বাংলাদেশের কাছে হারা উইন্ডিজ যেভাবে হারাচ্ছে ইংল্যান্ডকে

ওয়েস্ট ইন্ডিজের নবজাগরণে সন্তুষ্ট কিংবদন্তি পেসার ইয়ান বিশপ। ছবি: এএফপি
ওয়েস্ট ইন্ডিজের নবজাগরণে সন্তুষ্ট কিংবদন্তি পেসার ইয়ান বিশপ। ছবি: এএফপি
>ঐতিহাসিক ধবলধোলাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর তৃতীয় টেস্টটাও জিততে চায় আত্মবিশ্বাসী জেসন হোল্ডার বাহিনী। বাংলাদেশের কাছে টেস্ট সিরিজ হারা উইন্ডিজের ভোল দুই মাসের মধ্যে কীভাবে পালটে গেল? বের করার চেষ্টা করেছেন দলের সাবেক কিংবদন্তি পেসার ইয়ান বিশপ।

মাত্র দেড় মাস আগেই বাংলাদেশে এসে টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজে হেরে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আইসিসি টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে আট নম্বরে থাকা সেই উইন্ডিজই এখন নিজেদের মাটিতে র‍্যাঙ্কিংয়ের তৃতীয় দল ইংল্যান্ডকে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছে। দেড় মাসের ব্যবধানে দলের এমন পরিবর্তন আনন্দ দিচ্ছে উইন্ডিজ কিংবদন্তি ইয়ান বিশপকে। উইন্ডিজ ক্রিকেটের এই বদলের পেছনে তিনি তিন কারণের কথা উল্লেখ করেছেন।

তিন টেস্টের সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে রীতিমতো দাপট দেখিয়ে জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে হোল্ডার-হোপ-হেটমায়াররা। শেষ টেস্টটায় উইন্ডিজ জিতলেই ঐতিহাসিক ‘ব্ল্যাকওয়াশ’ হয়ে যাবে ইংল্যান্ড। প্রথম টেস্টে ৩৮১ রানের বিশাল ব্যবধানে জেতা উইন্ডিজ দ্বিতীয় টেস্টটাও জিতেছে ১০ উইকেটে। উইন্ডিজ ক্রিকেটের এই নবজাগরণের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের, এমনটাই মানছেন বিশপ, ‘খেলোয়াড়দের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মিশে গিয়ে তাদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার ক্ষেত্রে হোল্ডারের কোনো জুড়ি নেই। ভুলে যাবেন না, ক্যারিবিয়ানে খেলতে আসার আগে ইংলিশরা সফলভাবে লঙ্কানদের তাদের মাটিতেই হারিয়ে এসেছে। নিজেদের মাটিতে হারিয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের শীর্ষ দল ভারতকেও। উল্টোদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে খুব সফল বছর কাটিয়েছে তাও কিন্তু নয়। বাংলাদেশ আর ভারতের কাছে হেরেছে। আর এর পেছনে কৃতিত্ব হোল্ডারের। অ্যান্টিগায় দ্বিতীয় টেস্টের পরে ওর সঙ্গে কিছু কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ওর কথাবার্তায় আমি আত্মবিশ্বাস দেখেছি, দেখেছি আত্মনিবেদন। ব্রায়ান লারা ও ডেসমন্স হেইন্সের মতো কিংবদন্তিদের কাছ থেকে সেরা হওয়ার রেসিপিটা জেনে দলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে, হোল্ডারের কথায় আমি এমন উদ্যম দেখেছি। ওর নিজের পারফরম্যান্সের মানও বেড়েছে এই সময়ে।’

