একটা শিরোপার জন্য এত ত্যাগ!

লিভারপুল সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ফাওলার। ছবি : প্রথম আলো
লিভারপুল সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ফাওলার। ছবি : প্রথম আলো
>লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের আনুষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষক স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উদ্যোগে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন ক্লাবটির কিংবদন্তি রবি ফাওলার। এবারের মৌসুমে লিভারপুলের লক্ষ্য নিয়ে নিজের ভাবনা জানালেন তিনি

রবি ফাওলার নিজে কখনো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিততে পারেননি। হিসেব করলে গত ২৯ বছর ধরে লিভারপুলের হয়ে যারা খেলে গেছেন, প্রিমিয়ার লিগের স্বাদ তারা কেউই পাননি। কিন্তু এবার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ের সুবাস পাচ্ছে লিভারপুল। ৮ ম্যাচ বাকি রেখে ম্যানচেস্টার সিটি (৭৪) লিভারপুলের (৭৩ পয়েন্ট) চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও লিগ শিরোপাকেই ধ্যানজ্ঞান করেছে লিভারপুল। এমনকি আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়লেও অলরেড সমর্থকেরা সম্ভবত মন খারাপ করবে না!

অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনায় আজ শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হবে লিভারপুল। প্রথম লেগে গোলশূন্য ড্র করেছে দুই দল। ফিরতি লেগে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। লিভারপুল হেরে বাদ পড়লেও লিগ শিরোপার জন্য দলটি সম্ভবত ইউরোপের ময়দান থেকে ছিটকে পড়তেও রাজি! আসলে অ্যানফিল্ডে এবার লিগ শিরোপা নিয়ে এতটা রব উঠেছে যে এমনটি মনে হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

তা, লিগ শিরোপার সুবাস পেতে কেমন লাগছে ফাওলারের? জবাবে নিজ দলের প্রতি আশাবাদের পাশাপাশি সিটির জন্য শ্রদ্ধাও ঝরল তাঁর কণ্ঠে, ‘অসাধারণ এক সুযোগ লিভারপুলের সামনে। এর আগেও বেশ কয়েক বার শিরোপা দৌড়ে ছিলাম আমরা, শিরোপা চলে এসেছিল একদম হাতের নাগালে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে অন্য কোনো দল আমাদের চেয়ে ভালো ছিল, শিরোপা শোভা পেয়েছে তাদের হাতে। এবারও তেমন এক দল আছে—ম্যানচেস্টার সিটি। শুধু প্রিমিয়ার লিগে নয়, সিটির এই দলকে আমি ইতিহাসের অন্যতম সেরা দলের কাতারেই রাখব। মাঠের প্রতিটি অংশে বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে।’

লিগে দশ ম্যাচ বাকি থাকতে লিভারপুলের পয়েন্ট ছিল ৬৯। এই পর্যায়ে এত বেশি পয়েন্ট যে ক্লাবের ছিল, তারাই শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতেছে। কিন্তু পরের দুই রাউন্ডে ১ পয়েন্ট ব্যবধানে শীর্ষে উঠে যায় সিটি। পেপ গার্দিওলার দল নিয়ে তাই ফাওলার বেশ সতর্ক, ‘সিটির একটা অসাধারণ স্কোয়াড আছে। বলা বাহুল্য, আমাদেরও আছে। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের ধরনটাই এমন, কখন কে কীভাবে জিতবে, আগে থেকে বলা যায় না। তবু এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত মাত্র একটা ম্যাচ হেরেছি। আমার কাছে এটা অবিশ্বাস্য। এ ফর্মের কথা মাথায় রাখলে আশা করাই যায় আমরা যেখানে যেতে চাচ্ছি, সেখানে হয়তো যেতে পারব (প্রিমিয়ার লিগ জয়)।’

প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে সঙ্গে এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে লিভারপুলের সামনে। বিশেষ করে আগের মৌসুমে ফাইনাল খেলার পর এবার লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে অন্যতম ফেবারিট হিসেবে মানা যাচ্ছে। জানতে চাওয়া হলো, ফাওলার নিজে যদি এখন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের জায়গায় থাকতেন, তাহলে কোনো ট্রফিটা তাঁর কাছে বেশি প্রাধান্য পেত?

জবাবে লিভারপুল কিংবদন্তি খানিক হাসলেন।হাসির দমক শেষে যা বললেন, বিশ্বব্যাপী হাজারো লিভারপুল ভক্তের প্রত্যাশাই যেন প্রতিধ্বনিত হলো তাঁর কণ্ঠে, ‘দেখুন, আমরা চ্যাম্পিয়নস লিগ এর মধ্যেই পাঁচবার জিতেছি, কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ কখনো জিততে পারিনি। আমার মনে হয় এই প্রশ্নের জবাবে ৯৯.৯ শতাংশ লিভারপুল সমর্থক একই জবাব দেবে, যে আমরা প্রিমিয়ার লিগটাই জিততে চাই। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।’

শুধু প্রিমিয়ার লিগই নয়, চ্যাম্পিয়নস লিগেও সিটিকেই লিভারপুলের সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে মানছেন তিনি, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগেও আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে আমি সিটির নামই বলব। অসাধারণ একটা স্কোয়াড তাদের, রয়েছে অসাধারণ একজন কোচ। আমরা বরং সিটির সঙ্গে একটা সমঝোতায় যেতে পারি এই বলে যে, তোমরা চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতো, আমাদের প্রিমিয়ার লিগ জিততে দাও (হাসি)!’ একটা প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করতেও রাজি!

চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর ফিরতি লেগ হবে বায়ার্নের দুর্গে। এখান থেকে লিভারপুলের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা কেমন? ফাওলার কিন্তু যথেষ্ট আশাবাদী, ‘দেখুন, আপনি যদি কোনো ম্যাচ না জিততে পারেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে আদর্শ স্কোরলাইন হলো ০-০। হিসাব করে দেখুন, চাপ কিন্তু এখন বায়ার্নের ওপর। নিজেদের মাঠে কোনোভাবে যদি লিভারপুলের কাছে তারা একটা গোল খেয়ে বসে, তাহলে তাদের দুটো গোল করতেই হবে। লিভারপুল দুটো গোল দিলে তাদের দিতে হবে তিনটি। আমরা গোল করে যদি ম্যাচ ড্র-ও করি তাও আমরাই পরের রাউন্ডে চলে যাব অ্যাওয়ে গোলের কল্যাণে। তাই তারা চাইবে লিভারপুল যেন কোনো গোল না করতে পারে তাদের মাঠে।’

এরপর ফাওলারের ব্যাখ্যা, ‘কারণ গোল করতে পারলেই চাপ আরও দ্বিগুণ হবে তাদের (বায়ার্ন) ওপর। আর এই চাপকেই কাজে লাগাতে হবে আমাদের। আমার মনে হয় আমরা বেশ সুবিধাজনক অবস্থানেই আছি। বায়ার্ন যথেষ্ট শক্তিশালী দল। আমরাও অনেক ভালো। আমরা কি পরের রাউন্ডে যেতে পারব? হ্যাঁ অবশ্যই পারব। চ্যাম্পিয়নস লিগ কি জিততে পারব? হ্যাঁ, সে সম্ভাবনাও যথেষ্ট আছে। আমরা গত মৌসুমেই দেখিয়েছি ইউরোপে আমরা কতটা ভয়ংকর হতে পারি। ইউরোপের সব দল এখন আবারও আমাদের সমীহ করতে শুরু করেছে।’