অসম্ভব বলেই তো রোনালদো আছেন!

>
  • চ্যাম্পিয়নস লিগে আজ মুখোমুখিথ জুভেন্টাস-অ্যাটলেটিকো; ম্যান সিটি-শালকে। দুটি ম্যাচই শুরু বাংলাদেশ সময় রাত ২টায়
  • চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে ৮ বার প্রথম লেগে পিছিয়ে থেকেও ফিরতি লেগ জিতে পরের রাউন্ডে গেছে জুভেন্টাস।
  • সব ধরনের টুর্নামেন্টে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে কোনো গোল খায়নি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
  • সব ধরনের টুর্নামেন্টে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে কোনো হার নেই সিটির, জয় নেই শালকের।
  • ২০১০-১১ মৌসুমের পর কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো পার হতে পারেনি শালকে।

‘যদি কেউ পারে এটা, রোনালদোই পারবে। তার পক্ষে সবই সম্ভব।’
কথাটা দিয়েতর হেকিংয়ের। ভদ্রলোক জার্মান ক্লাব বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখের এখনকার কোচ। তবে যে সময়ের অভিজ্ঞতার কারণে কথাটা বলছেন, তখন ছিলেন ভলফ্সবুর্গের দায়িত্বে। কী সেই অভিজ্ঞতা? ২০১৫-১৬ চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে তাঁর দল ভলফ্সবুর্গ নিজেদের মাঠে ২-০ গোলে হারিয়েছিলে রিয়াল মাদ্রিদকে। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে এক অতিমানবের হ্যাটট্রিকে ৩-০ গোলে হেরে যায় ভলফ্সবুর্গ। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ গোলে জিতে সেমিফাইনালে উঠে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। ওই বছর চ্যাম্পিয়নও হয় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে। সেই অতিমানবের নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো!

তিন বছর পর সেই রোনালদো এখন জুভেন্টাসে। এবারের পরিস্থিতিতেও তিন বছর আগেকার চিত্রনাট্য যেন। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠে ২-০ গোলে হেরেছে জুভেন্টাস। তুরিনে আজ ফিরতি লেগ। আজ কি আরেকবার অতিমানব হয়ে উঠতে পারবেন পর্তুগিজ উইঙ্গার? ইতালির গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্ত–এর এই প্রশ্নেই শুরুর ওই কথাটা বলেছেন দিয়েতর হেকিং। সঙ্গে আরও যোগ করেছেন, ‘আমার দলের বিপক্ষে সে যেভাবে ৩ গোল করেছিল, সেটা আবার করতে পারে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের রক্ষণভাগ ইউরোপের অন্যতম সেরা। এমন একটা দলের বিপক্ষে গোল বের করতে রোনালদোর মতোই একজনকে লাগবে। এসব ক্ষেত্রে ওর চেয়ে ভালো আর কেউ নেই। আমি যদি বলি সে আমার দেখা সেরা খেলোয়াড় নয়, তাহলে সেটা মিথ্যা বলা হবে।’
তো যাকে নিয়ে এত কথা, সেই রোনালদো কি বলছেন? ‘এমন রাতের জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি, এ যে চ্যাম্পিয়নস লিগের রাত! দল আত্মবিশ্বাসী, আমিও। সমর্থকদের আমি শুধু বলব, ইতিবাচক থাকুন, বিশ্বাস রাখুন। আমরা ঘুরে দাঁড়াবই’—জুভেন্টাস টিভিকে ঠিক এই কথাগুলোই বলেছেন রোনালদো।

তাঁর মুখে এমন কথা মানায়ও। চ্যাম্পিয়নস লিগটা যে আসলে তাঁরই টুর্নামেন্ট। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মোট পাঁচবার জিতেছেন এ টুর্নামেন্টের শিরোপা। চ্যাম্পিয়নস লিগের রেকর্ড ১২১ গোল তাঁর, যার ৫৭টি গোলে দলের জয় নিশ্চিত করেছে। সর্বশেষ ছয় মৌসুমেই এই টুর্নামেন্টের শীর্ষ গোলদাতা তিনি। অথচ সেই রোনালদো এই মৌসুমে জুভেন্টাসের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে গোল করেছেন মাত্র একটি। এর জন্য তো জুভেন্টাস তাঁকে কেনেনি!
সিরি ‘আ’তে জুভেন্টাস টানা সাতবারের চ্যাম্পিয়ন। এখন তো অনেকে বলছেন, জুভেন্টাস ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও লিগ জিততে পারবে, ওটা জেতার জন্য রোনালদোর দরকার নেই। জুভেন্টাস রোনালদোকে এনেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে। সেই হিসেবে আজ পর্তুগিজ উইঙ্গারের অগ্নিপরীক্ষা বৈকি!

তিন বছর আগে ভলফ্সবুর্গের সেই ম্যাচ যদি রোনালদোর প্রেরণা হয়, জুভেন্টাস অনুপ্রাণিত হতে পারে গত সপ্তাহে পিএসজি–ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচ থেকে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ২-০ গোলে প্রথম লেগ হারা ইউনাইটেড প্যারিসে ফিরতি লেগে এক ভাঙাচোরা দল নিয়েও জিতে এসেছে ৩-১ গোলে, উঠে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ইউনাইটেড পারলে জুভেন্টাস কেন পারবে না?
রাতের অন্য ম্যাচটিতে অবশ্য এত কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে না পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিকে। শালকের মাঠ থেকে প্রথম লেগে ৩-২ গোলে জিতে আসায় একটু নির্ভারই থাকার কথা ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু এটা চ্যাম্পিয়নস লিগ, এখানে কত অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম হয়, লেখা হয় কত রূপকথা! ইতিহাদে ফিরতি লেগের আগে তাই খুব সতর্ক পেপ গার্দিওলা ও তাঁর দল।