নেইমার ছাড়াও পারি, সেটাই প্রমাণের তাগিদ

নেইমারের চোট কি পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগ স্বপ্নেই গিয়ে আঘাত হানল? ছবি: এএফপি
নেইমারের চোট কি পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগ স্বপ্নেই গিয়ে আঘাত হানল? ছবি: এএফপি
>চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব শুরু হচ্ছে আজ। প্রথম রাতেই মুখোমুখি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-পিএসজি। অন্য ম্যাচে খেলবে রোমা-পোর্তো। বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় শুরু ম্যাচ। সরাসরি সনি টেন

মহাকালে আট সপ্তাহ নিতান্তই অল্প সময়। কিন্তু ফুটবলের একটা মৌসুমে সেই আট সপ্তাহ অনেক দীর্ঘ। এই সময়ে কত কিছু অবিশ্বাস্যভাবে পাল্টে যায়!

গত ১৭ ডিসেম্বরে যখন চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ড্র হয়, সেই সময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হোসে মরিনহো। তাঁর অধীনে ঠিক ওই সময় সর্বশেষ ৮ ম্যাচে মাত্র দুটি জয় ছিল ইউনাইটেডের। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলোর ড্রয়ের মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে লিভারপুলের কাছে ৩-১ গোলে হারটা প্রিমিয়ার লিগে একদমই নড়বড়ে করে দিয়েছিল ইউনাইটেডকে। শীর্ষে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে ব্যবধান তখন ১৯ পয়েন্ট। সেরা চারে থেকে মৌসুম শেষ করা যাবে কি না, এমন প্রশ্নে মরিনহো নিজেই বলেছিলেন, আপাতত সেটা দূরের স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে!

অন্যদিকে ফরাসি লিগে টমাস টুখেলের পিএসজি তখন উড়ছে। দুই ম্যাচ হাতে রেখে লিগ ওয়ানের শীর্ষে তারা, সেটাও ১০ পয়েন্টের ব্যবধানে! চ্যাম্পিয়নস লিগেও লিভারপুল, নাপোলিকে নিয়ে গড়া গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে উঠে এসেছে পিএসজি। মোটকথা, নেইমার-এমবাপ্পে-কাভানিরা পা ছোঁয়ালেই গোল হয়ে যাচ্ছে! এমন অবস্থায় শেষ ষোলোর ড্রয়ে মরিনহোর ওই ইউনাইটেডকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে টুখেল মনে মনে হয়তো খুশিই হয়েছিলেন।

কিন্তু ফুটবলে এক দিনে কত কিছু পাল্টে যায়, আর এ তো আট সপ্তাহ! চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর ড্রয়ের পরদিনই ইউনাইটেড থেকে বরখাস্ত হন মরিনহো। আপত্কালীন কোচ হিসেবে বাকি মৌসুমের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনাইটেডেরই সাবেক নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড ওলে গুনার সুলশারকে। কী কাণ্ড, মরিনহোর অধীনে যে পগবা-রাশফোর্ডদের দেখে মনে হচ্ছিল খেলা ভুলে গেছেন, তাঁরাই সুলশারের অধীনে ফুল হয়ে ফুটতে শুরু করলেন নতুন করে। ফলাফল, দুই মাস পর সুলশারের অধীনে ১১ ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত অপরাজিত ইউনাইটেড, ১০টা জয়, একটা ড্র। এই সময়ে সুলশারের ইউনাইটেড জিতে এসেছে আর্সেনাল আর টটেনহামের মাঠ থেকে। প্রিমিয়ার লিগে উঠে এসেছে শীর্ষ চারে। এই ইউনাইটেডের পক্ষে এখন কোনো দলকেই হারানো অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।

পিএসজি এখনো দুই ম্যাচ হাতে রেখে ১০ পয়েন্টের ব্যবধানে লিগ ওয়ানের শীর্ষেই আছে। কিন্তু চোটের কারণে সম্প্রতি হারিয়েছে নেইমারের মতো অন্যতম তারকাকে। চোটই মাঠের বাইরে ছিটকে দিয়েছে এডিনসন কাভানি আর মার্কো ভেরাত্তিকেও। ওল্ড ট্রাফোর্ডে আজ ইউনাইটেডের বিপক্ষে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে তিনজনের কেউই থাকছেন না সম্ভবত। খুব স্বাভাবিকভাবেই ড্রয়ের পর ইউনাইটেডকে পেয়ে যে স্বস্তিটা ছিল টুখেলের, সেটা এখন এক ফোঁটাও নেই! এখন যে তাঁর দলের চ্যাম্পিয়নস লিগে টিকে থাকা নিয়েই টানাটানি!

প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে অবশ্য দুই দলের কখনো দেখা হয়নি এর আগে। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের ইতিহাস বিবেচনা করলে ইউনাইটেডকেই এগিয়ে রাখতে হবে। ইউনাইটেড তিনবারের চ্যাম্পিয়ন আর দুবারের রানার্সআপ, পিএসজি তো সেমিফাইনালই খেলেছে মাত্র একবার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারফরম্যান্সটা অবশ্য পিএসজিরই কিছুটা ভালো। ২০১১ থেকে এখন পর্যন্ত ইউনাইটেড কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে একবার মাত্র, পিএসজি খেলেছে চারবার। প্রতিপক্ষকে নিয়ে তাই খুব সতর্ক ইউনাইটেড কোচ সুলশার, ‘ওদের প্রতিটি পজিশনে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়েরা খেলেন। টুখেল নিজেও একজন দারুণ কোচ। আমাদের সেরাটাই খেলতে হবে ওদের বিপক্ষে।’

শেষ ষোলোতে আজ রাতে অন্য ম্যাচে রোমার মুখোমুখি হবে পোর্তো। দুই দল এর আগে চারবার মুখোমুখি হয়েছে, একবারও হারেনি পোর্তো। দুটি জয়ের পাশাপাশি দুটি ড্র। অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আজ নতুন কিছু করতে পারবে কি রোমা?