ভারতকে শাস্তি দিতে পারে আইসিসি?

পুরো ভারত দল সেদিন পরেছিল সেনা-টুপি। ছবি:এএফপি
পুরো ভারত দল সেদিন পরেছিল সেনা-টুপি। ছবি:এএফপি
>সেনা-টুপি পরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে খেলতে নেমেছিলেন ধোনি-কোহলিরা। বিষয়টা পছন্দ হয়নি পিসিবির। আইসিসির আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে ব্যাপারটাকে দেখছে সংস্থাটি। যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে আগে মঈন আলী ও ইমরান তাহিরের মতো ক্রিকেটাররা শাস্তি পেয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আইসিসি কি ভারতকে শাস্তি দেবে?

কাশ্মীর হামলার উত্তাপ শেষই হচ্ছে না। রাজনীতির ময়দান পেরিয়ে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট মহলেও এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পাকিস্তানবিরোধী এ প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন ভারতের বর্তমান ক্রিকেটাররাও। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটাররা সেনা-টুপি পরে খেলতে নেমেছিলেন। আর এতেই চটেছে পিসিবি। দাবি জানিয়েছে, আইসিসির আচরণবিধি লঙ্ঘন করার জন্য ভারতকে যেন শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু আইসিসি কি পিসিবির এই দাবি মানবে?

রাজনৈতিক, বর্ণবাদী বা ধর্মীয় কারণে প্রতিবাদ করার মঞ্চ হিসেবে ক্রিকেট মাঠকে ব্যবহার করার নজির এটাই প্রথম নয়। ২০১৪ সালে, ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমেছিল ভারত। টেস্টের দ্বিতীয় দিনে হাতে ‘সেভ গাজা’, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা দুটি রিস্টব্যান্ড পরে মাঠে নেমেছিলেন অলরাউন্ডার মঈন আলী। বোর্ডের সমর্থন নিয়ে এমন কাজ করেছেন বলে আইসিসির কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক নয়, বরং মানবিক কারণেই এটা করেছেন বলে আইসিসিকে জানিয়েছিলেন মঈন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। টেস্টের বাকি তিন দিন রিস্টব্যান্ড দুটি পরতে পারবেন না বলে মঈনকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসি বিবৃতি দিয়েছিল, ‘আইসিসির পোশাক ও সরঞ্জামের বিধি অনুযায়ী এমন কিছু পরে ক্রিকেট মাঠে নামা যাবে না, যা সরাসরি রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা বর্ণবাদী বার্তা বহন করে। এ ধরনের ঘটনায় মঈন আলী চাইলে ক্রিকেট মাঠের বাইরে তাঁর মতামত প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু মাঠের ভেতরে এই রিস্টব্যান্ডগুলো তিনি আর কখনো পরতে পারবেন না।’

একই ধরনের ঘটনায় শাস্তি পেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান লেগ স্পিনার ইমরান তাহির। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি খেলতে গিয়ে বিতর্কিত উদযাপন করে আইসিসির শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। লঙ্কান ব্যাটসম্যান আসেলা গুনারত্নেকে আউট করার পর জার্সি খুলে নিচে থাকা একটা টি-শার্ট দেখিয়ে উদযাপন করেন তাহির। যে টি-শার্টে পাকিস্তানের সাবেক পপ তারকা ও ধর্মীয় নেতা জুনাইদ জামশেদের ছবি ছিল। জুনাইদ জামশেদ বেশ প্রভাবশালী একজন ধর্মীয় নেতা ছিলেন, যিনি বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। জার্সির নিচে জামশেদের মুখের ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরে তাঁকে সম্মান জানিয়েছিলেন তাহির। পরে এই কাণ্ড ঘটানোর জন্য তাহিরকেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

এই দুই ঘটনাকে উদাহরণ মানছে পিসিবি। বলেছে, তাহির আর মঈন যদি শাস্তি পেতে পারেন, কোহলিদেরও সে আইনে শাস্তি হওয়া উচিত। পিসিবির চেয়ারম্যান এহসান মানি বলেছেন, ‘আপনারা আগের ঘটনা দুটি সম্পর্কে জানেন। তখন কিন্তু একইভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে মঈন ও তাহিরকে শাস্তি পেতে হয়েছিল।’

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) জানিয়েছে, সেনা-টুপি পরার এই উদ্যোগ নেওয়ার আগেই আইসিসির কাছ থেকে তারা অনুমতি নিয়ে রেখেছিল। আইসিসি এটিকে দাতব্য উদ্যোগ হিসেবে দেখেছে। যদি পিসিবির দাবি, এটি দাতব্য নয়, রাজনৈতিক অবস্থান। মঈন আলীও রিস্টব্যান্ড পরার অনুমতি ইসিবির কাছ থেকে নিয়ে রেখেছিলেন, তা-ও শাস্তি এড়াতে পারেননি।

এখন দেখার বিষয় পিসিবি এই কারণে আইসিসিকে দিয়ে বিসিসিআইকে শাস্তি দেওয়াতে পারে কি না!