রোনালদোকে ভুলেই গেছেন রিয়াল সতীর্থরা!

রিয়ালে রোনালদোর কদর নেই আর! ছবি: টুইটার
রিয়ালে রোনালদোর কদর নেই আর! ছবি: টুইটার
>স্বপ্নের মতো নয় বছর কাটিয়ে এই মৌসুমেই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে নাম লিখিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। জুভেন্টাসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ছেলে যেন সত্যিকার অর্থেই পর হয়ে গেছে রিয়ালের। রিয়ালের ড্রেসিংরুমে এখন রোনালদোকে নিয়ে কেউ একটা শব্দও উচ্চারণ করেন না!

দুইবার করে স্প্যানিশ লিগ, কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ, উয়েফা সুপার কাপ, চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ, তিনবার ক্লাব বিশ্বকাপ—রিয়ালের হয়ে এত শত শিরোপা যে সতীর্থদের সঙ্গে জিতেছেন, তাদের জীবনেই এখন পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কোনো মূল্য নেই। ড্রেসিংরুমে কেউ ভুলেও রিয়ালের সাবেক এই তারকাকে নিয়ে টুঁ শব্দও করে না। এমনটাই দাবি করেছেন রিয়ালের বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া।

রোনালদোর রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়ার কিছুদিন পরই ইংলিশ ক্লাব চেলসি থেকে রিয়ালে নাম লিখিয়েছেন কোর্তোয়া। ফলে সরাসরি রোনালদোকে সতীর্থ হিসেবে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। রোনালদো না থাকলেও, সতীর্থ হিসেবে রোনালদো কেমন, কী কী করতেন, এসব সম্পর্কে হয়তো কোর্তোয়ার জানার আগ্রহ ছিল। কিন্তু সে আগ্রহ থাকলেও সার্জিও রামোস, মার্সেলো, লুকা মদরিচ বা গ্যারেথ বেলরা আগ্রহ পূরণ করছেন কই? রিয়ালের বর্তমান কোনো খেলোয়াড়ই রোনালদোকে নিয়ে কোনো কথা বলে না, বেলজিয়ামের পত্রিকা হেট নিউজব্লেডকে এমনটাই জানিয়েছেন এই বেলজিয়ান গোলপ্রহরী, ‘রোনালদোকে নিয়ে লকার রুমে কেউই কথা বলে না। কারওরই ওকে নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। মূলত সংবাদমাধ্যমগুলোই এ কাজটা করে (রোনালদোকে নিয়ে হাহাকার করা)। আর এটা তখনই হয় যখন আমরা কোনো ম্যাচ হেরে যাই, বা দশটা সুযোগ পেয়েও যেদিন গোল করতে পারি না, সে দিন বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয় যে আমরা হয়তো রোনালদোকে মিস করছি। ধরুন আমরা একদিন গোল করতে পারলাম না, কিন্তু ওদিকে রোনালদোর জোড়া গোলে জুভেন্টাস জিতে গেল—তখন রোনালদোকে নিয়ে হাহাকার করার কাজটা আরও সহজ হয়ে যায় সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য।’

তবে কোর্তোয়া এটাও স্বীকার করেছেন রোনালদো না থাকার কারণে গোল করতে কষ্ট হচ্ছে তাদের, ‘রোনালদোর মতো স্ট্রাইকার না থাকার অর্থ মৌসুমে ৫০টা গোল কমে যাওয়া। রোনালদোর পর যেহেতু অন্য কোনো বিশ্বমানের স্ট্রাইকারকে আনা হয়নি, সেহেতু গোল করার ক্ষেত্রে একটু কষ্ট তো হচ্ছেই। এটা আমাদের জন্য কঠিন একটা মৌসুম, বেল-বেনজেমারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। হয়তো এটা আমাদের জন্য একটা পরিবর্তনের বছর।’

রিয়াল যে রোনালদোকে আস্তে আস্তে মুছে দিতে চাচ্ছে এর নজির কিন্তু এটাই প্রথম নয়। পর্তুগিজ তারকাকে নিজেদের ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ধীরে ধীরে যেন মুছে দিচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়াল মাদ্রিদের ওয়েবসাইটের হোমপেজেই সেটির আঁচ আছে। কদিন আগে উয়েফার ঘোষিত ২০১৮ সালের বর্ষসেরা দলে রিয়ালের বর্তমান দলের চারজন খেলোয়াড় আছেন—রাফায়েল ভারান, সার্জিও রামোস, লুকা মদরিচ ও মার্সেলো। সেই চারজনকে নিয়ে উচ্ছ্বাস থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলে যে রোনালদোও আছেন, সেটি সামনেই আনছে না রিয়াল। এখন ‘পর’ হয়ে যাওয়া রোনালদোকে নিয়ে উচ্ছ্বাস না-ই থাকতে পারে, তাই বলে তাঁর নামটাও বর্ষসেরা দলের অন্য ক্লাবের খেলোয়াড়দের মতো সাদামাটাভাবে দিতে হবে! টের স্টেগেন, ফন ডাইক, কান্তে, হ্যাজার্ড, মেসি, এমবাপ্পে—সবার নামের পাশে ব্র্যাকেটে ক্লাবের নাম লেখা, সেভাবেই রোনালদোর পাশেও লেখা (জুভেন্টাস ও রিয়াল মাদ্রিদ।) আলাদা কদর সেখানে রোনালদো পাননি। রোনালদো জুভেন্টাসে যাওয়ার পরপরই ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে রোনালদোকে ‘আনফলো’ করে দেয় রিয়াল। রোনালদোও পরে ‘শোধ’ নিয়েছেন। অথচ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ‘প্রেম’ রোনালদোর এখনো ঠিকই আছে। রিয়ালের ওয়েবসাইটে ক্লাবের লেজেন্ড ও ক্লাবের ইতিহাস নামে দুটি ভাগে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো ও জিনেদিন জিদান থাকলেও রোনালদো নেই। সর্বশেষ কয়েক বছরে রিয়ালের জেতা ট্রফিগুলোর ছবির বেশির ভাগেও রোনালদো সামনের সারিতে নেই, কয়েকটিতে একেবারেই নেই!

রোনালদোকে সম্ভব সব জায়গা থেকে মুছে ফেলতে রিয়ালের এই চেষ্টা যে খুব ভেবেচিন্তেই করা হচ্ছে, সেটি ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মেইলকে বলেছে রোনালদোর এক ঘনিষ্ঠ সূত্র। এভাবে মুছে দিলেও, এক রোনালদো জন্যই তারা যেসব শিরোপা জিতেছে, সেগুলোর কথা কি রামোসরা চাইলেও অস্বীকার করতে পারবেন?