মায়ের জন্য ফুটবলটা ছাড়েননি হিগুয়েইন

২০১৬ কোপা আমেরিকা ফাইনাল হারের পর লিওনেল মেসি ও হাভিয়ের মাচেরানো বিদায় বলেছিলেন আর্জেন্টিনাকে। তখন গঞ্জালো হিগুয়েইনও ভেবেছিলেন ফুটবল ছেড়ে দেবেন
মায়ের সঙ্গে হিগুয়েইন। ছবি: টুইটার
মায়ের সঙ্গে হিগুয়েইন। ছবি: টুইটার

শীতকালীন এই দলবদলের মৌসুমেই এসি মিলান ছেড়ে চেলসিতে যোগ দিয়েছেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। জুভেন্টাস থেকে ধারে বাকি মৌসুমটা কাটাবেন প্রিয় কোচ মাউরিজিও সারির অধীনে। প্রিয় শিষ্যকে কাছে পেয়ে খুশি কোচও। প্রথমবারের মতো চেলসির সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের জীবনের সবচেয়ে দুঃসময় নিয়েও কথা বলেছেন হিগুয়েইন। আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ড আরেকটু হলেই যে ফুটবল ছেড়ে দিতেন!

২০১৬ কোপা আমেরিকা ফাইনাল হারের পর লিওনেল মেসি ও হাভিয়ের মাচেরানো বিদায় বলেছিলেন আর্জেন্টিনাকে। দলটির আরও দু-একজন সিনিয়র খেলোয়াড়ও দেশের জার্সি তুলে রাখার কথা ভাবছিলেন। হিগুয়েইনও তখন ভেবেছিলেন ফুটবল ছেড়ে দেবেন। এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন অসুস্থ মায়ের জন্য। আবার ফুটবলে ফিরেও এসেছেন সেই মায়ের জন্যই।

সেবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে হারে আর্জেন্টিনা। দলটির কাছে টানা দুটি ফাইনাল হারে তাঁরা। তখন অনেকেই ‘বলির পাঁঠা’ বানিয়েছিলেন হিগুয়েইনকে। যদিও তখন হিগুয়েইনের মনের অবস্থাটা জানলে তাঁকে হয়তো এতটা সমালোচনার শিকার হতে হতো না। চেলসি তারকা বলেন, ‘দেশে ফিরে আমি ফুটবল ছাড়তে একদম প্রস্তুত ছিলাম। মাকে দেখার পর আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। ফাইনালের আগে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মনে হতো কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম। কিন্তু আমি কিছুই জানতে পারিনি। ফাইনাল হেরে যখন দেশে ফিরলাম তখন মায়ের মুখে তাকিয়ে ঠিক থাকতে পারলাম না।’

অসুস্থ মায়ের পাশে না থাকতে পারা একজন ছেলের জন্য কতটা কষ্টের, তা বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি হিগুয়েইন, ‘নিজেকে দোষী মনে হয়েছিল। একে তো ফাইনালে হার, তাঁর ওপর মায়ের এই অবস্থা! মনে হচ্ছিল পুরো পৃথিবী আমার সামনে ভেঙে পরেছে। মা ছাড়া অন্য কিছুতে মনোযোগ ছিল না আমার। মা সুস্থ হতেই নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেই মায়ের কাছে। আর কখনো ফুটবল খেলব না।’

শুধু দেশের জার্সি নয় হিগুয়েইন আসলে ফুটবলই ছাড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি তাঁর মায়ের জন্য। মায়ের কথা শুনেই তিনি ধরে রেখেছিলেন নিজের ভালোবাসা। হিগুয়েইন বলেন, ‘মা বললেন, তোমার খেলা দেখে দিন শেষে একটু হাসতে পারি। নিজের ভালোবাসা কখনো ছাড়তে হয় না। তুমি যে ফুটবলকে ভালোবেসেছ, সে ফুটবলই খেলবে। আমার জন্য সবার আগে আমার পরিবার। এরপর আমার বন্ধু, তারপর ফুটবল। মানুষের এটা বোঝা উচিত। তারা মনে করে আমি বলে লাথি দেওয়া শুরু করেছি, তাঁর মানে আমার মাথায় আর কিছুর চিন্তা নেই। মায়ের আদেশ ফেলতে পারিনি। তাঁর আদেশেই এখন পর্যন্ত খেলছি।’

চেলসিতে যোগ দিয়েই প্রতিযোগিতার মুখে পরেছেন হিগুয়েইন। অলিভিয়ের জিরু ও আলভারো মোরাতার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেই দলে টিকে থাকতে হবে তাঁকে। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডে আসা হিগুয়েইন নিশ্চয়ই চ্যালেঞ্জটি জিততে চান।