ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশকে ছুঁল অস্ট্রেলিয়া

জাম্পার আরেকটি উইকেট শিকার। অস্ট্রেলিয়া দলের উল্লাস। ছবি: এএফপি
জাম্পার আরেকটি উইকেট শিকার। অস্ট্রেলিয়া দলের উল্লাস। ছবি: এএফপি
>দিল্লিতে আজ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে ভারতকে ৩৫ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে জিতল অ্যারন ফিঞ্চের দল। ভারতের বিপক্ষে প্রথম দল হিসেবে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর শেষ তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের নজির গড়ল অস্ট্রেলিয়া

খেলাটি ক্রিকেট আর দলটার নাম অস্ট্রেলিয়া। দুয়ারে আবার বিশ্বকাপ। এখন তাই অস্ট্রেলিয়া দলের তেতে থাকাই স্বাভাবিক। অথচ ভারতের টিভি চ্যানেল কিনা, এই দলটাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে হিসু করার বিজ্ঞাপন বানিয়েছিল! এখন বোঝো ঠ্যালা! ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে কোনো দল-ই যা করতে পারেনি, সেটাই করে দেখাল অ্যারন ফিঞ্চের দল। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে পিছিয়ে থেকে শেষ তিন ম্যাচ জিতে সিরিজটাই জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া!

অবশ্য টিভি চ্যানেলটির দোষ কী? ভারতের এই দলটাই তো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জিতে এসেছে। সেই সুখে বানানো হয়েছিল ওই বিজ্ঞাপন। কিন্তু তা বুমেরাংয়ে পরিণত করতে বেশি সময় নিল না অস্ট্রেলিয়াও। দিল্লিতে আজ সিরিজ নির্ধারণী পঞ্চম ওয়ানডেতে ভারতকে ৩৫ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৭২ রান তুলেছিল অ্যারন ফিঞ্চের দল। জবাবে ইনিংসের প্রায় অর্ধেক পথ পর্যন্ত গিয়েই পথচ্যুত হয়েছিল বিরাট কোহলির দল। কেদার যাদব ও ভুবনেশ্বর ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখালেও ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ভারতের ইনিংস থেমেছে ২৩৭ রানে। ৩৫ রানের এই জয়ে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ তো জিতল-ই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোরও অবিশ্বাস্য এক নজির গড়ল।

প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজটাকে প্রায় একপেশে বানিয়ে ফেলেছিল ভারত। তখন কেউ বুঝতে পারেনি কী ঝড় আসছে সামনে। তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জিতল তিনশোর্ধ্ব স্কোর গড়ে। আর চতুর্থ ম্যাচে তো সাড়ে তিনশোর্ধ্ব স্কোর তাড়া করে এল অবিস্মরণীয় জয়। সেই তুলনায় শেষ ম্যাচটা বেশ পানসে করেই হেরেছে ভারত। ২৯ ওভারের মধ্যে ১৩২ রান তুলতে ৬ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিকেরা। এরপর বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতার লড়াইটুকু। কেদার যাদব ও ভুবনেশ্বর কুমার মিলে শেষ দিকে এ আনুষ্ঠানিকতায় কিছুটা উত্তেজনা ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস গড়ার অপেক্ষাই শুধু বেড়েছে। ইতিহাস? হ্যাঁ, দারুণ এক ইতিহাস বৈকি। যেখানে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামও!

ওয়ানডেতে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জয়ের নজির খুব বেশি নেই। এর আগে দুটি দল মিলে মাত্র তিনবার এই নজির গড়েছে। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম তা করে দেখিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই বছর পর ঘরের মাঠে হাবিবুল বাশারের অধিনায়কত্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছিল বাংলাদেশ দল। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ দলের এ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রায় এক যুগ পর ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে আবারও একই নজির গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এবার নিজেদের ইতিহাসে প্রথম আর ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় দল হিসেবে তা করে দেখাল অস্ট্রেলিয়া। তবে সেটি শুধু পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। ২০০৫ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ছয় ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর শেষ চার ম্যাচ জয়ের নজির গড়েছিল পাকিস্তান।

তবে ফিঞ্চের এই অস্ট্রেলিয়া একটি জায়গায় প্রথম—ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এর আগে কোনো দলই প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জিততে পারেনি। ক্রিকেটের রসিক ভক্তরা ভাবতে পারেন, ওই বিজ্ঞাপনের পাল্টা জবাব হলো ভারতের বিপক্ষে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার এই ‘কামব্যাক’ সিরিজ জয়। ঘরে কিংবা বাইরে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এর আগে কখনোই প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর শেষ তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর এর আগে শুধু একবারই ২-২ ব্যবধানে সমতায় ফিরে সিরিজের মীমাংসা শেষ ম্যাচ পর্যন্ত টানতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেটি ২০০৬ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আলোচিত সেই সিরিজটি—যেখানে শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৪ উইকেটে ৪৩৪ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছিল স্বাগতিকেরা।

ভারতের তারকাসমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইন আপের সামনে ২৭২ রান খুব বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ১৩ ওভারের মধ্যে শিখর ধাওয়ান (১২) ও বিরাট কোহলির (২০) ফেরায় চাপে পড়া ভারতের মুঠো থেকে ধীরে ধীরে ম্যাচ বের করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। রোহিত শর্মা এক প্রান্তে ৫৬ রানের ইনিংস খেললেও ২৮.২ ওভারে তাঁকে গুগলিতে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন অ্যাডাম জাম্পা। একই ওভারের পঞ্চম বলে রবীন্দ্র জাদেজাকেও স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে অস্ট্রেলিয়ার জয়কে সময়ের ব্যাপারে পরিণত করেছিলেন এই লেগ স্পিনার। কেননা, ভারতের টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার ততক্ষণে ড্রেসিং রুমে। ঋষভ পন্ত (১৬) ও বিজয় শংকররা (১৬) বিপদের সময় বুক চিতিয়ে লড়তে পারেননি। দলীয় ৬৮ রানে কোহলি ফেরার পর ৬৪ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় ভারত।

বুক চিতিয়ে লড়ার কাজটি করেছেন ছয়ে নামা কেদার ও আটে নামা ভুবনেশ্বর। ১০৩ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েন দুজন। দল ২৫ বলে ৫০ রানের দূরত্বে থাকতে প্যাট কামিন্সের স্লোয়ারে উইকেট দেন ভুবনেশ্বর (৪৬)। পরের ওভারের প্রথম বলে কেদার যাদবকেও (৪৪) তুলে নেন অস্ট্রেলিয়ার আরেক পেসার ঝাই রিচার্ডসন। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভার ব্যাট করলেও আড়াই শ রানও তুলতে পারেনি ভারত। ৪৬ রানে ৩ উইকেট নেন জাম্পা।