যা আছে তা নিয়েই লড়বেন মাশরাফি

সাবেক ক্রিকেটার আল শাহরিয়ার অনেক বছর ধরেই সপরিবার নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী। বাংলাদেশ দল দেশটিতে গেলেই ছুটে আসেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করতে। এবার তো দলের ম্যানেজার হিসেবে তাঁর একসময়ের সতীর্থ খালেদ মাসুদ নিউজিল্যান্ড গেছেন। কাল মাশরাফি–তামিমরা নেপিয়ারে পৌঁছানোর পরই পেয়ে গেলেন তাঁদের অগ্রজ ক্রিকেটারকে।  ছবি: ফেসবুক
সাবেক ক্রিকেটার আল শাহরিয়ার অনেক বছর ধরেই সপরিবার নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী। বাংলাদেশ দল দেশটিতে গেলেই ছুটে আসেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করতে। এবার তো দলের ম্যানেজার হিসেবে তাঁর একসময়ের সতীর্থ খালেদ মাসুদ নিউজিল্যান্ড গেছেন। কাল মাশরাফি–তামিমরা নেপিয়ারে পৌঁছানোর পরই পেয়ে গেলেন তাঁদের অগ্রজ ক্রিকেটারকে। ছবি: ফেসবুক
>

প্রস্তুতিতে ঘাটতি, আঙুলের চোট সফর থেকে ছিটকে দিয়েছে সাকিবকে। তবে যা নেই, তা নিয়ে না ভেবে যা আছে তা-ই নিয়ে লড়তে চান মাশরাফি।

নিউজিল্যান্ড সফর মানেই একটা বিভীষিকা। নিউজিল্যান্ড সফর মানেই যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়ে ফিরে আসা। নিউজিল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১০টি ওয়ানডে খেলেও জয় নেই বাংলাদেশের। সাতটি টেস্ট খেলে নেই একটি ড্রও। বেশির ভাগ হারেই লজ্জায় অবনত হয়েছে মস্তক।

সেই নিউজিল্যান্ডে এবার চ্যালেঞ্জটা আরও বড়। তিন ওয়ানডে ও তিন টেস্টের সিরিজ শুরু হওয়ার আগেই একটার পর একটা সমস্যা ডিঙাতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। গত পরশু লিংকনে নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে ৫০ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে দল। কিন্তু বিপিএল শেষ করে যাওয়ায় ম্যাচের আগে ওয়ানডে দলের সব খেলোয়াড় নিউজিল্যান্ডে পৌঁছাতেই পারেননি। একাদশ পূরণ করা হয়েছে টেস্ট দলের মুমিনুল হককে দলে নিয়ে।

বিপিএল ফাইনালে ঘটল আরও বড় দুর্ঘটনা। আঙুলের চোট সাকিব আল হাসানকে ছিটকে দেয় ওয়ানডে সিরিজ থেকে। তিন সপ্তাহ তো বটেই, সাকিবকে মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে পাঁচ সপ্তাহও। টেস্ট সিরিজেও তাই অনিশ্চিত বলা যায় টেস্ট অধিনায়ককে।

কাল তামিম ইকবাল, রুবেল হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছানোর পরপরই মুঠোফোনে পাওয়া গেল ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। তিনিও মানছেন, এবারের নিউজিল্যান্ড সফর অন্য সফরগুলোর চেয়েও কঠিন হতে পারে। সাকিব নেই, সবচেয়ে বড় কথা, প্রস্তুতিতেও থেকে গেছে ঘাটতি। কাল যাঁরা অকল্যান্ড হয়ে নেপিয়ারে পৌঁছেছেন, তাঁরা তো মাত্র এক দিনের প্রস্তুতি নিয়েই খেলতে নামবেন ১৩ ফেব্রুয়ারির প্রথম ওয়ানডে। অথচ নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় ‘শত্রু’ হয়ে দাঁড়ায় সেখানকার আবহাওয়া আর কন্ডিশনই।

কিন্তু মাশরাফি একটু অন্য ধাতুতে গড়া। এই যে সিরিজ শুরুর আগে এত ঘটনা, দুর্ঘটনা—এই সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়েই মাঠে নামতে চান তিনি। ‘যথাযথ প্রস্তুতি হয়নি, কিন্তু এখন তো আর পেছনের কথা ভেবে লাভ নেই। যা গেছে, গেছে। আমাদের এখন ইতিবাচক থাকতে হবে। যেটুকু আছে, সেটা নিয়েই জেতার চেষ্টা করতে হবে। নিউজিল্যান্ড সফর সব সময়ই কঠিন আমাদের জন্য। এবার না হয় আরেকটু কঠিন হবে’—কাল অকল্যান্ড থেকে সড়কপথে নেপিয়ার যাওয়ার সময় মুঠোফোনে বলছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক।

তবে সাকিবের অভাবটা নিয়ে আসলেই চিন্তিত মাশরাফি। নিউজিল্যান্ড থেকে টিম ম্যানেজমেন্ট এখন পর্যন্ত সাকিবের বদলি কাউকে চায়নি। অবশ্য মাশরাফি তো বলেই দিয়েছেন, ‘কিছু কিছু জায়গা আছে, যেগুলো পূরণ করা যায় না। কিন্তু কিছু তো করার নেই। চালিয়ে নিতে হবে ওকে ছাড়াই।’ গত জিম্বাবুয়ে সিরিজ এবং এশিয়া কাপের মতো এবারও সাকিবের অভাবটা বুঝতে দেবেন না অন্যরা, এই বিশ্বাস নিয়েই নেপিয়ারে গেছেন অধিনায়ক, ‘সাকিব ছাড়াও আমাদের ভালো খেলার দৃষ্টান্ত আছে। এটা ঠিক যে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে টানা ম্যাচ খেলার মধ্যে থাকায় সবাই একটু ক্লান্ত। বিপিএলের পরও বেশি বিরতি পাওয়া যায়নি। তারপরও চেষ্টা তো করতেই হবে। যারা আছে, তারা সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ভালো করা অসম্ভব নয়।’

২০১৬-১৭ মৌসুমের সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফর দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়েই কেটেছে বাংলাদেশের। ক্রাইস্টচার্চের প্রথম ওয়ানডেতে ৩৪১ রান তাড়া করতে গিয়ে ৭৭ রানের হার। নেলসনের পরের দুই ওয়ানডেতে পরাজয়ের ব্যবধান ছিল ৬৭ রান ও ৮ উইকেট। তবে সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি আর মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরির সুবাদে ওয়েলিংটনের প্রথম টেস্টে শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করে বাংলাদেশ। ক্রাইস্টচার্চের দ্বিতীয় টেস্টটাকে অবশ্য পঞ্চম দিনে গড়াতে দেয়নি ব্ল্যাক ক্যাপরা। চতুর্থ দিনেই তারা ম্যাচ জিতে যায় ৯ উইকেটে।

বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ড সফরের গল্পগুলো কমবেশি এ রকমই বেদনার। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পিঠাপিঠি সিরিজ জয় থেকে নিশ্চয়ই নিউজিল্যান্ড-বেদনা উপশমের আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করেছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত আসল জায়গায়ই যে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে! পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই, নেই সাকিব আল হাসানও।