৯ ম্যাচেও দল দাঁড়ায়নি রাজশাহীর!

অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও নয় ম্যাচে একটা দল দাঁড় করাতে পারেনি রাজশাহী কিংস। ছবি: শামসুল হক
অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও নয় ম্যাচে একটা দল দাঁড় করাতে পারেনি রাজশাহী কিংস। ছবি: শামসুল হক
>বিপিএলে নয়টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে রাজশাহী কিংস। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা নির্দিষ্ট একটা একাদশ বা ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে মাঠে নামেনি। একেক ম্যাচে একেকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে তারা। দল দাঁড় করাতে না পারার ব্যর্থতাই রাজশাহীকে এবার বড় ভোগা ভুগিয়েছে।

এবারের বিপিএলে রাজশাহী কিংস মাঠের বাইরেও কঠিন একটা খেলায় নেমেছে। মাঠের খেলা থেকে ৮ পয়েন্ট তুলে নিতে পারলেও কঠিন সে খেলাটিতে এখনো তেমন সাফল্য পায়নি তারা। সে ‘কঠিন খেলা’টি হচ্ছে টিম কম্বিনেশন তৈরির খেলা।

রাজশাহী এমন একটা দল যারা ৯ ম্যাচ খেলে ফেললেও সঠিক টিম কম্বিনেশনটা এখনো খুঁজে পায়নি। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কোচ বিখ্যাত প্রোটিয়া অলরাউন্ডার ল্যান্স ক্লুজনারকে এই জায়গাটিতে ব্যর্থই বলা চলে। অবশ্য ক্লুজনারকে খুব একটা দোষ দিয়ে লাভ নেই। রাজশাহীর ধারাবাহিক পারফরমারই যে নেই। একেক ম্যাচে একেকজন ভালো খেলেন। দল তৈরির সময় যে দুজন ব্যাটসম্যানের ওপর বেশি ভরসা করা হয়েছিল, সেই মুমিনুল হক ও সৌম্য সরকার বিপিএলে এখন পর্যন্ত বলার মতো কিছুই করতে পারেননি।

নিজেদের শুরুর ম্যাচে রাজশাহী তিন শীর্ষ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে রেখেছিল পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজ, মুমিনুল হক ও সৌম্য সরকারকে। সেদিন কেউই ভালো করতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচেই সৌম্যকে চারে ঠেলে শীর্ষ তিনে নিজেকে উঠিয়ে আনেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তৃতীয় ম্যাচে মিরাজ উঠে আসেন ওপেনিংয়ে। তাঁর সঙ্গী ছিলেন মুমিনুল। তিন ও চারে খেলেন যথাক্রমে সৌম্য ও হাফিজ। চতুর্থ ম্যাচটাও একই ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে খেলে রাজশাহী। পঞ্চম ম্যাচে হাফিজ ফিরে যান। শীর্ষ চারে মুমিনুল, সৌম্য আর মিরাজের সঙ্গে উঠে আসেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান লরি ইভানস।

সিলেট-পর্বে গিয়ে রাজশাহী চমকে দেয় সবাইকে। একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হয় জাতীয় ক্রিকেট দলের দুই তারকা সৌম্য ও মুমিনুলকে। দল ঢোকেন অভিজ্ঞ শাহরিয়ার নাফীস ও মার্শাল আইয়ুব। মাঠে নেমেই সেদিন বাজিমাত করেন মার্শাল আইয়ুব। নাফীসও সেদিন খুব খারাপ করেননি। এঁদের সঙ্গে ছিলেন মিরাজ ও নেদারল্যান্ডসের ব্যাটসম্যান রায়ান টেন ডেসকাট। এরপর নাফীস খেলেছেন মাত্র একটি ম্যাচ। ডেসকাটকে পরের ম্যাচেই শীর্ষ চারের বাইরে নিয়ে নাফীস, মিরাজ ও মার্শাল আইয়ুবের সঙ্গে তুলে আনা হয় ইভানসকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে সে ম্যাচে এবারের বিপিএলের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেন ইভানস। পাঁচে নামা ডেসকাটের সঙ্গে তিনি গড়েন ১৪৮ রানের একটা দুর্দান্ত জুটি।

এরপরের দুটি ম্যাচে (আজকেসহ) ইভানসকে স্থির রেখে আবারও ওলট-পালট করা হয় টপ অর্ডারে। মিরাজ নিচে নেমে যান। আগের ম্যাচে সৌম্যকে ফেরানো হয়। আজ আবার সৌম্যকে বাদ দেওয়া হয়। মুমিনুল আজ খেললেও সৌম্যর ফেরার ম্যাচটিতে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আজ নবম ম্যাচে এসে টপ অর্ডারে ‘নতুন মুখ’ হিসেবে সুযোগ পান ফজলে মাহমুদ রাব্বী। তিনি মাঠে নেমেই আজ সিলেটের বিপক্ষে ফিফটি পেয়েছেন। কিন্তু রাজশাহী ব্যাটিংয়ে বাকিদের ব্যর্থতায় ৭৬ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে।

সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আর কাউকে না পেয়ে ফজলে রাব্বীকেই জিজ্ঞেস করা হলো বিষয়টি নিয়ে—এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন রাজশাহীর দলে! নবম ম্যাচে এসেও টিম কম্বিনেশন খুঁজে পেল না রাজশাহী! রাব্বীর উত্তর খুবই সহজ ও সরল, ‘টিম কম্বিনেশন দাঁড়ালে তো আর প্রতি ম্যাচেই পরিবর্তন আসত না। একটি, দুটি পরিবর্তন আসত।’ এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাখ্যা দিলেন রাব্বী, ‘আসলে আমাদের টপ অর্ডার রান পাচ্ছে না। সে কারণেই প্রতি ম্যাচেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা করতে করতে নয়টা ম্যাচ হয়ে গেছে।’

ব্যাপারটা এবারের বিপিএলে রাজশাহীকে বড় ভোগা ভুগিয়েছে, সেটা অস্বীকার করেননি রাব্বী, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম ৬ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আমাদের টপ অর্ডার রানে নেই।’
শেষ চারে খেলতে হলে রাজশাহীকে পরের তিনটি ম্যাচে জিততেই হবে। কেবল জিতলেই চলবে না, রান রেটেরও একটা হিসাব চলে আসবে। রাব্বীর কণ্ঠে একটা আকুতিই ঝরল, ‘আমাদের এই তিনটা ম্যাচ যা আছে, তাই নিয়েই চেষ্টা করতে হবে। জিততে হবে।’

আরেকটি আকুতি তাঁর থাকতে পারে। আজ সুযোগ পেয়ে যে ইনিংসটি তিনি খেলেছেন, সেটি যেন বাকি তিনটি ম্যাচেই তিনি খেলতে পারেন। ‘ধারাবাহিকতা’ নামের বিষয়টিই যে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় সমস্যা। সমস্যাটি থেকে দলটির খেলোয়াড়দের কেউই যে গোটা বিপিএলেই বেরিয়ে আসতে পারল না!