আরেকটু মনোযোগী না হওয়ার আক্ষেপ লিটনের

>ওয়েলিংটন টেস্টে তৃতীয় দিনে প্রথম ইনিংসে ভালো শুরু করেও সাদামাটা সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রচণ্ড বাতাস আর সবুজ উইকেটে ব্যাটসম্যানরা আরেকটু মনোযোগী হলে সংগ্রহ বড় হতে পারত বলে মনে করেন লিটন দাস

ভালো শুরুর পর আশ্চর্য পতন বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। অনেকবারই এমন ঘটেছে। ওয়েলিংটনে আজ স্রেফ তার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ৭৫ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর ২১১ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে লিটন দাস জানালেন, আরেকটু ভালো করা যেত। ব্যাটসম্যানরা আরেকটু মনোযোগ দিয়ে খেললে আরেকটু ভালো হতো।

ক্রিকেটে ‘আরেকটু মনোযোগ দিয়ে আরেকটু ভালো খেলা’র কথাও নতুন কিছু না। এমন কথা বেশি শুনলে অজুহাত মনে হতে পারে। লিটন অবশ্য কোনো অজুহাত দেননি। বরং কন্ডিশন ব্যাখ্যার চেষ্টাই করেছেন বাংলাদেশ দলের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। বৃষ্টিতে ভেসে গেছে টেস্টের প্রথম দুই দিন। এই দুটি দিন ঢাকা পড়ে ছিল উইকেট। তাতে উইকেট একটু নরম আর আর্দ্র হয়ে পেসারদের জন্য কিছুটা সুবিধা করে দেবে, সেটি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরাও জানতেন। আর ওয়েলিংটনের ভারী বাতাস ও শীতল আবহাওয়াও লিটনের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে তাঁর ৩৩ রানের ইনিংসটি দলের দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। অর্থাৎ শুরুটা ভালোই হয়েছিল। কিন্তু ‘আরেকটু মনোযোগ’ দিতে না পারার আক্ষেপটা থেকেই যাচ্ছে লিটনের।

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন লিটন দাস। ছবি: সংগৃহীত
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন লিটন দাস। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদমাধ্যমকে লিটন বলেন, ‘শুরুটা খুব ভালো ছিল। যেমন শুরু ছিল আরেকটু ভালো করা যেত। ব্যাটসম্যানেরা আরেকটু মনোযোগ খেললে হয়তো বা আরেকটু ভালো হতো।’ বৃষ্টির কারণে তৃতীয় দিনের খেলাও পুরো সময় মাঠে গড়ায়নি। শেষ সেশনে ২৫.২ ওভার বাকি থাকতেই খেলা বন্ধ ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। তার আগে ৩৮ রানে নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনারকে বিদায় করে বাংলাদেশের পেসাররা কিন্তু আশাজাগানিয়া শুরু-ই করেছিলেন। ব্যাটিংয়ে অতটা ভালো করতে না পারলেও লিটন তাই দিনের খেলা শেষে ‘ভালো দিক’ দেখছেন, ‘দিনের শেষে যেটা বলব দুটো উইকেট নিয়েছি, এটাও একটা ভালো দিক। এখনো আবহাওয়া অনেক সাহায্য করছে, উইকেটও সাহায্য করছে (বোলারদের)।’

ওয়েলিংটনের ভারী বাতাসের সঙ্গে আগেই পরিচিত বাংলাদেশ দল। তবে লিটনের জন্য এই অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম, ‘আমি তো কখনো এমন আবহাওয়ার মধ্যে খেলিনি। অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। কঠিন ছিল। আমার মনে হয় অনেক খেলোয়াড়ের জন্যই কঠিন ছিল।’ তাহলে ওপেনিং জুটিতে দুর্দান্ত শুরু হলোর কী ব্যাখ্যা? তামিম ইকবাল ও সাদমান ইসলামের ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি এমন বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে সবুজ উইকেটে ব্যাটিং করা কত কঠিন! আর ওয়েলিংটনের বাইশ গজ নিয়ে আলোচনা তো চলছেই। কাল উইকেটের ঘোমটা খোলার পর দেখা গিয়েছিল পুরো অংশ-ই সবুজ! অর্থাৎ ব্যাটসম্যানদের চরম পরীক্ষা নেবে এই উইকেট, তেমনটি ভাবাই স্বাভাবিক। লিটন এ ব্যাপারে অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন।

বেসিন রিজার্ভের সবুজ বাইশ গজে ব্যাটিং করে লিটনের অভিজ্ঞতা, ‘উইকেট দুই পক্ষের (ব্যাটসম্যান ও বোলার) জন্যই সমান ছিল। বলব না যে শুধু বোলারদেরই সাহায্য করেছে। মনোযোগ দিয়ে ব্যাট করলে সফল হওয়ার সুযোগ থাকত। এবং এটি কালও থাকবে পরশু-ও থাকবে।’ অর্থাৎ বৃষ্টির মধ্যে দুই দিন ঢাকা পড়ে থাকা সবুজ উইকেটে ব্যাট করা যতটা কঠিন মনে হয়েছে আসলে ততটা ছিল না? লিটন সরাসরি জবাব না দিয়ে উদাহরণ টানলেন তামিমের ইনিংসের, ‘কন্ডিশন তো একটু বোলারদের পক্ষেই ছিল। এমন সবুজ উইকেটে এমন আবহাওয়ার মধ্যে বোলাররা একটু সাহায্য পাবেই। কিন্তু ব্যাট করার সময় মনোযোগটা বেশি থাকলে সফল হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। যেমন তামিম ভাই অনেকক্ষণ মনোযোগ নিয়ে খেলেছেন।’

১৫৮ মিনিট উইকেটে ছিলেন তামিম। ১১৪ বল খেলে ১০ চারে ৭৪ রান করেন এই ওপেনার। তামিম ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানই ফিফটি পাননি। বাকি ব্যাটসম্যানরা কতটুকু মনোযোগী ছিলেন তা বোঝাতে এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট!