ক্লাব ফুটবলে ডিফেন্ডার, জাতীয় দলে স্ট্রাইকার!

মাহবুবুর রহমান সুফিল ক্লাব দলে খেলেন ডিফেন্ডার হিসেবে, কিন্তু জাতীয় দলের তিনি ‘নাম্বার নাইন’। ফাইল ছবি
মাহবুবুর রহমান সুফিল ক্লাব দলে খেলেন ডিফেন্ডার হিসেবে, কিন্তু জাতীয় দলের তিনি ‘নাম্বার নাইন’। ফাইল ছবি
>

মাহবুবুর রহমান সুফিল মূলত ফরোয়ার্ড হলেও ক্লাব দলের হয়ে খেলে থাকেন রক্ষণভাগে। আবার জাতীয় দলে তাঁকে খেলানো হয় ‘নাম্বার নাইন’ হিসেবে।

দেশের ফুটবলে স্ট্রাইকার-সংকট দীর্ঘ দিনের। কিন্তু যারা আছেন, তাদের যদি ঘরোয়া ফুটবল খেলতে হয় ডিফেন্ডার হিসেবে, সেটি কেমন ব্যাপার! অনেকেই অবাক হতে পারেন, কিন্তু এটিই সত্যি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে কয়েকজন ‘স্ট্রাইকার’কে ক্লাবের কোচরা খেলার রক্ষণ সেনা হিসেবে। জাতীয় দলের স্ট্রাইকার মাহবুবুর রহমান সুফিল, সাদউদ্দিন এটির সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
গোল করতে না পারাটা বাংলাদেশের ফুটবলের একটি বড় ব্যাধি। স্ট্রাইকারদের গোল মিসের ব্যর্থতায় কত আন্তর্জাতিক ম্যাচে যে বাংলাদেশ হেরেছে, তার হিসেব নেই। জাতীয় ফুটবল দলের নতুন ইংলিশ কোচ জেমি ডের কাছেও বিষয়টি এত দিনে পরিষ্কার। তিনি হতাশ হন যখন দেখেন জাতীয় দলের হয়ে যাদের স্ট্রাইকার হিসেবে গড়ে তুলছেন। ঘরোয়া ফুটবলে তারাই রক্ষণভাগে নেমে খেলছেন। তবে হার মানতে রাজি নন বাংলাদেশ কোচ। অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে তিনি এখন কাতারে। প্রস্তুতি নিচ্ছেন এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ প্রতিযোগিতার। কাতারের ক্যাম্পেই ‘তৈরি’ করছেন স্ট্রাইকার। ঘরোয়া লিগে স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন যাকে রাইটব্যাক খেলিয়ে থাকেন, সেই সুফিলই বাহরাইনে হতে যাচ্ছেন ইংলিশ জেমির ‘নাম্বার নাইন।’ তিনিই তো কম্বোডিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে দুর্দান্ত এক রানিংয়ে জয়সূচক গোলের মূল নিয়ামক।

গত মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময় আরামবাগ ক্রীড়া সঙ্গের জার্সিতে রাইটব্যাক খেলেছেন সুফিল। কিন্তু বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে জেমি ফরোয়ার্ড লাইনের মূল লক্ষ্য হিসেবে সুফিলকে এশিয়ান গেমসে খেলিয়ে বাজিমাত করেছেন। এশিয়াডে দুর্দান্ত খেলা সুফিল থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে গোলও করেছিলেন। এর পর সাফেও জেমির আক্রমণভাগের অন্যতম ভরসা ছিলেন তিনি। কিন্তু ঘরোয়াতে ফিরতেই বনে গিয়েছেন রাইটব্যাক।

কম্বোডিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ শেষে দরজায় কড়া নাড়ছে বাহরাইনে অনুষ্ঠিতব্য এএফসি অনূর্ধ্ব- ২৩ বাছাইপর্ব। চূড়ান্ত পর্বে খেলার আশায় বাংলাদেশ দল এখন অবস্থান করছে কাতারে। সেখানে আবার গোলের রাস্তা খোঁজার অনুশীলন করতে হচ্ছে সুফিলকে। আর বসুন্ধরার এই ‘ডিফেন্ডার’ই যে দলের গোলের মূল ভরসা সেটা জানালেন জেমি নিজেই, ‘নাম্বার নাইন হিসেবে সুফিলের খেলার সম্ভাবনাই বেশি।’

কিন্তু ঘরোয়াতে নিয়মিত রক্ষণভাগ সামলানোর দায়িত্ব পালন করা সুফিল কি পারবেন প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের তালা ভাঙতে! জেমির নিরুপায় জবাব, ‘সে আমার অধীনে এর আগে স্ট্রাইকার হিসেবেই খেলেছে। এতেই সাহস পাচ্ছি।’ সুফিলই যে দলে একমাত্র ফরোয়ার্ড, তা কিন্তু নয়। আক্রমণভাগে আছেন মতিন মিয়া, বিপলু আহমেদ, জাফর ইকবাল ও আরিফুর রহমানের মতো লিগে আলো ছড়ানো তরুণেরা। তবে নাম্বার নাইন হিসেবে যে শারীরিক যোগ্যতার প্রয়োজন, তা কেবল সুফিলেরই আছে। সদ্য কম্বোডিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচই এর উদাহরণ।
পুরো ঘরোয়া লিগ ও টুর্নামেন্টে রাইটব্যাক হিসেবে খেলে জাতীয় দলে গিয়ে নাম্বার নাইন হিসেবে খেলে কতটা ভালো করা সম্ভব? ঘরোয়াতে রাইটব্যাক খেললেও জাতীয় দলে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার জন্য মানসিক প্রস্তুতিটা আগে থেকেই নাকি নিয়ে রাখেন সুফিল, ‘ক্লাবে আমি রাইটব্যাকে খেললেও অনুশীলনে আমি ইচ্ছে করেই মাঝে মাঝে ফরোয়ার্ডে খেলি। যেন স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাটা একেবারেই ভুলে না যায়। জাতীয় দলের কোচ জেমি আমাকে আগেই বলেছে বাহরাইনে নাম্বার নাইন হিসেবে খেলতে হবে। ফলে মানসিক প্রস্তুতিটা আমি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছি। আর এখন তো নাম্বার নাইন হিসেবেই অনুশীলন করছি।’
স্বাগতিক বাহরাইনের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ২২ মার্চ এএফসি অনূর্ধ্ব ২৩ বাছাইপর্ব মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। পরের দুটি খেলা যথাক্রমে ২৪ মার্চ ফিলিস্তিন আর ২৬ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এখন দেখার অপেক্ষা ‘নাম্বার নাইন’ হিসেবে সেখানে কতটা আলো ছড়াতে পারেন ক্লাবের ‘ডিফেন্ডার’?