বোপারায় পার পাবে মাশরাফির রংপুর?

রুবেলের বলে আরেকটি উইকেটের পতন। অধিনায়ক সাকিবের আনন্দ দেখে কে! ছবি: শামসুল হক
রুবেলের বলে আরেকটি উইকেটের পতন। অধিনায়ক সাকিবের আনন্দ দেখে কে! ছবি: শামসুল হক
>বিপিএলে আজ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ১৪২ রানে অলআউট রংপুর রাইডার্স। জবাবে মাশরাফির প্রথম শিকারের পরও ৩ ওভারে ঢাকার স্কোর ২৯/১

প্রত্যাশার পারদ উঁচুতে উঠেছিল। প্রস্তুত ছিল মঞ্চও। কিন্তু যাঁকে ঘিরে এত প্রত্যাশা তিনি খোঁচা মেরে চলে গেলেন!

খোঁচা মারার আগে অবশ্য আশাটা ভালোই জেগে উঠেছিল। আজ নাকি হবে ক্রিস গেইলের দিন! ঘুম ভাঙতে তাঁর! যেহেতু লড়াইটা ফাইনালে ওঠার, প্রতিপক্ষও সেই ঢাকা ডায়নামাইটস। গতবারের ফাইনাল স্মরণে রেখে এই ম্যাচে সবাই গেইল-ঝড় দেখার প্রত্যাশায় ছিলেন। তা ঝড় উঠেছিল বৈকি। কিন্তু সেই ঝড় আসলে ‘টর্নেডো’—কিছুক্ষণ থেকেই মিলিয়ে গেল।

তৃতীয় ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে দুই ছক্কায় ঝড়ের আগমণী বার্তা দিয়েছিলেন গেইল। তখন রংপুরের রানের চাকা যেন ‘ফর্মুলা ওয়ান’-এর গতিতে ছুটছে। ওই ওভারে এসেছে ১৮, পরের ওভারেও ১৮ এল নাদিফ চৌধুরীর টানা তিন ছক্কায়। কিন্তু এরপর শুভাগত ও রুবেল হোসেন মিলে ঘুরিয়ে দিলেন পাশার দান। এরপর ইনিংস গড়িয়ে চলার সঙ্গে রংপুরের রানের চাকাও প্রায় ‘লোকাল বাস’-এর মতো গড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত পুরো ২ বল বাকি থাকতে অলআউট রংপুর ১৪২ রান তুলেছে। এই উইকেটে ১৪৩-এর লক্ষ্য ছোঁয়া কঠিন হওয়ার কথা নয় ঢাকার। তবে খেলাটা ক্রিকেট বলেই আগে কিছু বলে দেওয়া বোকামি।

এই ম্যাচ ঘিরে গেইলকে নিয়েই আলোচনা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে রংপুর যে শেষ পর্যন্ত ১৪০ পেরোতে পারল, তাতে বড় অবদান রবি বোপারার। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৪৩ বলে ৪৯ রান করেছেন। ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান যখন ব্যাট করতে নামেন, ৫ ওভারের মধ্যেই ৪২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রংপুর তখন ছন্দহীন। বোপারা মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে ৬৪ রানের জুটি গড়ে ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন রংপুরকে। কিন্তু ১৪-১৬, এই তিন ওভারে তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ম্যাচের লাগাম আবার মুঠোয় পুরে নেয় ঢাকা।

সেই পতনের মিছিলেই ১২৮ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলা রংপুর শেষ জুটিতে আরও ২৪ রান যোগ করেছে বোপারার সৌজন্যে। ৩ ওভারে মাত্র ৯ রান দেওয়া রুবেলের করা শেষ ওভারের তিন বলেই ১৪ রান তোলার পর চতুর্থ বলে বোপারা সীমানাপ্রান্তে ক্যাচ হয়ে না ফিরলে স্কোরটা আরও চ্যালেঞ্জিং হতেই পারত।

