মোস্তাফিজের শেষের জাদুতে রাজশাহীর জয়

>
দলকে জিতিয়ে ফিরছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: শামসুল হক
দলকে জিতিয়ে ফিরছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: শামসুল হক

শেষের দিকে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেন মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ দুই ওভারে দিলেন মাত্র ১১। আর তাতেই চিটাগং ভাইকিংসকে ৭ রানে হারালো রাজশাহী কিংস। 

ইয়াসির আলীর ফেরাটাই কি তবে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট?

এবারের বিপিএলের আবিষ্কার এই ইয়াসির প্রতি ম্যাচেই মুগ্ধ করে যাচ্ছেন ক্রিকেটবোদ্ধাদের। রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে আজ ৩৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের দিকেই। প্রথমে ব্যাটিং করে কিংসের ৫ উইকেটে রেকর্ড ১৯৮ রানকে টপকে যেতে ইয়াসির যেমন ইনিংসটি খেলেছেন তেমনটাই দরকার ছিল। কিন্তু সমস্যাটা হলো ইয়াসিরকে সঙ্গ দিতে পারলেন না কেউই।

না, মুশফিকুর রহিম, না মোসাদ্দেক হোসেন। সিকান্দার রাজা শেষের দিকে লড়াই করেছিলেন, কিন্তু দলকে জয় এনে দিতে পারলেন না। চিটাগং ভাইকিংস ৮ উইকেট হারিয়ে থেমে গেল ১৯১-তে থেমে দেখল মাত্র ৭ রানের হার। ঢাকা, সিলেট-পর্বে দুর্দান্ত চিটাগং চট্টগ্রামের মাটিতে দেখল টানা দ্বিতীয় হার। রাজশাহীর এই জয় বিপিএল জমিয়ে দিল আরও।

১৯৯ রানের লক্ষ্যমাত্রাটা কঠিন ছিল যথেষ্টই। কিন্তু চিটাগংয়ের ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ কাজটা সহজ করে দিচ্ছিলেন। কামরুল ইসলাম রাব্বির প্রথম ওভারেই ২২ রান তুলে নেন আফগানিস্তানের এই মারকুটে ব্যাটসম্যান।' টেম্পো' যেটিকে বলে, পুরোপুরিই ঠিক করে দেন তিনি। তবে তাঁর সঙ্গী ক্যামেরন ডেলপোর্ট দলীয় ৩১ রানের মাথায় মোস্তাফিজুর রহমানের বলে উইকেটের পেছনে জনস্টন চার্লসকে ক্যাচ দিলে প্রথম ধাক্কাটা খায় চিটাগং। তবে ওয়ান ডাউনে নেমে ইয়াসির শাহজাদের ঠিক করে দেওয়া টেম্পো দুর্বল হতে দেননি। তিনিও শাহজাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলতে থাকেন। তবে এটা ঠিক শাহজাদের ব্যাটিংয়ে যে বুনো ভাবটা থাকে, ইয়াসির ঠিক তেমনই দারুণ সব শটে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের দর্শকদের আনন্দ দিতে থাকেন।

এই দুইয়ের ব্যাটিংয়ে মাত্র ৭.৪ ওভারেই ৭৯ রান তুলে ফেলে চিটাগং। তবে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ব্যক্তিগত ৪৯ রানে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন শাহজাদ। চিটাগং ১০০ পূরণ করে ১০.৩ ওভারে। শাহজাদের বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিম আশা হয়ে নেমেছিলেন। তবে তার আগে দলীয় ১৩৬ রানের মাথায় অভিজ্ঞ বঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানির বলে চালিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ইয়াসির। ৩৮ বলে ৫৮ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৭টি চার ও দুটি ছক্কা।

মুশফিকের ওপর অনেক আশা ছিল। নিজের ইনিংসের শুরুটাও করে ফেলেছিলেন। ২০ বলে ২২ রান করে বড় ইনিংসের ভিতও গড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু স্কুপ খেলতে গিয়ে রীতিমতো আত্মহত্যা করে বসেন তিনি। কামরুল ইসলামের বলে সেই স্কুপটি খেলে ধরা পড়েন মুমিনুল হকের হাতে। মুশফিক যখন ফেরেন তখন ১৪.৪ ওভারে চিটাগংয়ের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৪২। ঢাকা-পর্বে কঠিন পরিস্থিতি থেকে জিতিয়েছিলেন প্রোটিয়া অলরাউন্ডার রবি ফ্রাইলিংক। চোটে পড়ে আজ ছিলেন না তিনি। মোসাদ্দেক, সিকান্দার রাজা আর নাজিবুল্লাহ জাদরানই তখন চিটাগংয়ের ভরসা।

মোসাদ্দেক কিছুই করতে পারেননি। মিরাজের বলে উল্টো তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন রায়ান টেন ডেসকাটের হাতে। ম্যাচ ততক্ষণে হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দশা চিটাগংয়ের। কিন্তু শেষ দেখতে চেয়েছিলেন সিকান্দার রাজা। জিম্বাবুইয়ান এই ব্যাটসম্যান ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৫ বলে ২৯ রান করেও ম্যাচটা নিজেদের করতে পারেননি। এর মূল কারণ নজিবুল্লাহ জাদরানের নিষ্প্রভ ব্যাটিং আর শেষ দিকে মোস্তাফিজ আজ কামরুল ইসলামের বোলিং।

মোস্তাফিজের শেষ ২ ওভারে সিকান্দার আর জাদরান মারতেই পারেননি। মাত্র ১১ রান আসে এই দুই ওভারে। মোস্তাফিজ যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ডেথ ওভারের রাজা সেটি আজ আবারও বোঝা গেল। খুব বেশি উইকেট হয়তো এবারের বিপিএলে তিনি পাননি। কিন্তু রাজশাহীর জয়গুলিতে কিন্তু তাঁর কৃপণ বোলিংয়ের বড় ভূমিকা আছে। তিনি এ সময় তুলে নেন সিকান্দারের উইকেট। কামরুলের শেষ ওভারে আসে ৮ রান। উল্টো জাদরানের উইকেটটি তুলে নেন কামরুল।

আজ সামনে থেকেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিরাজ। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট। কামরুলের দখলে গেছে ২ উইকেট, ৪ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে। আরাফাত সানি নিয়েছেন ৩৭ রানে একটি।