কোথায় যাচ্ছেন ইকার্দি?

অধিনায়কত্ব হারিয়ে দল ছাড়ার কথা মাথায় এসেছে ইকার্দির। ছবি: টুইটার
অধিনায়কত্ব হারিয়ে দল ছাড়ার কথা মাথায় এসেছে ইকার্দির। ছবি: টুইটার

প্রায় চার বছর ইন্টার মিলানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাউরো ইকার্দি। ২১ বছর বয়সী এক বিদেশি ফুটবলারের হাতে দলের দায়িত্ব দিতে একটুও কুণ্ঠা হয়নি ইন্টারের মতো বিখ্যাত দলের। ৬ বছরেই ক্লাবের নবম সর্বোচ্চ গোলদাতা মাউরো ইকার্দি। ২১ বছর বয়সী ইকার্দিকে অধিনায়কত্ব দিয়ে যে চমক জাগিয়েছিল ইন্টার তার চেয়েও বড় চমকের সৃষ্টি করে ৪ বছর পর তাঁর কাছ থেকে আর্মব্যান্ড কেড়ে নিয়েছে ক্লাব। নতুন অধিনায়ক হিসেবে সকলের সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সামির হান্দানোভিচকে। এর জের ধরে ইউরোপা লিগের ম্যাচ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে ইকার্দির। তাই গত কয়েক বছরে নিয়মিত হয়ে ওঠা প্রশ্নটি আবার জেগেছে, কোথায় যাচ্ছেন ইকার্দি?

মাত্র ২১ বছর বয়সে ইন্টার মিলানের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন মাউরো ইকার্দি। সাম্পোদিয়া থেকে ইন্টার মিলানে যোগ দেওয়ার মাত্র ২ বছরের মাথায় তাঁকে বানিয়ে দেওয়া হয় অধিনায়ক। এমনটা নতুন না ইন্টারের জন্য। মাত্র ২৩ বছর বয়সে ইন্টারের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন রোনালদো নাজারিও দি লিমাও। অনেকেই ভেবেছিলেন সে পথেই বোধ হয় হাঁটছেন মাউরো ইকার্দি। ইকার্দির মধ্যেই নিজেদের হাভিয়ের জানেত্তিকে খুঁজে পেতে চেয়েছিল দলটি। ইতালিয়ান লিগের এই তারকাকে দলে নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি লেগে গিয়েছিল বিভিন্ন দলের মধ্যে। যার মধ্যে ছিল জুভেন্টাসের নামও।

এতে কিছুটা ভয়ই পেয়েছে ইন্টার বোর্ড। নিজেদের সেরা তারকাকে দলে ধরে রাখতে বেশ চিন্তিত তারা। তাই চুক্তির অনেকটা সময় বাকি থাকতেও নতুন চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু বেতনের অঙ্ক পছন্দ না হওয়ায় সে চুক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন ইকার্দির এজেন্ট এবং স্ত্রী ওয়ান্দা নারা। বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন নতুন চুক্তিতে টাকার অঙ্কটা আরও বড় করা লাগবে। নইলে নতুন ক্লাবের পথ ধরবেন ইকার্দি। এই কথাই গায়ে লেগেছিল ইন্টার বোর্ডের। যে কারণে হুট করেই ইকার্দিকে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে তারা। দল থেকে শেষ মুহূর্তে নাম সরিয়ে নেওয়ায় কোচ স্পালেত্তিও কিছুটা ক্ষুব্ধ। এমনিতেই তাঁকে নিয়ে প্রতি দলবদলেই গুঞ্জন শুরু হয়। ইন্টারের এমন সিদ্ধান্তে এখন সবাই মোটামুটি নিশ্চিত নতুন ক্লাবে যাচ্ছেন ইকার্দি। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের নতুন গন্তব্য হতে পারে ইউরোপিয়ান অনেক বড় দলই। ইকার্দির মতো বক্সের বাঘ যে এখন বিরল।

ইকার্দির স্ত্রী ও এজেন্ট ওয়ান্দা নারা। ছবি: টুইটার
ইকার্দির স্ত্রী ও এজেন্ট ওয়ান্দা নারা। ছবি: টুইটার

