সকালে ফিটনেস টেস্টে উতরালে তবেই খেলবেন তামিম

অনুশীলন করলেও কাল ম্যাচে নামা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে তামিমের। ছবি: রতন গোমেজ
অনুশীলন করলেও কাল ম্যাচে নামা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে তামিমের। ছবি: রতন গোমেজ

প্রায় সব ক্রিকেটারের মতো তামিম ইকবালেরও অনেক সংস্কার আছে। এর মধ্যে একটি হলো, ম্যাচের আগের দিন তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন না। কোনো কথাই বলেন না, এমন নয়। অন্য সব বিষয়ে কথা বলেন, তবে খেলা নিয়ে নয়। সাক্ষাৎকার দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এটি জানা থাকার পরও আজ নিউজিল্যান্ড সময় রাত ৯টার দিকে তাঁকে ফোন করতে হলো। ওয়েলিংটন টেস্ট শুরুর আগে সবচেয়ে বড় কৌতূহল তো তামিমকে নিয়েই। যেটির উত্তর তাঁরই সবচেয়ে ভালো জানার কথা।

হ্যামিল্টনে আগের টেস্টের দুই ইনিংসেই দারুণ ব্যাটিং করেছেন। প্রথম ইনিংসে ছিলেন নিঃসঙ্গ যোদ্ধা। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর দেখানো পথ ধরে সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহও দুর্দান্ত দুটি সেঞ্চুরি করেছেন। কাল ওয়েলিংটনে শুরু দ্বিতীয় টেস্টে সেই তামিমকে পাওয়া নিয়েই সংশয়। ডান কুঁচকিতে ব্যথা অনুভব করছেন হ্যামিল্টনে খেলার পর থেকেই। আজ দুপুরে বেসিন রিজার্ভে অনুশীলন শুরুর আগে বললেন, ‘ব্যথাটা এখনো আছে। নেটে ব্যাটিং করে দেখি কেমন লাগে।’

কুঁচকিতে ব্যথা হলে তো শুধু ব্যাটিংয়েই সমস্যা হবে না, দৌড়াতেও সমস্যা হওয়ার কথা। আর এটা তো ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নয়, শেষ পর্যন্ত যে কয়দিনই যাক, টেস্ট ম্যাচ পাঁচ দিনের খেলা। শতভাগ না হলেও অন্তত ৯০ ভাগ ফিটনেস না থাকলে এটি খেলতে নামা বড় ঝুঁকি হয়ে যায়। সেটি আছে কি না, ব্যাটিং করেও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি তামিম। ফোন করে জানতে চাওয়ায় প্রথমেই মনে করিয়ে দিলেন, ‘আপনি তো জানেনই, আমি ম্যাচের আগের দিন কথা বলি না।’ খেলা নিয়ে কথা না বলুন, খেলতে পারবেন কি না, সেটা বলতে তো আর সমস্যা নেই। মনে হলো, তামিম একটু নরম হলেন, ‘এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। কাল সকালে ফিটনেস টেস্ট দেব, তারপর বুঝতে পারব।’

শেষ পর্যন্ত তামিম খেলতে না পারলে বাংলাদেশ দলের জন্য সেটিকে শুধু ‘বিপদ’ বললেই চলছে না, বলতে হবে ‘মহাবিপদ’। স্কোয়াডে তো বিকল্প কোনো ব্যাটসম্যানই নেই। সাকিব আগেই ছিটকে পড়েছেন। মুশফিকও কবজিতে ব্যথা নিয়ে বাইরে। যে কারণে এমনিতেই বাংলাদেশের ব্যাটিং এক ঝটকায় ১২১ টেস্টের অভিজ্ঞতা হারিয়ে ফেলেছে। তামিমও যদি খেলতে না পারেন, তখন আর শুধু অভিজ্ঞতা হারানোর প্রশ্ন থাকবে না। বাংলাদেশের দলটাই বানাতে হবে জোড়াতালি দিয়ে। বাধ্য হয়েই একজন বোলার বেশি খেলাতে হবে।

অন্য সময় হলে হয়তো ঝুঁকি নেওয়ার আগে দুবার ভাবা হতো। কিন্তু এখানে সেই সুযোগ কই! ব্যথা এবং অস্বস্তি মেনে নিয়ে হলেও তামিম শেষ পর্যন্ত ঠিকই খেলবেন বলে আশা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলেও এই টেস্টের জন্য যে ১২ জনের দল চূড়ান্ত হয়েছে বলে খবর, সেটিতে তামিমও আছেন। মুশফিকুর রহিম তো চোটের কারণে এমনিতেই বাইরে। ১৫ জনের দল থেকে তাঁর সঙ্গে বাইরে আছেন নাঈম হাসান ও খালেদ আহমেদ।

