'স্কুলে পড়েছিলাম বাংলাদেশ গরিব, কিন্তু তা নয়'

গোল করার আনন্দে জার্সি খুলে ফেলেছেন কেভিন বেলফোর্ট। ফাইল ছবি
গোল করার আনন্দে জার্সি খুলে ফেলেছেন কেভিন বেলফোর্ট। ফাইল ছবি
>

বাংলাদেশ গরিব, এই ধারণা নিয়েই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন হাইতি জাতীয় দলের স্ট্রাইকার কেভিন বেলফোর্ট। কিন্তু বাংলাদেশে বেলফোর্টের ধারণা বদলে গিয়েছে।

‘জবাবটা খোলামেলা দিলে কিছু মনে করবেন না তো?’

ক্লাবের বিছানায় আধ শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলেন কেভিন বেলফোর্ট। প্রতিবেদককে ছুড়ে দিলেন এই পাল্টা প্রশ্ন। কিছুটা ভড়কে যেতেই হলো। কঠিন কিছু তো জানতে চাওয়া হয়নি। হাইতিয়ান স্ট্রাইকারের কাছে প্রশ্ন ছিল, ঢাকায় আসার আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর কি ধারণা ছিল?

জবাবে ওই প্রশ্ন দিয়ে প্রতিবেদকের মনের কথা জেনে নেন বেলফোর্ট। এরপর বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর ধারণা জানালেন গালভরা প্রশংসায়, ‘আসলে স্কুলে স্যারেরা গরিব দেশের উদাহরণ দিতে গিয়ে ইথিওপিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের নামও বলতেন। সেই থেকে আমার ধারণা ছিল বাংলাদেশও আমাদের মতো গরিব একটি দেশ। কিন্তু বাংলাদেশে এসে আমার ধারণা পুরো পাল্টে গিয়েছে। এই দেশ কোনো ভাবেই গরিব হতে পারে না।’

বেলফোর্টের মা-বাবা সহ বান্ধবী ও একমাত্র ছেলে থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে হাইতিয়ান হলেও নিয়মিত যাতায়াত আছে মার্কিন মুলুকে। প্রায় চার মাস হতে চলল এসেছেন ঢাকায়। মূলত তাঁকে ঢাকায় এনেছিল নবাগত বসুন্ধরা কিংস। কিন্তু দলটির স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনের মন কাড়তে না পারায় ছেড়ে দেওয়া হয় বেলফোর্টকে। এই সুযোগে হাইতিয়ান স্ট্রাইকারকে দলে ভেড়ায় আবাহনী লিমিটেড। ধানমন্ডিতে এখন তিনি বেশ সুখেই আছেন। ইতমধ্যেই জিতেছেন ফেডারেশন কাপের শিরোপা। ফাইনালে সেই বসুন্ধরার বিপক্ষেই ৩-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে গোল করে অলক্ষ্যে নিয়েছেন প্রতিশোধও।

বুধবার দুপুরে আবাহনী ক্লাবে গিয়ে বেলফোর্টকে পাওয়া গেল মশারি টানিয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায়। ভর দুপুরে মশারি? হাতের ইশারা দিয়ে বুঝালেন মশার উৎপাত চরমে। মশার সমস্যা না থাকলে বাংলাদেশে দিনগুলো বুঝি আরও ভালো কাটত সনি নর্দের এই বন্ধুর।

বেলফোর্টের কথা বলতে গেলেই উঠে আসবে সনি নর্দে প্রসঙ্গ। দেশের ফুটবলপ্রেমীদের সহজেই ভুলে যাওয়ার কথা নয় হাইতিয়ান প্লেমেকার সনিকে। শেখ রাসেল ও শেখ জামালের জার্সিতে দুই মৌসুম খেলেছিলেন ঢাকায়। দুর্দান্ত গতি ও ড্রিবলিংয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সবাইকে। কিন্তু এই বেশি ভালো খেলাটাই ‘কাল’ হয়ে দাঁড়ায়! ২০১৪ সালে শেখ জামাল থেকে পাড়ি জমালেন ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহনবাগানে।

কেভিন বেলফোর্ট। ফাইল ছবি
কেভিন বেলফোর্ট। ফাইল ছবি

সেই সনির আবার বাংলাদেশে পা রাখার কথা ছিল। বন্ধুর সঙ্গে একই ক্লাব বসুন্ধরায় খেলবেন বলে আগেভাগেই বেলফোর্টকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ঢাকায়। কিন্তু পরে সনি থেকে যান মোহনবাগানেই। ঢাকায় না আসলেও বন্ধুর কাছে বাংলাদেশের ফুটবলের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন, ওদিকে কলকাতাতে তাঁর সময়টা ভালো যাচ্ছে না বলেও বন্ধুকে জানিয়েছেন হাইতিয়ান তারকা।

ভারতে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন বেলফোর্ট। প্রতিবেশী দুই দেশের ফুটবলের পার্থক্যটা তাঁর ভালোই জানা, ‘বাংলাদেশের ফুটবলে পেশাদারি নেই বললেই চলে। মানুষের আগ্রহ খুবই কম। কেরালায় যখন ছিলাম, সমর্থকদের জন্য রাস্তায় বের হতে পারতাম না। সবাই ছবি তুলতে চাইত। অথচ এখানে ফুটবলের কোনো আমেজই নেই।’

আমেজহীন ও তুলনামূলক কম প্রতিদ্বন্দ্বীতামুলক বাংলাদেশের ফুটবল। এখানে খেলে জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন তো বেলফোর্ট? ২০১০ সালে জাতীয় দলে অভিষিক্ত বেলফোর্ট ২০১৭-তে খেলেছিলেন শেষ ম্যাচ। শতবর্ষী কোপা আমেরিকা কাপে খেলা এই স্ট্রাইকারের ৪০ ম্যাচে গোলসংখ্যা ১৪টি। কিন্তু নতুন কোচের অধীনে জাতীয় দলে ফেরাটা কষ্ট হবে বলেই মনে করেন বেলফোর্ট।