বায়ার্ন মিউনিখ:
ইউরোপের বড় দলের মধ্যে কিপটে বলে কিছুটা খ্যাতি কাছে জার্মান দলটির। তা থাকবেই বা না কেন? নিজেদের ঘরোয়া লিগে কখনোই বড় কোনো প্রতিযোগিতার মুখ পড়তে হয় না তাদের। প্রতিভাবান সব ফুটবলারদের সঙ্গে আগে থেকেই কথা বলে রেখে প্রায় সময়ই মুফতে খেলোয়াড় নিয়ে আসে তারা। ইউরোপ থেকেও দলের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে, এমন তারকাদের টেনে আনার চেষ্টা করে তারা। এবার অবশ্য কৌশলে বদল আনতে হচ্ছে বায়ার্নের। বায়ার্নের ভরসা ‘রোবারি’ (রোবেন-রিবেরি) জুটি এই মৌসুম শেষেই ছাড়ছে বায়ার্ন। মূল স্ট্রাইকার রবার্ট লেবানডফস্কির বয়সও এখন ত্রিশ হয়ে গেছে। পুরো দল ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা বায়ার্ন ম্যানেজমেন্টের মাথায়। যে কারণে বায়ার্ন চোখ রাখছে ২৫ বছর বয়স্ক ইকার্দির ওপর।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড:
ওলে গুনার সুলশ্যারের অধীনে ইউনাইটেড চলছিল ভালোভাবেই। কিন্তু ইউরোপে এসেই খেই হারিয়ে ফেলেছে ‘রেড ডেভিল’রা। ঘরোয়া ফুটবলে দুর্দান্ত গতিতে ছোটা ইউনাইটেড ইউরোপে বছরের প্রথম ম্যাচ খেলতে এসেই দেখেছে মুদ্রার অপর পিঠ। নিজেদের মাঠেই গোল করতে ব্যর্থ হয় সুলশ্যারের দল। দলের আক্রমণভাগের ব্যর্থতা খুবই বাজেভাবে চোখে পড়েছে সকলের। রাশফোর্ডের গায়ে ১০ নম্বর জার্সি তুলে দেওয়া হলেও এখনো দলের ভার নেওয়ার মতো পাকা হয়ে ওঠেননি। অন্যদিকে রোমেলু লুকাকু ও অ্যালেক্সিস সানচেজ সেই যে হারিয়েছেন, আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই ইউনাইটেডের সঙ্গে ইকার্দির নাম জড়িয়ে যাচ্ছে।

ইকার্দির করা ইনস্টাগ্রাম পোস্ট।
ইকার্দির করা ইনস্টাগ্রাম পোস্ট।

রিয়াল মাদ্রিদ:
ইকার্দির সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের নাম জড়ানোর তৃতীয় বছর চলছে। করিম বেনজেমাকে সরিয়ে ইকার্দিকে পাকাপাকিভাবে দলে নিচ্ছে এমন কথা কম শোনা যায়নি। কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো খেলোয়াড় দলে থাকায় সে পথে আর এগোয়নি দলটি। কিন্তু এ মৌসুমের শুরুতে রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া এই গুঞ্জনের পালে নতুন করে হাওয়া লাগায়। কিন্তু বেনজেমাতেই আস্থা রেখেছে ক্লাব। এখন ইকার্দিকে পাওয়ার সুযোগ পেলেও বেনজেমার অসাধারণ ফর্ম ও নেতৃত্ব দলবদলের সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে। বেনজেমার সঙ্গে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের রসায়নেই ভবিষ্যত দেখছে রিয়াল। যে কারণে গত কয়েক বছরের সবচেয়ে আলোচিত দলবদল বাস্তবে নাও দেখা যেতে পারে।

জুভেন্টাস:
মাউরো ইকার্দির নতুন দল হিসেবে পুরোনো জুভেন্টাসের নামও আসতে পারে। ওয়ান্দা নারা প্রথমে কথাবার্তা বলেছিলেন জুভেন্টাসের সঙ্গে। রোনালদো আসার আগেই তার জায়গাতে ইকার্দিকে আনার চেষ্টা করেছিল জুভেন্টাস বোর্ড। কিন্তু রোনালদো চলে আসায় বেঁকে বসে জুভেন্টাস বোর্ড। হিগুয়েইনকে ছেড়ে দিয়ে ইকার্দি নেওয়ার জায়গায় রোনালদোকে আনে তারা। কিন্তু ইকার্দির আশা ছেড়ে দেয়নি তখনই। বেড়ে চলা মাঞ্জুকিচের বয়স আরও চিন্তা বাড়িয়েছে তাঁদের। এই মৌসুম শেষে ইকার্দির দিকেও হাত বাড়াতে পারে জুভেন্টাস। তবে ইতালিয়ান মিডিয়ায় গুজব ওয়ান্দা নারা ইতিমধ্যে জুভেন্টাসের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলেছেন, শুধুমাত্র যোগ দেওয়ার অপেক্ষা।

ইকার্দিকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে আরও অনেকেই হাত বাড়াতে পারেন। কিন্তু ইন্টার এখনই মন থেকে দূর করে দেয়নি তাদের অধিনায়ককে। চার বছর ধরে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরে থাকা ইকার্দিকে এত সহজে ছাড়ছে না তারা। এখনো চুক্তির ২ বছর বাকি রয়েছে। ১১০ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজটাও বড় এক বাধা। তবে ইকার্দিও কম যান না। গতকাল নিজের ছবির সঙ্গে ক্যাপশন হিসেবে দিয়েছেন মার্ক টোয়েনের বিখ্যাত উক্তি, ‘মুখ খুলে সংশয় দূর করার চাইতে মুখ বন্ধ রেখে বোকা সেজে থাকা ভালো।’ দল আর তাঁর মধ্যে চলা শীতল যুদ্ধ যে দ্রুত শেষ হচ্ছে না তারই ইঙ্গিত হয়তো এটা।