বেসিন রিজার্ভের সবুজ উইকেট দেখে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে চার পেসার নিয়ে নামার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। পরে সেই চিন্তা থেকে যে সরে এসেছেন, ১২ জনের দল থেকেই তা পরিষ্কার। তিন পেসার নিয়েই খেলবে বাংলাদেশ। অন্তত কাল পর্যন্ত এটাই ঠিক হয়ে ছিল। মোস্তাফিজুর রহমানকে জায়গা দিতে সরে যেতে হবে খালেদ আহমেদকে। শেষ পর্যন্ত যদি তামিমকে ছাড়াই নামতে হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই একাদশ হয়ে যাচ্ছে। যদিও নিউজিল্যান্ডে, বিশেষ করে বেসিন রিজার্ভের সবুজ উইকেটে দুই স্পিনার নিয়ে নামাটা একটু ব্যতিক্রমীই হবে। তামিম খেলতে পারলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার থাকবে একটাই—মেহেদী হাসান মিরাজ না তাইজুল ইসলাম?

হ্যামিল্টন টেস্টে বাংলাদেশের কোনো বোলারের এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন মিরাজ। সেটি আবার তাইজুলের রেকর্ড ভেঙেই। তারপরও তাঁর ওপর থেকে আস্থা তুলে নিতে রাজি নন মাহমুদউল্লাহ। যুক্তিও আছে সেটিতে—গত দুই বছর ধরে তিন ফরম্যাটেই মিরাজ খুব ভালো করেছেন। এক ম্যাচে খারাপ করা মানেই সেটি মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে না। এক ম্যাচ তো নয়ই, এমনকি দুই ম্যাচ, তিন ম্যাচের পারফরম্যান্সেও কাউকে ‘বাতিল’-এর খাতায় ফেলে দেওয়ার বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ।

বেসিন রিজার্ভের উইকেট যতই সবুজ হোক, যতই সেটি আউটফিল্ডের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাক, প্রথম দিনের পর এই উইকেটই ব্যাটিংয়ের জন্য যথেষ্ট ভালো হয়ে যাবে বলে মাহমুদউল্লাহর ধারণা। এই মাঠে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্টের স্মৃতি মনে রেখেই হয়তো কথাটা বললেন। ২০১৭ সালে এমনই সবুজ উইকেটে প্রথমে ব্যাটিং করে ৫৯৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। সেটিও আবার ৮ উইকেটে। এত রান করে ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ার পরও হারতে হয়েছিল, সেটি ভিন্ন কথা।

সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি আর মুশফিকের ১৫৯ রান, দুজনের ৩৫৯ রানের জুটি সব আলো কেড়ে নিয়েছিল ঠিকই, তবে বাংলাদেশের ওই ইনিংসের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক। ৫০ বলে ৫৬ রানের যে ইনিংসটি খেলেছিলেন, সেটিকে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাঁর সেরা ইনিংস মনে করেন তামিম। সেঞ্চুরি হলে যেটিকে শুধু নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সীমাবদ্ধ না রেখে ক্যারিয়ারেরই অন্যতম সেরা ইনিংসের মর্যাদা দিতেন তিনি।

সেই তামিমকে এবার পাওয়া যাবে কি যাবে না, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অবশ্য বাংলাদেশ একটু বাড়তি সময় পেয়েও যেতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস কাল সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টির কথা বলছে। আর এসব দেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মিলে না যাওয়া আর ঢাকায় ট্রাফিক জ্যাম উধাও হয়ে যাওয়া প্রায় একই কথা। বৃষ্টি প্রথম দিনে আদৌ খেলা হতে দেবে কি না, এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের রীতিমতো সংশয় প্রকাশ করতে দেখলাম। বৃষ্টির কারণে যদি টসও না হতে পারে, তাহলে একটু বাড়তি সময় তো মিলবেই।

টেস্টের শুরুতে বাংলাদেশের বৃষ্টি চাইবার এমনিতে কোনোই কারণ নেই। তবে তামিমকে পাওয়ার জন্য মনেপ্রাণে সম্ভবত সেটিই চাইছেন মাহমুদউল্লাহ!