আফ্রিদিকে দেখে কষ্ট ভুলেছেন ফরহাদ

ফরহাদ রেজা। ছবি: প্রথম আলো
ফরহাদ রেজা। ছবি: প্রথম আলো
>রাজশাহীর সঙ্গে প্রথম দেখায় রংপুর যে হেরেছিল, সেটিতে দায় ছিল ফরহাদ রেজার। কাল রাজশাহীর বিপক্ষে তিনিই ম্যাচের নায়ক। ৩৪ ওয়ানডে ও ১৩ টি-টোয়েন্টি খেলা ফরহাদ কদিনের মধ্যে দেখে ফেললেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

ফরহাদ রেজা ভীষণ কষ্টই পেয়েছিলেন সেদিন। খেলাটা তাঁর শহর রাজশাহীর বিপক্ষে। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে ফরহাদের সে ম্যাচে কঠিন ছিল মোস্তাফিজুর রহমানকে হারানো।
১৩ জানুয়ারি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে শেষ ওভারে ৯ রান দরকার ছিল রংপুরের। ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে রাইলি রুশো স্ট্রাইক দেন ফরহাদকে। মোস্তাফিজের টানা পাঁচটা বল ফরহাদ ব্যাটেই লাগাতে পারেননি। ম্যাচটা রংপুর হেরে যায় ৫ রানে।

দলকে না জেতাতে পেরে ফরহাদ ভীষণ কষ্টই পেয়েছিলেন। কদিন পর সেই কষ্ট তিনি ভুলেছেন শহীদ আফ্রিদিকে দেখে। পাকিস্তানি অলরাউন্ডারও পারেননি মোস্তাফিজের বল ব্যাটে লাগাতে। ২১ জানুয়ারি মিরপুরে রাজশাহীর বিপক্ষে ২৪ বলে ৪৫ রান দরকার ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের। ব্যাটিংয়ে আফ্রিদি, আগের ওভারেই যিনি কায়েস আহমেদকে দুবার ছক্কা আর একটা চার মেরেছিলেন। অথচ সেই আফ্রিদি মোস্তাফিজের টানা পাঁচটি বল ব্যাটেই লাগাতে পারেননি। চাপে পড়ে কামরুল ইসলামের করা পরের ওভারে কুমিল্লার পাকিস্তান অলরাউন্ডার আউটই হয়ে যান।

কাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদের কথায় বোঝা গেল, অলক্ষ্যে তাঁর ক্ষতে প্রলেপই দিয়েছেন আফ্রিদি, ‘আমি রাজশাহীর ছেলে। ওই দিন অনেক কষ্ট হয়েছে, আমি (ব্যাটে বল) লাগাতে পারিনি! পরে চার-পাঁচ দিন পর ভালো লেগেছে আফ্রিদিও পাঁচটি বল লাগাতে পারেননি। তখন মনে হয়েছে আমি ঠিক আছি।’

ক্রিকেট যেমন কেড়ে নেয়, তেমন ফিরিয়েও দেয়। কাল যেমন রাজশাহীর বিপক্ষেই ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক হয়ে গেলেন ফরহাদ রেজা। এবার নিশ্চয়ই তিনি তৃপ্ত? ফরহাদ বলছেন, তৃপ্ত নন, তাঁকে যেতে হবে আরও সামনে, ‘রাজশাহীর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য কষ্টের, ওটা আমার হোম টাউন। আর প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ, চেষ্টা করি প্রতিটি ম্যাচ ভালো খেলতে। এখনো তৃপ্তি আসেনি। আরও কিছু ম্যাচ আছে। আরও যেন উন্নতি করতে পারি, সেদিকে তাকিয়ে আছি।’

বিপিএলে দারুণ বোলিং করছেন ফরহাদ। ১১ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে আছেন দুইয়ে। তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুর এবার বিদেশি তারকা ব্যাটসম্যানদের দলে ভিড়িয়ে বোলিং বিভাগটা সামলানোর ভার দিয়েছে স্থানীয়দের ওপর। বিদেশি বোলারদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই বলে একাদশে সুযোগ পেতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। যেহেতু নিয়মিত সুযোগ মিলছে, নিজেকে মেলে ধরাটাও সহজ হচ্ছে। সহাস্যে ফরহাদ তাই বলছেন, ‘বেঁচে গেছি! ওপরে চারটা (বিদেশি ব্যাটসম্যান) নিয়েছে! আমাদের দল এভাবেই তৈরি হয়েছে। এতে স্থানীয় বোলারদের সহজ হয়েছে—আমি, মাশরাফি ভাই, সুহাস (শফিউল), (নাজমুল) অপু, সোহাগ গাজী, শহিদুল যারাই খেলছি; কাজগুলো ঠিকভাবে করার চেষ্টা করছি।’

যে বিদেশি তারকা ব্যাটসম্যানদের কথা বলা হচ্ছে, ক্রিস গেইল বাদে সবাই কী দারুণ মানিয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশের কন্ডিশনে। ধারাবাহিক দুর্দান্ত খেলছেন। শুধু রংপুর কেন, এবার তো স্থানীয়দের তুলনায় বিদেশি ব্যাটসম্যানদের দাপটই বেশি। বাংলাদেশের কন্ডিশনে বিদেশি ব্যাটসম্যানদের দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ‘রেসিপি’টা কী?

ফরহাদ অবশ্য স্কিলের দিক দিয়ে কোনোভাবেই বিদেশি খেলোয়াড়দের এগিয়ে রাখতে চান না, ‘আমরা গত চার মাস বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেলে বিপিএল খেলতে এসেছি। না ভালো হিটিং, না ভালো বোলিং অনুশীলন করেছি আমরা। আমি তো মনে করি, ওদের চেয়ে আমাদের স্কিল ভালো। চার দিনের ম্যাচ খেলে এসে এভাবে ব্যাটিং করছি। শেষ দিকে এসে জুনায়েদ ভালো খেলছে। লিটন-মুশফিক-ইয়াসির আলী ভালো খেলছে। আর ওরা (বিদেশি ব্যাটসম্যানরা) তো খেপের মতো খেলে ম্যাচগুলো। সব সময়ই বিশ্বাস করি, বিগ ম্যাচে বিগ প্লেয়ার ভালো খেলবে। হয়তো সামনে ক্রিসও (গেইল) খেলবে।’