দুশ্চিন্তা নিয়েই বিশ্বকাপ দল গড়তে হবে বাংলাদেশকে

পুরো সিরিজে লিটনের মতো টপ অর্ডারে বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যান ব্যর্থ। ছবি: এএফপি
পুরো সিরিজে লিটনের মতো টপ অর্ডারে বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যান ব্যর্থ। ছবি: এএফপি
>নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ধবলধোলাই হওয়ার বড় কারণ, টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। ছয়ে-সাতে নামা ব্যাটসম্যানরা যদি লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন, ওপরের দিকে ব্যাটসম্যানরা কেন পারলেন না? দলের ওপরের ব্যাটসম্যানরা এমন ব্যর্থ সবশেষ কবে হয়েছে?

১, ১ ও ১—নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজে লিটন দাসের তিনটি ইনিংস। পুরো সিরিজে কোনো ইনিংসে ১ রানের বেশি করতে না পারার দুঃখে বাংলাদেশ ওপেনার আজ যদি ডানেডিনের টিম হোটেলে দরজা বন্ধ করে বালিশে মাথা গুঁজে কাঁদেনও, তাঁকে সান্ত্বনা দিতে পাশে থাকবেন ওপেনিং জুটিতে তাঁর সঙ্গী তামিম ইকবাল। বিপিএল ফাইনালে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করা তামিম ছবির মতো সুন্দর দেশ নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ভুলেই গেলেন কীভাবে রান করতে হয়!

আগের দুই ম্যাচে ৫, ৫—১০ রান করা তামিম আজ আউট হয়েছেন কোনো রান না করেই। শূন্য রানে আউট হয়েছেন, সেটির চেয়ে বেশি দৃষ্টিকটু তাঁর আউট হওয়ার ধরনে। ১২ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটানো একজন ব্যাটসম্যান প্রথম ওভারেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল চালাতে গিয়ে আউট! তামিম লিটনকে সান্ত্বনা দিতে পারেন, ‘তোর চেয়ে আমার যন্ত্রণা কম না।’ হতাশার আগুনে পোড়া তামিম-লিটন পাশে পাবেন মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য সরকারকেও। সিরিজে মুশফিক করেছেন ৪৬, মাহমুদউল্লাহ ৩৬ আর সৌম্য ৫২। টপ আর মিডলঅর্ডার এমন ব্যর্থ এই সিরিজে—কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন?

মাছের পচন শুরু মাথা থেকে, একটা দলের ইনিংসের পচন শুরু টপ অর্ডার থেকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পুরো ওয়ানডেতে এই ‘পচন’ নিয়েও বাংলাদেশে ২০০ রানের ওপর স্কোর গড়েছে। ছয়ে নেমে মোহাম্মদ মিঠুন টানা ২টি ফিফটি পেয়েছেন, সাব্বির রহমান তো আজ সেঞ্চুরিই করলেন। ছয়ে-সাতে নামা ব্যাটসম্যানরা যদি লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন, ওপরের দিকে ব্যাটসম্যানরা কেন পারলেন না? দলের ওপরের ব্যাটসম্যানরা এমন ব্যর্থ সবশেষ কবে হয়েছে? গত নিউজিল্যান্ড সফরেও বাংলাদেশ ধবলধোলাই হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের কাছে। ব্যর্থতার মধ্যেও সিরিজে ইমরুল কায়েস-তামিম ১০০-এর ওপর রান করেছিলেন। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও টানা হেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লিটন দাস-মাহমুদউল্লাহর ব্যাট কথা বলেছিল। আরও একটু পেছালে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম-এনামুল হক ছিলেন সবচেয়ে এগিয়ে। করছিলেন ১০০-এর ওপরে রান।

পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের সবাই একসঙ্গে ব্যর্থ হয়েছে সবশেষ ২০১৩ সালের মে মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে। ওই সিরিজে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন নাসির হোসেন। ছয় বছর পর আরেকটি সিরিজে দেখা গেল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর একটা লম্বা বিরতি। এপ্রিলে হয়তো বিশ্বকাপ দল ঘোষণা হয়ে যাবে। সেই দল ঘোষণা হওয়ার কথা গত দুটি হোম সিরিজ আর এই নিউজিল্যান্ড সিরিজে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা নির্বাচকদের কাছে। সেটিই যদি হয়, ভীষণ চিন্তা নিয়ে দল করতে বসতে হবে নির্বাচকদের।

তামিম, সৌম্য, লিটন—তিন ওপেনার ব্যর্থ। ব্যর্থ মুশফিক-মাহমুদউল্লাহও। কেন পুরো টপ অর্ডার ব্যর্থ এ সিরিজে, সেটির একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের আশা, খুব শিগগির এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবেন তাঁরা, ‘একটু চিন্তা করে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং করা দরকার ছিল । প্রথম ১০-১৫ ওভার উইকেটে থাকলেই কিন্তু ৬০-৭০ রান হচ্ছিল। আমাদের ৪-৫ উইকেট পড়ার পরও রান হয়েছে। ওখানে যদি (বিশেষজ্ঞ) ব্যাটসম্যান থাকত আর তখন ১০ রান কমও হতো, পরে ঝুঁকি নেওয়া সহজ হতো। মানসিকভাবে আমরা ওটা করতে পারিনি। এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা থাকতে হয়। বাংলাদেশে আগামী কয়েক মাসে আর কোনো সিরিজ নেই। পরে এমন কন্ডিশনে চার-পাঁচ মাস খেলতে হবে। অনুশীলন বলেন, মানসিকতা বলেন, পরিকল্পনা সবকিছু হয়তো এমনই থাকবে। পরিকল্পনা এভাবে করলে আশা করি সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।’