উইন্ডিজ বোর্ডের সভাপতির দেওয়া চ্যালেঞ্জকে মাথায় নিয়ে নিজের পারফরম্যান্সের মানও বাড়িয়েছেন হোল্ডার, এমনটাই বলেছেন বিশপ, ‘২০১৬ সালে আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের আগে বোর্ড সভাপতি ওকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল, অধিনায়ক ও খেলোয়াড় হিসেবে ও কতটুকু যোগ্য, সেটা প্রমাণ করার জন্য। সেবারের আগে ১৯ টেস্টে ২৬ উইকেট নেওয়া হোল্ডার পরের ১৮ টেস্টে ২০.৩৫ গড়ে ৬৭ উইকেট নিয়েছে। এই সিরিজের প্রথম টেস্টে ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমেও অসাধারণ এক ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। বলা বাহুল্য, দলটাকে একদম সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছে হোল্ডার।’

দলের পেসাররা নিজেদের মান বাড়ানোর জন্য নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন, আর এটাকেও টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উন্নতির একটা বড় কারণ বলে মানছেন বিশপ, ‘দুই বছর আগেও আমাদের পেসারদের যে মান ছিল, এখন তাদের মান সে তুলনায় অনেক ভালো। ২০১৬ সালে সেই সফরের আগে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ৩৮.৭৪ গড়ে ৩৯ উইকেট নিয়েছিল। সে সফরের পরে ২৫.৫১ গড়ে গ্যাব্রিয়েল আরও ৮৬ উইকেট নিয়েছে। কেমার রোচও এখন আগের চেয়ে অনেক ভয়ংকর। আগে যেখানে উইকেট নেওয়ার জন্য শুধু গতির ওপর নির্ভর করত রোচ, এখন সেখানে গতি কমিয়ে নিজের বোলিংয়ে বেশ বৈচিত্র্য এনেছে সে। মান বেড়েছে আলজারি জোসেফেরও। ভেবে দেখুন, দুই বছর আগের সে সময় থেকে এখন উইন্ডিজের এসব পেসারদের উচ্চতা কিন্তু একটুও বাড়েনি, যদি কিছু বেড়ে থাকে, সেটা হলো তাদের মান।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই উন্নতির পেছনে নির্বাচকদেরও বাহবা দিয়েছেন বিশপ, ‘নির্বাচকেরা খেলোয়াড়দের প্রতি আস্থা রাখছে, ফলে ধীরে হলেও তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের মান বাড়ছে। জেসন হোল্ডার যখন উইন্ডিজের অধিনায়ক হলো, তখন থেকে মাত্র ২৭ জন খেলোয়াড়কেই ঘুরেফিরে টেস্ট খেলাচ্ছে বোর্ড। দলের মূল অংশের দিকে নজর দিন— হোল্ডার, ক্রেইগ ব্রাফেট, রস্টন চেজ, শাই হোপ, শেন ডাওরিচ - সবারই মোটামুটি একই বয়স। একই বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে এসেছে তারা। একে অপরের সঙ্গে খেলে খেলে তারা অভ্যস্ত। সেই ধারাবাহিকতাটা বোর্ড নষ্ট করতে চায়নি। তাই মাঝে মাঝে হোপ, ডাওরিচ ও চেজ রা রানখরার মধ্য দিয়ে গেলেও দল থেকে হুট করে বাদ দেওয়া হয় না তাদের। অনূর্ধ্ব-১৯ স্কোয়াড থেকেও দ্রুত প্রতিভা নির্বাচন করে দলে জাতীয় দলে নিয়ে আসার কৃতিত্বও বোর্ডের, যে কারণে জোসেফ ও শিমরন হেটমায়ারের মতো তরুণকে দলে পেয়েছি আমরা।’

ঐতিহাসিক ‘ব্ল্যাকওয়াশ’ এর লজ্জা এড়াতে গত শনিবার সেইন্ট লুসিয়ায় তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছে ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ২৭৭ করে মার্ক উড আর মঈন আলীর বোলিং নৈপুণ্যে ১৫৪ রানে উইন্ডিজকে আটকে দিয়েছে তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষে ১৯ রান করেছে ইংলিশরা।