ঢাকাকে ফাইনালে তোলার লড়াইয়ে ভালোমতো এগিয়ে রাখার মূল কৃতিত্ব রুবেলের। খরচান্ত শেষ ওভারটির পরও ২৩ রানে ৪ উইকেট এই পেসারের নামের পাশে। ধুঁকতে থাকা গেইলকে শুরুতে ফিরিয়েছেন। পরের বলেই এবারের বিপিএলের সেরা ব্যাটসম্যান রাইলি রুশোকে গোল্ডেন ডাকের ডাক শুনিয়েছেন। পাওয়ার প্লেতে তাই পাওয়ার খাটাতে পারেনি রংপুর। উইকেট না পেলেও সুনীল নারাইনের কৃপণ বোলিংকেও (৪ ওভারে ১৮ রান) বাহবা দেবে ঢাকা। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকা ফাইনালে গেলে নায়কের কৃতিত্ব পাবেন রুবেলই।

রুবেল শুরুটা করেছিলেন গেইলকে দিয়ে। ঝোড়ো শুরুতে বিনা উইকেটে ৪২ তুলে ফেরা রংপুর অবশ্য প্রথম ধাক্কা খেয়েছে শুভাগত হোমের কাছে। গেইলকে দর্শকের ভূমিকায় রেখে রানের চাকা জোরসে ঘোরাচ্ছিলেন নাদিফ। ১২ বলে ২৭ নাদিফ ফিরেছেন শুভাগতর শিকার হয়ে। পরের ওভারেই পরপর দুই বলে রংপুরের শুরুটা গুঁড়িয়ে দেন রুবেল হোসেন। গেইল-রুশোকে ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে।

শুরুর এই ধাক্কা সামলে নিয়েছিল রংপুর। ৯ ওভার স্থায়ী সেই চতুর্থ উইকেটের জুটিটার কারণে। তবে রানের গতি কমছিলই। ১০ ওভার শেষে ঢাকার স্কোর ৩ উইকেটে ৭৩। রানের গতি বাড়াতেই হবে, ড্রেসিং রুম থেকে এই বার্তা গিয়েছিল মাঝমাঠে। ১২তম ওভারে সাকিবকে টানা দুই ছক্কা হাঁকান মিঠুন। তবে ৩৮ রান করা মিঠুনকে ১৪তম ওভারে ফিরিয়ে সাকিবকে স্বস্তি এনে দেন ঢাকার পেসার অনিক। পরের ওভারে সাকিব এসে হাওয়েলকে (৩) ফেরালে রংপুরের ব্যাটিং অর্ডারের লেজ (লোয়ার অর্ডার) বেরিয়ে যায়। অনিক মাশরাফিকে রাসেলের ক্যাচ বানালে রংপুরের রানের গতি বাড়ানোর পরিকল্পনা বৃথা যায়।

তিন ওভারে তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে রংপুর তখন ৬ উইকেটে ১১০। অনিকের সৌজন্যে মাশরাফিকে এবারের বিপিএলের তৃতীয় ‘ডাক’ উপহার পেলেন। বিপিএলে এবার সর্বোচ্চ ‘ডাক’ মারা তামিম ইকবাল ও এনামুল হকের সঙ্গে নিজের নামও জড়ালেন মাশরাফি।

শেষের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে চালিয়ে খেলে বোপারা শেষ পর্যন্ত আরও ৩২ রান যোগ করালেন ২৫ বলে। তাতেই লক্ষ্যটা ১৪৩ হলো। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ‘রহস্যময়’ উইকেট বিবেচনায় এই মাঝারি মানের স্কোরও রংপুরের ফাইনালে উঠতে হতে পারে পর্যাপ্ত। তবে পোলার্ড, রাসেল, সাকিবদের নিয়ে ঢাকারও রয়েছে তারকাখচিত ব্যাটিং লাইনআপ। তাঁরাও নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলবে না।