চার-ছক্কা হইহই, দেশিরা গেল কই?

চার-ছক্কা মারার শীর্ষ পাঁচে মুশফিক একাই দেশিদের প্রতিনিধি। ছবি: প্রথম আলো
চার-ছক্কা মারার শীর্ষ পাঁচে মুশফিক একাই দেশিদের প্রতিনিধি। ছবি: প্রথম আলো

মিছিল স্লোগানের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত শিরোনাম। চাইলে আরেকটু মিলিয়ে নিতে পারেন, চার-ছক্কার পসরায় দেশিরা কোথায় হারায়! প্রায় সবাই যে বিদেশি। চার-ছক্কা মারায় কেষ্ট-বিষ্টুদের মধ্যে আছেন এক মুশফিক। দেশিদের মধ্যে আশপাশে আর তেমন কেউ নেই। মুশফিক তাই যেন সেই নিঃসঙ্গ শেরপা—যে চার-ছক্কার চূড়ায় সবার আগে দেশের পতাকা রাখতে চায়!

শুধু চাইলেই তো হবে না, দলকেও টিকে থাকতে হবে। মুশফিকের চিটাগং ভাইকিংস বিদায় নিয়েছে শেষ চার থেকে। তাতে অন্তত একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল। বিপিএলে এখন যে তিনটি দল টিকে আছে তাঁদের মধ্যে ছক্কা মারায় শীর্ষ পাঁচ তো দূর অস্ত, শীর্ষ দশ এমনকি শীর্ষ পনেরোতেও কেউ নেই। অর্থাৎ বিদেশিদের জন্য ফাঁকা মাঠ। গোল (ছক্কা মারায় শীর্ষস্থান) তো আগেই হয়েছে, সামনে শুধু সংখ্যাটা বাড়বে। আর দেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের সেই হিসেব রাখতে হবে কড় গুণে। সহ্য হয়?

টি-টোয়েন্টি—শব্দটি শুনলে মাথায় এমনিতেই চার-ছক্কা খেলা করে। এই সংস্করণে বোলারদের জায়গা খুব সামান্যই। দুনিয়ার যে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগেই কথাটি চিরন্তন। অন্তত খেলাটির মেজাজ ব্যাটসম্যানদের পক্ষেই যায় বেশি। প্রশ্নটি তাই উঠতেই পারে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা টি-টোয়েন্টির এই মেজাজ ধরতে পেরেছেন কতটা?

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির প্রসঙ্গ আপাতত তোলা থাক। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হাত পাকিয়ে যেতে হয় ওই বড় মঞ্চে। বাংলাদেশে যেমন এখন বিপিএলের মৌসুম চলছে। এখান থেকে হয়তো দু-একটি নতুন মুখকে দেখা যাবে দেশের জার্সিতে। কিন্তু টি-টোয়েন্টির মেজাজ, মানে চার-ছক্কা মারায় মুনশিয়ানার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে এই বিপিএলে কোনো সম্ভাবনাময় প্রতিভা নেই। সম্ভাবনাময় প্রতিভা বাদ দিন, অভিজ্ঞরাই তো হালে পানি (পড়ুন ব্যাটে চার-ছক্কা) পাচ্ছেন না!

বিপিএলে এবার সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানো তালিকা দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তার আগে অন্যান্য দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর অবস্থা একবার ভাবুন। জাতীয় দলে জায়গা পেতে এসব দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ধুন্ধুমার ব্যাট করে থাকেন অপেক্ষাকৃত তরুণ ব্যাটসম্যানেরা। আইপিএল কিংবা বিগ ব্যাশ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু বিপিএল? আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ‘ফ্যাব ফাইভ’ ছাড়া আর কেউ যেমন সেভাবে দাঁড়াতে পারে না, তেমনি বিপিএলে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার তালিকাতেও সেই ‘ফ্যাব ফাইভ’-এর একজন। মুশফিক। আসলে বলতে হয়, হইহই রইরই তরুণেরা গেল কই?

দেশের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বিদেশিদের দাপট নতুন নয়। এবার ছক্কা মারার তালিকাতেও ভাঙেনি এই অচলায়তন। তালিকার প্রথম তিনজনই বিদেশি—নিকোলাস পুরান (২৮ ছক্কা), রাইলি রুশো (২৪ ছক্কা) ও আন্দ্রে রাসেল (২৩ ছক্কা)। এই তিনজন যথাক্রমে সিলেট সিক্সার্স, রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ডায়নামাইটসের খেলোয়াড়। ১৮ ছক্কা নিয়ে চারে মুশফিক। এরপর দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুশফিকের নিকটতম সাব্বির রহমান। সিলেট সিক্সার্সের এই হার্ড হিটার মেরেছেন ১৫ ছক্কা। শীর্ষ দশে এই দুজনই দেশি। শীর্ষ পনেরোয় আছেন আরেকজন—জুনায়েদ সিদ্দিক। ১২ ছক্কা মেরেছেন খুলনা টাইটানসের এই ব্যাটসম্যান।

আক্ষেপের বিষয় হলো, এই তিনজনের কেউ-ই এবার বিপিএলে আর ছক্কা মারার সুযোগ পাচ্ছেন না। মুশফিকের চিটাগং শেষ চার থেকে বিদায় নিয়েছে কাল। আর সিলেট ও খুলনা শেষ চারে উঠতেই পারেনি। তাহলে টিকে থাকাদের মধ্যে দেশিদের পতাকা কার হাতে? কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের তামিম ইকবাল। জুনায়েদের মতোই ১২ ছক্কা নিয়ে তামিম শীর্ষ পনেরোর বাইরে—১৬তম।

এ তো গেল বলকে বাতাসে ভাসিয়ে সীমানাছাড়া করার খেরোখাতা। মাটি কামড়ে বলকে সীমানাছাড়া করার হিসেবেও দেশিদের খুঁজতে হচ্ছে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে! মুশফিক এখানেও সেই অন্ধের ষষ্ঠী। সর্বোচ্চ ৪৯টি চার রাইলি রুশোর, মুশফিক ৩৬টি চার নিয়ে দ্বিতীয়। শীর্ষ পাঁচে এক মুশফিক ছাড়া দেশিদের মধ্যে আর কেউ নেই।

বিপিএলে এবার শীর্ষ পাঁচ ছক্কাবাজ:

  খেলোয়াড়

   দল

ম্যাচ

ইনিংস

ছক্কাসংখ্যা

নিকোলাস পুরান

সিলেট সিক্সার্স

১১

১১

২৮

রাইলি রুশো

রংপুর রাইডার্স

১৩

১২

২৪

আন্দ্রে রাসেল

ঢাকা ডায়নামাইটস

১৩

১১

২৩

মুশফিকুর রহিম

চিটাগং ভাইকিংস

১৩

১৩

১৮

এবি ডি ভিলিয়ার্স

রংপুর রাইডার্স

১৭

থিসারা পেরেরা

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস

১০

১৫