ডানেডিনে মাহমুদউল্লাহদের জন্য 'বাংলাদেশি' ভালোবাসা

>ডানেডিনে নেমে নিউজিল্যান্ডের রীতিতে অভ্যর্থনার পাশাপাশি বাংলাদেশি নাগরিকদের সংবর্ধনাও পেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০ ফেব্রুয়ারি এ শহরেই সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ।

নেপিয়ার আর ক্রাইস্টচার্চ প্রায়ই একই অভিজ্ঞতা উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। তিন দিনের ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটিও যেন প্রথম ম্যাচেরই পুনরাভিনয়। যুগল সেই দুঃস্বপ্নকে পেছনে ফেলে আজ নিউজিল্যান্ড সময় দুপুরে ডানেডিনে পা রেখেছে বাংলাদেশ দল। ২০ ফেব্রুয়ারি এখানেই সিরিজের শেষ ওয়ানডে। বাংলাদেশের জন্য যা হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই। নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য আরেকটি ৩-০।

বাংলাদেশের ছোট্ট একটি মেয়ে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। ছবি: লেখক
বাংলাদেশের ছোট্ট একটি মেয়ে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। ছবি: লেখক

যে মাঠে তৃতীয় ওয়ানডে, সেই ইউনিভার্সিটি ওভালের ইতিহাসে বাংলাদেশ একটা আলাদা জায়গা নিয়ে আছে। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে টেস্ট ভেন্যু হিসেবে এই মাঠের অভিষেক বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই। তামিম ইকবালের মনেও এই মাঠের জন্য আলাদা একটা জায়গা বরাদ্দ। তাঁর টেস্ট অভিষেকের সঙ্গে যে মিলে গিয়েছিল টেস্ট ভেন্যু হিসেবে এই মাঠের অভিষেকও। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্নের প্রতিশব্দ হয়ে থাকা এই সফর ইউনিভার্সিটি ওভালে নতুন কোনো গল্প লিখবে কি না, তা জানতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সে যা হওয়ার হবে। যা হয়েছে, সেটিই বরং বলি। ডানেডিনে বাংলাদেশ দলের আগমন-লগ্নটা রীতিমতো স্মরণীয় হয়ে থাকল বিমানবন্দরে প্রাণঢালা অভ্যর্থনায়। নিউজিল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী রীতিতে স্বাগত জানানো হলো বাংলাদেশ দলকে। এর সঙ্গে থাকল দেশি আমেজের ছোঁয়াও। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশ বড়সড় একটা দল যে বিশাল এক লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে হাজির ছিলেন বিমানবন্দরে। তাঁদের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশ দলকে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে দক্ষিণের এই শহরে বরণ করে নিলেন পেশায় ফার্মাসিস্ট ডক্টর শ্যামল দাস। আমন্ত্রণ জানালেন সন্ধ্যায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে গড়া দলের সঙ্গে স্থানীয় এক দলের প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচেও। বাংলাদেশের ছোট্ট একটা মেয়ে ফুলের তোড়া উপহার দিল বাংলাদেশ দলকে। দলের পক্ষ থেকে যা গ্রহণ করলেন মাহমুদউল্লাহ ও ম্যানেজার খালেদ মাসুদ। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজারই তা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছোট বিমানে ওঠার অস্বস্তির কারণে তিনি দলের সঙ্গে আসেননি। এসেছেন গাড়িতে করে সড়কপথে। ছোট বিমান নিয়ে ভয়ে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন তামিম ইকবালও। ক্রাইস্টচার্চ থেকে সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটের ফ্লাইট। মাত্র ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট উড়েই ডানেডিনে। এয়ার নিউজিল্যান্ডের পুরো উড়ানটাই এমন নিস্তরঙ্গ যে টেক অফ আর ল্যান্ডিংয়ের সময় ছাড়া সিটবেল্ট বাঁধতেই হলো না। বিমান থেকে নামার সময় তাই মনে হলো, মাশরাফি আর তামিমের ভয়টা একেবারেই অকারণ ছিল। একটা লাভ অবশ্য তাঁদের হয়েছে। এক শহর থেকে আরেক শহরে বিমানে উড়ে এলে দেশটা দেখা যায় না। যেটি দেখা সম্ভব শুধু সড়ক বা রেলপথে এলেই। মাশরাফি ও তামিম তাই সতীর্থদের বলতেই পারেন, ‘তোরা তো নিউজিল্যান্ডের কিছুই দেখলি না! আমরা কত সুন্দর সব দেখতে দেখতে এলাম।’

