একটু পরেই সেমিফাইনালে সাকিব বনাম মাশরাফি

সাকিব ও মাশরাফি। একজন আরেকজনের হাসি মুছে দেওয়ার লড়াইয়ে নামবেন আজ। ছবি: প্রথম আলো
সাকিব ও মাশরাফি। একজন আরেকজনের হাসি মুছে দেওয়ার লড়াইয়ে নামবেন আজ। ছবি: প্রথম আলো
>লড়াইটা রংপুর রাইডার্স বনাম ঢাকা ডায়নামাইটস হলেও এর অন্য নাম মাশরাফি বনাম সাকিব। অলিখিত এই সেমিফাইনালে মিরপুরে আজ কে হাসবেন শেষ হাসি? ম্যাচ শুরু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়

মুঠোফোনে যোগাযোগ করতেই ফিসফিস করে বললেন, ‘আমি এখন সংসদে।’ তাতে নতুন মাত্রা পেল বাংলাদেশের ক্রিকেট। পরদিন বিপিএলে যাঁর দলের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, আগের দিন সংসদে বসে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে ব্যস্ত তিনি।

মাশরাফি বিন মুর্তজার কথাই যে বলা হচ্ছে, সেটি নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন এতক্ষণে। অনুশীলন, টিম মিটিং, গেম প্ল্যান ঠিক করা—ম্যাচের আগের দিন এসবই মূলত অধিনায়কদের কাজ। কিন্তু অধিনায়কদেরও অধিনায়ক মাশরাফি যে জীবনের দৌড়েও আর সবার চেয়ে একধাপ এগিয়ে! তাঁর মস্তিষ্কের এক পাশে খেলা, তো আরেক পাশে রাষ্ট্র।

মাশরাফির দল রংপুর রাইডার্সের অবশ্য কাল অনুশীলনই ছিল না। তবে মিরপুরের একাডেমি মাঠে ঢাকা ডায়নামাইটসের ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল, সাকিবও ছিলেন তাতে। ম্যাচের আগের দিনের বাকি রুটিন কাজগুলোও নিশ্চয়ই করেছেন দুই অধিনায়ক। শুধু নড়াইল-২ আসনের এমপির সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়াটাই ব্যতিক্রম।
হঠাৎ মাশরাফি-সাকিবকে নিয়ে এত কথার কারণ, আজ তাঁরা আরও একবার মুখোমুখি সম্মুখ লড়াইয়ে। এই বিপিএলেই এর আগে দুবার এসেছে এমন উপলক্ষ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম সাক্ষাতে ম্যাচ গড়িয়েছিল শেষ ওভার পর্যন্ত। তুমুল উত্তেজনার পর শেষ বলে নিশ্চিত হয় ঢাকার ২ রানের জয়। চট্টগ্রামের ফিরতি ম্যাচে সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নেয় রংপুর। ঢাকার ১৮৬ রানের জবাবে অ্যালেক্স হেলসের অপরাজিত ৮৫ আর এবি ডি ভিলিয়ার্সের অপরাজিত শতরান। ১০ বল বাকি থাকতেই ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জিতে যায় রংপুর।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ যখন আবারও ঢাকা-রংপুর মুখোমুখি, ‘মাশরাফি না সাকিব’ প্রশ্নটা আসেই। বিশেষ করে এই ম্যাচ যখন অস্তিত্ব রক্ষার। বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ। যে জিতবে, ৮ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে তারাই খেলবে ফাইনাল। পরাজিত দল ব্যাগ গুছিয়ে ফিরে যাবে শীর্ষ চারে ওঠার সান্ত্বনা নিয়ে। মজার ব্যাপার, গত বিপিএলেও ঠিক এ রকমই এক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল মাশরাফির রংপুর আর সাকিবের ঢাকা। সেই ম্যাচের গুরুত্ব ছিল আরও বেশি। টুর্নামেন্টের ফাইনালই যে ছিল সেটি! পঞ্চম বিপিএলে ট্রফি উঁচিয়ে শেষ হাসি সেবার মাশরাফিই হেসেছেন।

গতবারের মতো এবারও রংপুর এগিয়েছে ধুঁকতে ধুঁকতে। প্রথম ছয় ম্যাচের চারটিতেই হার। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা এরপর এমন দুর্দান্তভাবে ফিরে এল যে প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কাছে হারার আগে জিতেছে টানা ছয় ম্যাচ। অন্যদিকে প্রথম চার ম্যাচ টানা জেতার পর হার-জিতের মধ্য দিয়েই এগিয়েছে সাকিবের ঢাকা। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে নিশ্চিত করেছে শেষ চারে ওঠা। এলিমিনেটর ম্যাচে পুরো টুর্নামেন্টেই ভালো খেলা চিটাগং ভাইকিংসকে বিদায় করে ধরে রাখে ফাইনালের স্বপ্ন।

হেলস, ডি ভিলিয়ার্স চলে গেলেও রাইলি রুশো, বেনি হাওয়েলদের ব্যাট নির্ভরতা দিচ্ছে রংপুরকে। ওপেনিংয়ে ক্রিস গেইল তো আছেনই। তবে টি-টোয়েন্টিতে নিজের ভয়ংকর চেহারা নিয়ে এখনো আবির্ভূত হতে পারেননি গেইল। মাশরাফির জন্য এটা যেমন দুর্ভাবনা, তেমনি আশাও। কে জানে, হয়তো অস্তিত্ব রক্ষার ম্যাচে প্রতিপক্ষকে লন্ডভন্ড করতেই অপেক্ষায় আছে গেইল-ঝড়!

সুনীল নারাইন, কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল—ঢাকা ডায়নামাইটসের নির্ভরতা বেশি ছিল এই ক্যারিবীয় ত্রয়ীর ওপর। যদিও একক শক্তিতে এখন পর্যন্ত কেউই সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। বরং উপুল থারাঙ্গার অন্তর্ভুক্তিতেই যেন বেশি উজ্জ্বল দলটা। কুমিল্লার বিপক্ষে শুরুটা ‘ডাক’ মেরে হলেও খুলনা টাইটানস এবং চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে ঢাকার ইনিংসে অক্সিজেন জুগিয়েছেন এই শ্রীলঙ্কান ওপেনারই।

কিন্তু লড়াইয়ের শিরোনাম যখন হয়ে যায় ‘মাশরাফি বনাম সাকিব’, সে লড়াইয়ের সার্থকতা তাঁদের কারও নায়ক হয়ে ওঠাতেই বেশি। এদিক দিয়ে এবার সাকিবের তুলনায় মাশরাফিই এগিয়ে এখন পর্যন্ত। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স হিসাব করলে অধিনায়ক সাকিবের কাছে অনেক পাওনা জমা ঢাকার। আজ কি সেই পাওনা মেটাবেন সাকিব? নাকি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ‘নেতা’ মাশরাফি আবারও হাসবেন শেষ হাসি?