নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে বোলিং বাংলাদেশের!

মোস্তাফিজ ছাড়া সাফল্য পাননি আর কোনো পেসার। ছবি: এএফপি
মোস্তাফিজ ছাড়া সাফল্য পাননি আর কোনো পেসার। ছবি: এএফপি
>ব্যাটিং গড় বেশি হলে ভালো, বোলিং গড় বেশি হলে খারাপ। যত বেশি, তত খারাপ। চলতি সিরিজে এই পর্যন্ত বাংলাদেশি বোলারদের গড় ১১৫.৫০। একেকটা উইকেটের জন্য রানের সেঞ্চুরি হজম করে ফেলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে! ওয়ানডেতে কোনো সিরিজে এটাই বাংলাদেশি বোলারদের সবচেয়ে বাজে গড়। বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে যেকোনো দল মিলিয়েই সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের রেকর্ড!

দিন শেষে মানুষ শুধু ফলটা মনে রাখে। হার না জিত? জিতলে বড়জোর জয়ের ধরন নিয়ে দু-চারটে কথা হয়। কিন্তু হারলে? থাক, কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায়! কিন্তু হার খুঁড়ে ক্ষতস্থান চিহ্নিত করলে উপশমেও সুবিধা হয়। যেমন ধরুন, নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ চলতি সিরিজের কথা। প্রথম দুই ম্যাচেই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। কেউ দিচ্ছেন ব্যাটিংয়ের দায়, কেউ আবার বোলিংয়ের। আবার কারও কারও বর্ম কন্ডিশনের অজুহাত। তা, কন্ডিশনের কথা উঠলে ব্যাটিংয়ে সমস্যা যতটুকু মানা যায়, বোলিংয়ে কিন্তু ততটা নয়।

ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে পেসবান্ধব উইকেট। দুই ম্যাচেই তিন ‘বিশেষজ্ঞ’ পেসার নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। বাদ যাননি সৌম্য সরকারও। সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচেই হাত ঘুরিয়েছেন এই ‘পার্ট টাইম’ মিডিয়াম পেসার। আর সঙ্গে ‘বিশেষজ্ঞ’ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। আহামরি না হলেও আশা জাগানিয়া বোলিং বিভাগ। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে এই আশার ফল মিলছে কোথায়? উল্টো বাংলাদেশকে এখন চোখ রাঙাচ্ছে লজ্জার এক রেকর্ড। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে গড় বিবেচনায় সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের রেকর্ড এটাই।

শেষ ওয়ানডেতে পরিসংখ্যানটা বদলে ফেলার সুযোগ থাকছে বাংলাদেশের। ভালো বোলিং করলে এই গড় চোখ সওয়া একটা আকারে নামবে। কিন্তু এই শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না, ওয়ানডেতে সব দল মিলিয়েই তিন ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সবচেয়ে বাজে বোলিং গড়ের রেকর্ডটা বাংলাদেশের নামের পাশে লেখা হয়ে যেতে পারে!

তিন ম্যাচের সিরিজে দলীয়ভাবে সবচেয়ে বাজে বোলিং গড়ের কীর্তি (!) জিম্বাবুয়ের। ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছিল ভারতের দ্বিতীয় সারির দল। সেই সিরিজে জিম্বাবুয়ের সব বোলার মিলে ভারতের মাত্র ৩ উইকেট ফেলতে পেরেছিলেন। এতে জিম্বাবুয়ে দলের বোলিং গড় দাঁড়ায় ১৪২.৬৬।

বাংলাদেশ দলের হাতে এখনো এক ম্যাচ বাকি। জিম্বাবুয়ের সেই ‘কীর্তি’ মাশরাফিদের কাছাকাছি থেকেই চোখ রাঙাচ্ছে। কিংবা এভাবেও বলা যায়, প্রথম দুই ম্যাচের বাজে পারফরম্যান্সে দলের বোলিং জিম্বাবুয়ের ওই লজ্জার বেশ কাছাকাছি পৌঁছে গেছে! এই দুই ম্যাচ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের বোলিং গড় ১১৫.৫০। এই সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচেই সাদামাটা স্কোর (২৩২ ও ২২৬) গড়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই সংগ্রহ রক্ষা করতে গিয়ে বোলিং হয়েছে আরও সাদামাটা। দুই ম্যাচে ২টি করে কিউইদের মাত্র ৪ উইকেট পড়েছে।

প্রথম ম্যাচের ২টি উইকেট স্পিনারদের। পরের ম্যাচে মোস্তাফিজ একাই ২ উইকেট নিয়েও পেসারদের মান রক্ষা করতে পারেননি। কিউইদের পেসবান্ধব কন্ডিশনেও বাকি পেসারদের ঝুলিটা যে একেবারে ঢুঁ ঢুঁ। দুই ম্যাচে সাতজন করে বোলার ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক মাশরাফি। এই সাতজন ৮০.৪ ওভার বল করে ৪৬২ রান দিয়ে নিয়েছেন মাত্র ৪ উইকেট। তাতেই গড়টা ১০০ পেরিয়েছে।

এর আগে দ্বিপক্ষীয় তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে বোলিং গড় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ২০১৭ সালে সেই সিরিজে বাংলাদেশ দলের বোলিং গড় ছিল ৮৩.৬৬। দক্ষিণ আফ্রিকার সেই ‘বাজে’র সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের এই ‘বাজে’-র ফারাকটা নিশ্চয়ই বোঝা গেল।