ডানেডিন বিমানবন্দরে কিউই কায়দায় বাংলাদেশ দলকে অভ্যর্থনা। ছবি: লেখক
ডানেডিন বিমানবন্দরে কিউই কায়দায় বাংলাদেশ দলকে অভ্যর্থনা। ছবি: লেখক

বিমান থেকে বাকি সব যাত্রী নেমে যাচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশ দলের সবাই তখনো যাঁর যাঁর সিটে বসা। নামতে নামতে তাই জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ব্যাপার, আপনারা নামবেন না, নাকি?’ কে যেন দুষ্টুমি করে বললেন, ‘না, আমরা বিমানেই বসে থাকব। আবার ফিরে যাব ক্রাইস্টচার্চে।’ পরে জানতে পারলাম, বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতার জন্য তাঁদের একটু পরে নামতে বলা হয়েছিল। বাংলাদেশ দল অ্যারাইভাল হলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী কিউই অভ্যর্থনা। নিউজিল্যান্ডের রাগবি ম্যাচ দেখে থাকলে যেটির ধরন বুঝতে আপনার সুবিধা হবে। যদিও বড় একটা পার্থক্য থাকল এখানে। অল ব্ল্যাকসের ম্যাচের আগের ওই ‘হাকা’ আসলে নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী মাওরিদের যুদ্ধ প্রস্তুতি। আর কালো পোশাক পরা নারী-পুরুষের দলটা নেচে-গেয়ে যা করল, সেটির ভাষা বুঝতে না পারলেও অতিথি বরণের সুরটা ঠিকই পরিষ্কার বোঝা গেল তাতে। যেটি শেষ হওয়ার পর প্রথমে স্থানীয় ভাষায়, এরপর ইংরেজিতে বাংলাদেশ দলকে ডানেডিনে স্বাগত জানানো হলো।
জবাবে বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকেও কিছু বলতে হয়। যে দায়িত্ব পালন করলেন কোচ স্টিভ রোডস। এমন দারুণ অভ্যর্থনা পেয়ে অভিভূত হয়েছেন জানিয়ে বললেন, ‘আশা করি, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান ও বোলাররাও এমন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে।’ যা শুনে চারপাশ থেকে হাসির রোল উঠল।

ডানেডিন বিমানবন্দরে জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিড়। ছবি: লেখক
ডানেডিন বিমানবন্দরে জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিড়। ছবি: লেখক

এই রোদ-এই বৃষ্টি, এই গরম-এই কনকনে শীতের ক্রাইস্টচার্চ থেকে আসা বাংলাদেশ দলকে ডানেডিন সত্যিকার অর্থেই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। চারপাশে ঝকঝকে রোদ। ভর দুপুরে তাপমাত্রাও এমন যে টি-শার্ট পরেই বেরোনো যায়। এমনিতে ডানেডিন শীতের জন্য বিখ্যাত। প্রায় প্রতি শীতেই তুষারপাত হয়। প্রায় এগারো বছর ডানেডিনবাসী প্রবাসী বাংলাদেশি আবদুল মান্নানের কাছ থেকে জানা গেল, কদিন ধরে ডানেডিনের আবহাওয়া খুব ভালো। সঙ্গে অবশ্য এটাও জানিয়ে দিলেন যে আবহাওয়ার খামখেয়ালির দিক থেকে ডানেডিনও কম যায় না। কখনো কখনো সেটির রূপ এত দ্রুত পাল্টে যায় যে এক দিনেই চার ঋতু দেখা হয়ে যায়। ডানেডিন সম্পর্কে ‘ফোর সিজনস ইন আ ডে’ কথাটা তো আর এমনিতেই প্রচলিত নয়।
নতুন শহরে এসে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সেও একটু বদলের ছোঁয়া লাগলে তো ভালোই!