যে দেশে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরি বিফলে যায়

সেঞ্চুরি করে উচ্ছ্বাস সাব্বিরের, কিন্তু সেঞ্চুরিটা দলের জয় এনে দিতে পারেনি। ছবি: এএফপি
সেঞ্চুরি করে উচ্ছ্বাস সাব্বিরের, কিন্তু সেঞ্চুরিটা দলের জয় এনে দিতে পারেনি। ছবি: এএফপি
>

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে সাব্বির রহমানের সেঞ্চুরি বৃথা গেছে। নিউজিল্যান্ডের মতো কঠিন কন্ডিশনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তিন অঙ্ক ছোঁয়ার ঘটনা নেহাত কম নয়। তবুও একটি সেঞ্চুরিও এখনো দলকে এনে দিতে পারেনি কাঙ্ক্ষিত ফল

নিউজিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, এটা জানা কথা। কিন্তু অবাক হতে পারেন, এই পরীক্ষায় বাংলাদেশের অনেক ব্যাটসম্যান কিন্তু সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন, দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু কেন যেন সে সব সেঞ্চুরি দলকে জয়ের মোহনায় নিয়ে জেতে পারেনি। বাংলাদেশ আটকে থেকেছে পরাজয়ের বৃত্তেই।

কাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছেন সাব্বির রহমান, অথচ দল হেরেছে বড় ব্যবধানে। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান হিসেবে সপ্তম সেঞ্চুরি পেলেন সাব্বির। এই সেঞ্চুরির মতো আগের ছয়টিও দলকে জয় এনে দিতে পারেনি। আর কোনো দেশে ভালো করেও এভাবে বারবার হতাশ হতে হয়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।

দেশের বাইরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে—১০টি। এর মধ্যে পাঁচটিই দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এই পাঁচ সেঞ্চুরি তিনটিই তামিম ইকবালের। গত জুলাইয়ে তামিমের দুই সেঞ্চুরি ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে রেখেছিল বড় অবদান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশি সেঞ্চুরি পেয়েছেন শ্রীলঙ্কায়—৮টি। এই আট সেঞ্চুরির কোনোটিই জয় না এনে দিলেও তিনটি এসেছিল ২০১৩ সালের মার্চে গল টেস্টে। যে টেস্ট বাংলাদেশ করেছিল জয়তুল্য ড্র। সেঞ্চুরি পেতে শ্রীলঙ্কার পরই নিউজিল্যান্ডের মাটি বেশি সহায়তা করেছে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের। তবে সবগুলো সেঞ্চুরিই গেছে বৃথা।

নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার আগে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ইমরুল কায়েস, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে। বাঁহাতি ওপেনারের সেঞ্চুরির সৌজন্য বাংলাদেশের স্কোর ৯ উইকেটে ২৪১। নিউজিল্যান্ড সেটি টপকে যায় ৩ উইকেট হাতে রেখে। ওই সফরে হ্যামিল্টন টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। একই মাঠে মাহমুদউল্লাহ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপে, কিউইদের বিপক্ষেই। বৃথা যায় তাঁর অপরাজিত ১২৮ রানটিও। সে ম্যাচে বাংলাদেশের দেওয়া ২৮৯ নিউজিল্যান্ড টপকে যায় ৩ উইকেট হাতে রেখে।

এক ইনিংসে দলের দুজন ব্যাটসম্যান দুর্দান্ত দুটি ইনিংস খেলেছেন, তবুও টেস্ট জেতা দূরে থাক ড্র পর্যন্ত করতে পারেনি—এমন ঘটনাও এই নিউজিল্যান্ডে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ওয়েলিংটন টেস্টে ফিফটি পেলেন তামিম-মুমিনুল। সাকিব আল হাসান খেললেন ক্যারিয়ারসেরা ২১৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস, আর মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে এল ১৫৯ রানের আরেকটি দ্যুতিময় ইনিংস। ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানের পাহাড় গড়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করল বাংলাদেশ। তবুও টেস্টটা ৭ উইকেটে হারলেন মুশফিকরা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরি বিফলে যাওয়ার সবশেষ উদাহরণ সাব্বির।

বিদেশে বাংলাদেশ সেঞ্চুরি কাজে লাগিয়েছে সবচেয়ে বেশি জিম্বাবুয়েতে, ৫ সেঞ্চুরির চারটিই জয় এনে দিয়েছে দলকে। নিউজিল্যান্ডই শুধু ব্যতিক্রম, যেখানে সেঞ্চুরি আছে, একজন-দুজন দুর্দান্ত খেলেছেন, অথচ দল কখনো জয়ের দেখা পায়নি।