নখ কামড়ানোর ম্যাচে 'জুয়া' খেলে জিতলেন কোহলি

অস্ট্রেলিয়ার আরও একটি উইকেট পতনের উল্লাস ভারতের। দুর্দান্ত বল করে জিতেছে কোহলির দল। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়ার আরও একটি উইকেট পতনের উল্লাস ভারতের। দুর্দান্ত বল করে জিতেছে কোহলির দল। ছবি: এএফপি
>নাগপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ রানে হারিয়েছে ভারত। আগে ব্যাট করে ২৫০ রানে অলআউট হয় বিরাট কোহলির দল। তাড়া করতে নেমে ৩ বল হাতে রেখে ২৪২ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া

২০১৭ সালের সেই ম্যাচে হারের ব্যবধানের মতো না হলেও ফলটা একই হলো। কলকাতায় প্রায় দুই বছর আগের সেই ম্যাচটি আজকের মতোই ছিল সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। আগে ব্যাট করে ২৫২ রান তুলেছিল ভারত। তাড়া করতে নেমে ৫০ রানে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। আজ প্রায় একই রান (২৫০) তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া জিততে জিততে হেরেছে। আর ভারত ৮ রানের এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ২-০ ব্যবধানে।

অস্ট্রেলিয়া এত লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হারবে, তাঁদের ব্যাটিংয়ের শুরুতে কিন্তু এমন ইঙ্গিত ছিল না। ১৫তম ওভারে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ওপেনিং জুটিতে ৮৩ রান তুলেছিলেন অ্যারন ফিঞ্চ ও উসমান খাজা। অধিনায়ক ফিঞ্চ ৩৭ রান করে কুলদ্বীপ যাদবের শিকার হন। পরের ওভারে উসমান খাজাকেও (৩৮) তুলে নেন আরেক ‘যাদব’—কেদার যাদব। এরপর অস্ট্রেলিয়ার মিডলঅর্ডারে কোনো ব্যাটসম্যানই বড় স্কোর গড়তে পারেনি। ছয়ে নামা মার্কাস স্টয়নিস তুলে নিয়েছেন একমাত্র ফিফটি—কিন্তু দলকে জেতাতে না পারলে এই ফিফটির দাম কী!

জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে ২৯ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। হাতে ছিল ৪ উইকেটে। নাথান কুল্টার-নাইলকে নিয়ে ব্যাট করছিলেন স্টয়নিস। জাসপ্রীত বুমরার করা পরের ওভারে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ার পথে নেমে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এই ওভারে ১ রান খরচায় কুল্টার-নাইল ও প্যাট কামিন্সকে তুলে নেন ভারতের ‘ডেথ ওভার’ বিশেষজ্ঞ পেসার। ২৪ বলে ২৮ রানের দূরত্বে পিছিয়ে পড়ে সফরকারি দল। স্টয়নিসের সঙ্গে উইকেটে তখন স্পিনার নাথান লায়ন। সাদামাটা স্কোরের ম্যাচে নেমে আসে টান টান উত্তেজনা। কে জিতবে, ভারত না অস্ট্রেলিয়া?

মোহাম্মদ শামির করা ৪৭তম ওভারে ৭ রান তোলেন স্টয়নিস-লায়ন জুটি। শেষ তিন ওভারে লক্ষ্য নেমে আসে ২১ রানে। বুমরাহ তাঁর স্পেলের শেষ ওভারটি করতে আসেন ৪৮তম ওভারে। তাঁকে জোর করে মারতে গেলে কিংবা একটু ভুল-চুক হলেই বিপদ—এমনটি ভেবে বুমরার করা সেই ওভারে রক্ষণাত্মক ছিলেন স্টয়নিস। বুমরাহ নিজেও নিখুঁত লাইন-লেংথ ধরে রাখেন। ওই ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে ভারতের জয়ের পাল্লা আরেকটু ভারী করেন এই পেসার। কুলদ্বীপ ৩ উইকেট পেলেও ১০ ওভারে ২৯ রানে ২ উইকেট নেওয়া বুমরা-ই এই ম্যাচে ভারতের সেরা বোলার।

১২ বলে ২০ রানের কঠিন সমীকরণে ফেঁসে যাওয়া স্টয়নিস-লায়ন জুটি ৪৯তম ওভারে হাত খোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শামির নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেংথে দুজন শেষ বলের আগে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে লায়ন শেষ ওভারে জয়ের সমীকরণ নামিয়ে আনেন ১১ রানে। আর শেষ ওভারে স্টয়নিস স্ট্রাইকে থাকায় জয়ের পাল্লা ভারী হয় অস্ট্রেলিয়ার দিকেই। কিন্তু ম্যাচের শেষ ওভারে এসে ঘুরে যায় জয়ের পাল্লা।

অস্ট্রেলিয়ার গোটা ইনিংসে এর আগে মাত্র ১ ওভার করা বিজয় শংকরকে শেষ ওভারে বোলিংয়ে এনে জুয়া খেলার সিদ্ধান্ত নেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় অধিনায়ক এই জুয়া জিতেছেন বিজয়ের প্রথম বলেই—স্টয়নিসকে (৫২) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই মিডিয়াম পেসার। ৫ বলে দরকার ১১, উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার শেষ দুই ব্যাটসম্যান—লায়ন ও জাম্পা। তৃতীয় বলে জাম্পাকে ফিরিয়ে ভারতের ৮ রানের দুর্দান্ত জয় নিশ্চিন্ত করেন বিজয়।