ‘ডেথ ওভার’ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে ওই ওভারে মুশফিক-মোসাদ্দেক ১৩ রান চুরি করলে জয়টাও চুরি যায় রাজশাহীর। মোস্তাফিজকে ওই ওভারে চার মেরেছেন মোসাদ্দেক আর ছক্কা হাঁকিয়েছেন মুশফিক। মিরাজ অবশ্য শেষ চেষ্টা করেছিলেন। ১২ বলে ১২ রানের সমীকরণ আটকাতে ১৯তম ওভারে তিনি নিজেই আসেন বল করতে। প্রথম চার বলে ১ রান দিয়ে মৃতপ্রায় স্বপ্নটা জাগিয়েও তুলেছিলেন মিরাজ। কিন্তু মুশফিক তখন দলকে জেতানোর মেজাজে। ছক্কা সহ মোট ৮ রান নিয়ে ম্যাচটা নামিয়ে আনেন ৬ বলে ৪ রানের সমীকরণে।

শেষ ওভারে দৃশ্যটা প্রত্যাশিতই ছিল। স্ট্রাইকে মুশফিক, বল হাতে মোস্তাফিজ। প্রথম ৩ বলে এল ১ রান। ভর করল টান টান উত্তেজনা। কিন্তু মোস্তাফিজ চতুর্থ বলটি করলেন অনেকটাই খাটো লেংথে। মোসাদ্দেক এই সুযোগে এক শটে বল সীমানাছাড়া করে জয় তুলে নিতে ভুল করেননি। মুশফিক-মোসাদ্দেকের ৫৩ বলে ৮৮ রানের দুর্দান্ত জুটিতে টানা পঞ্চম জয়ের দেখা পেল চিটাগং। ৭ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষেও উঠল মুশফিকের দল।

মুশফিক-মোসাদ্দেক জুটি বাঁধার আগে রাজশাহীর শুরুটা ছিল দারুণ। পাঁচ ওভারের মধ্যে চিটাগংয়ের তিন টপ অর্ডারকে ফিরিয়ে দিয়েছিল দলটি। মোহাম্মদ শাহজাদ, ক্যামেরন ডেলপোর্ট আর ইয়াসির আলী দাঁড়াতেই পারেননি। কিন্তু চিটাগংয়ের দুই ‘ম’-এর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে উড়ে গেল রাজশাহীর ‘হ্যাটট্রিক’ জয়ের স্বপ্ন। দুই ছক্কা ও ছয় চারে ৪৬ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। অন্য প্রান্তে ২৬ বলে ৪৩ রান করেন মোসাদ্দেক। দুই ছক্কা ও চারটি চার মারেন তিনি।