ভারতের কাছে আর অপমানিত হতে চায় না পাকিস্তান

আইসিসি বা এসিসির টুর্নামেন্ট ছাড়া ভারত-পাকিস্তান এখন আর মুখোমুখি হয় না। ফাইল ছবি
আইসিসি বা এসিসির টুর্নামেন্ট ছাড়া ভারত-পাকিস্তান এখন আর মুখোমুখি হয় না। ফাইল ছবি

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কী করেনি! চেয়ে চেয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মধ্যে একটা অপমান আছে। তার চেয়ে বেশি অপমান প্রত্যাখ্যাত হবে জেনেও আবারও একই জিনিস চেয়ে বসা। এটারই বিরতি টেনে দিচ্ছে পিসিবি। দেশের সম্মানের কথা ভেবে ভারতকে আর দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলার জন্য আহ্বান জানানো হবে না বলে জানিয়েছে পিসিবি।

পিসিবির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিম খান দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আজ করাচিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, পিসিবি এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় যেন ভারতের দিক থেকেই আগ্রহ জাগে। ভারতই ডাক দেয় পাকিস্তানকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে। ২০০৭ সালের পর এই দুই দল কোনো টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়নি। প্রায় এক যুগ হয়ে গেল ক্রিকেটের আকর্ষক দুই দল টেস্টে মুখোমুখি হয় না! ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল ভারত-পাকিস্তান।

স্বাভাবিকভাবেই আজ সাংবাদিকদের অন্যতম প্রশ্ন ছিল, ভারত-পাকিস্তান লড়াই শুরু করার ব্যাপারে ওয়াসিম কী করবেন? জবাবে নতুন এমডি বলেছেন, ‘এটা অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। খুব শিগগির এর কোনো সমাধান দেখছি না। আর ভারতে তো সামনে নির্বাচন, নিকট ভবিষ্যতে তাই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি। পিসিবির সভাপতি এহসান মানি ভারতকে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছেন, যেন স্থবিরতা কেটে যায়। তবে আমাদের সবার আগে দেশের সম্মানের কথা ভাবতে হবে।’

এই সম্মানের দিকটা ভেবেই পিসিবি ভারতকে আর খেলার আমন্ত্রণ জানাবে না বলে আভাস দিয়েছেন ওয়াসিম, ‘আমরা ওদের অনুরোধ করেই যাচ্ছি, কিন্তু এখন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যেন উল্টো ওরাই আমাদের অনুরোধ জানায় খেলার জন্য। আমাদের এটাই করতে হবে। হ্যাঁ, ওদের বিপক্ষে খেলছি না, এটা তো হতাশার। তবে জীবন থেমে থাকে না, পৃথিবীও এগিয়ে যায়। আমাদেরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ভারতের জন্য আজীবন অপেক্ষা তো করতে পারি না। আমাদের লক্ষ্য এখন পাকিস্তানের ক্রিকেটের উন্নয়ন এবং আমাদের দল ও খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাফল্য।’

২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অন্তত সাতটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলার ব্যাপারে দুই বোর্ডের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছিল। এই সম্ভাব্য সিরিজ মাথায় রেখে টিভি সম্প্রচারকেরা পিসিবির প্রচার স্বত্ব কেনে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান লড়াই থেমে থাকায় প্রত্যাশিত আয় হচ্ছে না বলে দাবি সম্প্রচারকদের। এর জন্য পিসিবির ওপর বড় অঙ্কের আর্থিক চাপ আছে। মরিয়া পিসিবি শেষ পর্যন্ত আইসিসির কাছে লিখিত নালিশই করেছিল গত বছরের নভেম্বরে। কিন্তু আইসিসি রায় দেয়, প্রতিশ্রুত সিরিজগুলো খেলা বিসিসিআইয়ের জন্য নৈতিক বাধ্যবাধকতা, আইনগত নয়।

আইসিসিরই সাবেক সভাপতি এহসান মানি এখন পিসিবির সভাপতি। মানিও বলেছেন, ‌‘ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে আমাদের দারুণ সম্পর্ক। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধও আছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে খেলার জন্য ওদের আর হাতে-পায়ে ধরব না। আমরা যদি পাকিস্তানের ক্রিকেটকে সেরা তিন দলের মধ্যে নিতে পারি, ওরা নিজেরাই আসবে আমাদের সঙ্গে খেলতে। আসলে আমি নিজেও ভারতীয় সাংবাদিক আর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রচুর বার্তা পাই, যেখানে ওরা আমাদের বিপক্ষে খেলার আগ্রহের কথা বলে। কিন্তু রাজনীতি এর মধ্যে ঢুকে পড়েছে, আর আমি মনে করি খেলা থেকে রাজনীতির দূরেই থাকা উচিত। কিন্তু এই অঞ্চলে এমনটা হয়েই থাকে, বিশেষ করে ভারতে।’