সমকামিতা বিতর্কে পদক্ষেপ নিচ্ছে আইসিসি

ভালো বিপদেই পড়েছেন শ্যানন। ছবি: প্রথম আলো
ভালো বিপদেই পড়েছেন শ্যানন। ছবি: প্রথম আলো

মাঠে প্রতিপক্ষকে স্লেজিং করতে গিয়ে সমকামীবিদ্বেষী মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বিপক্ষে। সেন্ট লুসিয়া টেস্টে ইংল্যান্ডের জয়ের চেয়েও আলোচনা বেশি হচ্ছে গ্যাব্রিয়েলের সে মন্তব্য নিয়ে। ইংলিশ অধিনায়ক জো রুটের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে বেফাঁস মন্তব্য করায় এখন আইসিসির আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে গ্যাব্রিয়েলের বিপক্ষে।

সেন্ট লুসিয়া টেস্টের তৃতীয় দিনের ঘটনা। বিকেলের সেশনে স্টাম্প মাইকে হঠাৎ ভেসে আসে রুটের ঠান্ডা মাথার জবাব, এটাকে অপমান হিসেবে ব্যবহার করো না। সমকামী হওয়াটা অপরাধ নয়। গ্যাব্রিয়েলের সঙ্গে তখন তর্কাতর্কি হচ্ছিল রুট ও ক্রিজে থাকা অন্য ব্যাটসম্যান জো ডেনলির। এর ফলে গ্যাব্রিয়েল কার উদ্দেশে স্লেজিং করছিলেন, সেটা বোঝা যায়নি। কিন্তু গ্যাব্রিয়েল যে সমকামীবিদ্বেষী কিছু একটা বলছিলেন, সেটা নিশ্চিত বোঝা গেছে।

সে ঘটনায় আইসিসি টুইট করে গ্যাব্রিয়েলের সমালোচনা করেছে। সেখানে আচরণবিধির ২.১৩ আর্টিকেল ভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয়েছে গ্যাব্রিয়েলের বিরুদ্ধে, ‘ম্যাচ আম্পায়ারদের তোলা এ অভিযোগ এখন ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো বিবেচনা করে দেখবেন। বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে আইসিসি এ ব্যাপারে আর কোনো মন্তব্য করবে না।’ আইসিসির ২.১৩ আর্টিকেলে ‘ব্যক্তিগত, অপমানজনক, বাজে বা আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার’ সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়।

রুটের ওই মন্তব্যেই জানা গেছে মাঠে এমন আচরণের কথা। ফলে রাতারাতি রুটকে সবাই এখন আলাদা চোখে দেখছেন। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেশ কিছু সংস্থাই রুটকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে। রুট নিজে অবশ্য এ ব্যাপার নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এভাবে, ‘আইসিসির দায়িত্ব এসব সামলানো। মন্তব্য করার মতো অবস্থানে আমি নেই, তবে সিরিজজুড়ে দুই দলই সঠিক মনমানসিকতা নিয়ে খেলেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে, তারা খুবই ভালো মানুষ এবং এটা খুবই লজ্জার হবে যদি এ বিতর্ক তাতে দাগ ফেলে। এটা খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ ছিল। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আপনার কিছু দায়িত্ব থাকে মাঠে, আমি যা করেছি সে সিদ্ধান্তে অটল আছি। আমি তা-ই করেছি, যা আমার ঠিক মনে হয়েছে। মাঠে কিছু ব্যাপারে কী করা উচিত, সেটা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, আমি যা করেছি সেটাই সঠিক মনে হয়েছে।’

মাঠে গ্যাব্রিয়েল কী বলেছেন, সেটা জানা না গেলেও মাঠের আম্পায়ারদের তাঁকে সতর্ক করার ঘটনাতেই বোঝা গেছে, দোষটি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসারেরই ছিল। রুট নিজে অবশ্য গ্যাব্রিয়েলের মন্তব্য নিয়ে বাড়তি কিছু বলতে চাননি। এমনকি ম্যাচ অফিশিয়ালদের কাছেও এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। তাঁর ভাষায়, খেলার উত্তেজনায় অনেক কিছুই বলে অনেকে, ‘মাঝে মাঝে মানুষ মাঠে এমন কিছু বলে যা ভবিষ্যতে অনুতাপের জন্ম দেয়। কিন্তু ওসব কথা মাঠেই থাকুক। এটা টেস্ট ক্রিকেট এবং সে একজন আবেগপ্রবণ খেলোয়াড়, যে ম্যাচ জেতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। সে ভালো লোক, যে পরিশ্রমী ক্রিকেট খেলে এবং গর্ব করার মতো অবস্থানে আছে। লড়াইটা খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিল, সে অসাধারণ এক সিরিজ কাটিয়েছে এবং তার গর্বিত হওয়া উচিত।’

তবে নাসের হুসেইনের চোখে তাঁর উত্তরসূরিরই গর্বিত হওয়া উচিত, ‘আমি জানি না কে কাকে কী বলেছে... তবে আমি জো রুটের উত্তরের প্রশংসা না করে পারছি না।’ টুইটার বার্তায় নাসের আরও বলেছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে একটা টেস্ট সেঞ্চুরি বা জয়ের চেয়েও একজন আদর্শ হিসেবে ওর বলা এই ১২টি শব্দই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে (ভবিষ্যতের জন্য)।’