ফাইনালের কোয়ার্টার করে ফেললেন নাদাল

জয় সহজ হোক বা কঠিন, উদ্‌যাপন একই রকম আগ্রাসী। ছবি: এএফপি
জয় সহজ হোক বা কঠিন, উদ্‌যাপন একই রকম আগ্রাসী। ছবি: এএফপি
>গ্রিক তরুণ সিৎসিপাসকে পাত্তাই দিলেন না রাফায়েল নাদাল। সরাসরি সেটে হারিয়ে ক্যারিয়ারের ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে পৌঁছে গেলেন নাদাল।

নবাগত গ্রিক তরুণকে নিয়ে গত কদিন কম মাতামাতি হয়নি। রজার ফেদেরারকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে হারানো সোজা কথা নয়। সিৎসিপাসের আগ্রহ বেড়েছিল আরও একটি কারণে। শুধু ফেদেরার নয়, প্রথম দেখায় এই তরুণই নোভাক জোকোভিচকেও হারিয়েছিলেন। রাফায়েল নাদাল ভক্তদের বুকটা তাই ম্যাচের আগে একটু হলেও যে কাঁপছিল না, জোর দিয়ে বলা কঠিন। কিন্তু রাফা নীলাভ কোর্টে অলস সিংহের মতো স্রেফ থাবা মেরে শিকার করলেন যেন! স্তেপানোস সিৎসিপাস পাত্তাই পেলেন না। ৬-২, ৬-৪, ৬-০, সরাসরি সেটে জিতে ক্যারিয়ারের ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে পৌঁছে গেলেন নাদাল। গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালের কোয়ার্টার সেঞ্চুরি হয়ে গেল, ভাবা যায়!

বছরের শুরু থেকেই চোটে আক্রান্ত নাদাল। আজও তাঁকে দেখা গেল পেটের পেশিতে পট্টি বেঁধে খেলতে। তবে তা ম্যাচে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি ১৭ বারের গ্র্যান্ড স্লামজয়ী তারকার। বরং পুরো ম্যাচ শেষ করতে সময় নিয়েছেন মাত্র ১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট। ফাইনালের আগে বেশ ভালো একটা সময় বিশ্রাম পাচ্ছেন নাদাল। নাদালের জন্য অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের অপেক্ষা অনেক দিনের। ২০০৯ সালে একবারই মাত্র অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতেছেন। এরপর তিনবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছে তাঁকে।

এর মধ্যে দুটি ফাইনাল (জোকোভিচের বিপক্ষে ২০১২ ও ফেদেরারের বিপক্ষে ২০১৭) বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাইনাল হিসেবে খ্যাত। অথচ একটি মাত্র শিরোপা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে তাঁকে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতলে টেনিসে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিটি গ্র্যান্ড স্লাম অন্তত দুবার জেতার রেকর্ড গড়বেন নাদাল। পুরুষ টেনিসে যে রেকর্ড ‘ওপেন যুগে’য় আর কারও নেই।

ফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ কি নোভাক জোকোভিচই হতে যাচ্ছেন? এর উত্তর মিলবে আগামীকাল। জোকোভিচ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবেন লুকাস পউলির। নাদাল–ভক্তরা প্রার্থনা করবেন, জোকোভিচ যেন সেমিফাইনালেই কাটা পড়েন। রাস্তাটা আরও একটু পরিষ্কার হয় নাদালের।

‘এল ম্যাটাডোর’ নাদাল অবশ্য চোটকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবার বেশ জবরদোস্ত ফর্মে আছেন। এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কোনো সেট না হারিয়েই ফাইনালে উঠেছেন। ক্যারিয়ারে সপ্তমবারের মতো কোনো সেট না হেরেই গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে ওঠার কীর্তি গড়লেন।

আজ নাদালের ঝাঁজ টের পেলেন সিৎসিপাসও। দুই বছর ধরে এই তরুণ বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু রাফায়েল নাদালের পাওয়ার টেনিসের কাছে আজ সেসব যেন উড়ে গেল এক ফুৎকারে। এর আগেও দুবার মুখোমুখিতে নাদালের কাছে পাত্তা পাননি সিৎসিপাস। এবার তো হজম করলেন ‘বেগেল’-এর লজ্জা। টেনিসে কোনো সেট যদি কেউ ৬-০ ব্যবধানে জেতে তবে সেটিকে ‘বেগেল’ হিসেবে গণ্য করা হয়। নাদাল ক্যারিয়ারের ১০২তম ‘বেগেল’ পূরণ করলেন সিৎসিপাসকে দিয়ে। গ্র্যান্ড স্লামে এটি নাদালের ৩৪তম ‘বেগেল’।

এসব পরিসংখ্যান কি নাদালকে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফেবারিট বানিয়ে দিচ্ছে? হয়তো! নাদাল নিজেও মুখিয়ে আছেন। এই একটা ট্রফি যে তাঁর শোকেসে বড্ড কম কম লাগে! তা ছাড়া এবার জিতলে ফেদেরারের সঙ্গে মোট গ্র্যান্ড স্লাম ট্রফির ব্যবধান দুইয়ে কমে আসবে। ফেদেরারের আগাম বিদায় তো সেই সুযোগও। কী হচ্ছে সেই উত্তর জানতে আপাতত ২৭ জানুয়ারি, রোববারের ফাইনালের অপেক্ষা।