সাব্বির বলতে চাইলেন, কথা বলতে জানে তাঁর ব্যাট

সেঞ্চুরির পর সাব্বিরের শূন্যে লাফ। ছবি: এএফপি
সেঞ্চুরির পর সাব্বিরের শূন্যে লাফ। ছবি: এএফপি
>নিউজিল্যান্ড ইনিংসে একটা সেঞ্চুরি নেই তবুও তারা ৬ উইকেটে ৩৩০ রানের বিশাল স্কোর গড়েছে। টপ অর্ডারে ব্যর্থতার পরও বাংলাদেশ যে ২৪২ রান করতে পারল, তাতে বড় অবদান সাব্বিরের। ডানেডিনে ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করে অনেক প্রশ্নের উত্তরও দিলেন।

টিম সাউদিকে চোখজুড়ানো এক কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে ৯৫ থেকে পৌঁছালেন ৯৯ রানে—সাব্বির রহমান ব্যাকরণ মেনেও খেলেন! তাঁর শক্তির জায়গাটি ‘পাওয়ার’, তাঁকে নেওয়াই হয় এ কারণে। সাব্বিরের কাছে প্রত্যাশা থাকে, ছয়-সাতে নেমে একটা ঝড় তুলে দলের স্কোরটা ভালো জায়গায় পৌঁছে দেবেন। আজ একটু ব্যতিক্রম হলো। দলের স্কোর ভালো জায়গায় পৌঁছে দেওয়া নয়, চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে ৩৩১ রানের লক্ষ্য পেরোনো অসম্ভব বলে হারের ব্যবধান কমাতেই খেলতে হলো তাঁকে। আর এতে লম্বা এক অপেক্ষার অবসান হলো সাব্বিরের।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া সাব্বির অবশেষে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। তিন অঙ্ক ছুঁতে লেগে গেল ১০৮ ম্যাচ। সেঞ্চুরিটাও পেলেন মোক্ষম সময়ে। এই সিরিজে সাব্বিরকে দলে নেওয়া নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। বিতর্ক হয়েছে আসলে তাঁকে নেওয়ার প্রক্রিয়াটা নিয়ে। শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে গত সেপ্টেম্বরে ৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাব্বিরকে নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি, যেটি শেষ হতো আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা কখন কমানো হয়েছে, বিসিবি সেটা ঠিকভাবে জানায়নি। নিউজিল্যান্ড সিরিজের দল ঘোষণার দিন আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলো সাব্বিরের নিষেধাজ্ঞা কমানো হয়েছে। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সাব্বিরকে বারবার নিজের প্রতিজ্ঞার কথা জানাতে হয়েছে, তিনি ভালো খেলেই সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
সেটি তিনি আজ দিলেনও। সাউদিকে পুল করে এক রান নিয়ে পূর্ণ করলেন সেঞ্চুরি। তিন অঙ্ক ছুঁয়েই শূন্যে লাফ, উইকেটে চুমু এঁকে, পরে এক হাতে ব্যাট উঁচিয়ে আরেক হাত দিয়ে ইশারা করে কী যেন বলতে চাইলেন। যেটির একটা অর্থ হতে পারে—‘আমার ব্যাট কথা বলতে জানে’!’ অর্থ যেটিই হোক, ইনিংসটা যে তাঁকে ঘিরে নানা প্রশ্নের উত্তর, সন্দেহ নেই! ইনিংসটা খেলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে নিজের অন্তর্ভুক্তিও প্রায় নিশ্চিত করলেন সাব্বির।
বাংলাদেশের টপ অর্ডার সিরিজের শেষ ম্যাচেও ব্যর্থ। ৩৩১ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে আজ ৬১ রানে নেই ৫ উইকেট। ছয়ে নেমে সাব্বির আর কী করতে পারেন? পরাজয়ের ব্যবধানটা কমাতে পারেন। সাইফউদ্দিন আর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে সেটিই করলেন। সাইফের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ১০১ আর মিরাজের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে ৬৭ রানের দুটি জুটি গড়লেন সাব্বির। এই লড়াইয়ের ফাঁকে আরও একটা লড়াই করতে হলো তাঁকে। বারবার বিতর্কে জড়িয়ে কক্ষচ্যুত হয়ে পড়া সাব্বিরকে নিয়ে যত প্রশ্ন, সবকিছুর উত্তর দেওয়ার সুযোগ তিনি শত ভাগ কাজে লাগিয়েছেন। যদিও উইকেটে এসেই একটা সুযোগ পেয়েছিলেন। সাউদিকে পুল করে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ফাইন লেগে সীমানা দড়ির কাছে লকি ফার্গুসনের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন। ফার্গুসন ক্যাচ তো ধরতে পারলেনই না, উল্টো ছক্কা হয়ে গেল। শূন্য রানে জীবন পাওয়া সাব্বির আর পেছনে ফিরে তাকাননি। থেমেছেন সেঞ্চুরি করেই। শেষ উইকেট হিসেবে সাউদির শিকার হওয়ার আগে সাব্বিরের রান ১০২।
যতই ব্যাটিং বিপর্যয়ে খেলুন, স্ট্রাইকরেট প্রায় ১০০-এর কাছাকাছি থেকেছে সাব্বিরের। লেংথ কিংবা শর্ট বলে নিজের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পুল বা স্লগ করেছেন। কখনো কখনো ব্যাকরণ মেনে চোখ জুড়ানো শটও খেলেছেন। ৫৫ স্কোরিং শটে ১২টি চার মেরেছেন, ছক্কা দুটি। ৫৯ বলে ফিফটির পর তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ১০৫ বলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট একটা সেঞ্চুরি পাবেন কবে—সে প্রশ্নের উত্তর তো দিয়েছেনই। গত কিছুদিনে জেঁকে বসা বিষম চাপ আর বিদ্ধ হওয়া সমালোচনার তির সরিয়ে ফেলেই সাব্বিরের অমন উদ্‌যাপন—‘আমার ব্যাট কথা বলতে জানে’!