মেসি বনাম রোনালদো কি তবে সত্যি নয়?

>
মেসি ও রোনালদো, ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিগত দ্বৈরথ। ফাইল ছবি
মেসি ও রোনালদো, ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিগত দ্বৈরথ। ফাইল ছবি

লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কি একে অন্যকে জ্বলে উঠতে সাহায্য করেন? পর পর দু রাতে দুজনের পারফরম্যান্স দেখে প্রশ্নটা আবারও উঠল। কাল ন্যু ক্যাম্পে বসে বার্সেলোনার খেলা দেখেছেন স্প্যানিশ ফুটবল লেখক অ্যান্ডি ওয়েস্ট। বিবিসিতে লেখা তাঁর ডু মেসি অ্যান্ড রোনালদো থ্রাইভ অন ইচ আদার'স ম্যাজিক? শিরোনামের লেখাটি প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।

ব্যালন ডি'অরের লড়াইটায় দুজনের ব্যক্তিগত দ্বৈরথ সব সময়ই প্রকাশ পেয়ে যায়। রোনালদো বেশ কবারই সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন মেসির ভালো খেলা তাঁকেও আরও বেশি ভালো করতে উৎসাহিত করে। মেসি কখনোই তা সরাসরি বলেননি বলে রোনালদোর ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিটা স্পষ্ট নয়। শত্রু না হোন, দুজন দুজনের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেননি কখনোই। তবে অ্যান্ডি ওয়েস্টের এই লেখা মেসি বনাম রোনালদোর এই দীর্ঘ আলোচনায় অন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিল:

তুমি যা করতে পারো, আমি তার চেয়ে বেশি পারি!

জুভেন্টাসকে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে নিয়ে যাওয়া ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকের পরের রাতেই তাঁর পুরোনো 'জাতশত্রু' লিওনেল মেসিও নিজের মতো করে জাদু দেখিয়ে লিওঁকে বিদায় করে দিয়ে বার্সেলোনাকে শেষ ষোলোর বাধা পার করাল।
এক দিক দিয়ে বলতে গেলে মেসি রোনালদোকে ছাপিয়ে গেছে চার গোলের জন্ম দিয়ে: নিজে দুটি করেছে, জেরার্ড পিকে আর ওউসমানে ডেম্বেলেকে দিয়ে দারুণভাবে দুটি গোল করিয়েছে। এই জয়ের ফলে শেষ আটে বার্সেলোনা স্পেনের একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে টিকে থাকল, বেঁচে থাকল মৌসুমের শুরুতে সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর চমকে দেওয়া সেই ভাষণের প্রতিশ্রুতিও, ইউরোপ সেরার মুকুট তিনি আবার বার্সেলোনাকে ফিরিয়ে দেবেন।
সবচেয়ে বড় কথা, টিকে রইল ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা ব্যক্তিগত দ্বৈরথটিও। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যদি এই ধরাধামে না থাকতেন, মেসিকে কি তাঁকে আবিষ্কার করতেই হবে?

এই দুই খেলোয়াড় একে অন্যকে কতটা জ্বলে উঠতে সাহায্য করে, এই প্রশ্নটা দারুণ। আর তাই কল্পনা করতে লোভ হয়, মঙ্গলবার রাতে মেসি বাসায় বসে দেখছিল রোনালদো কীভাবে অ্যাটলেটিকোকে স্রেফ ধ্বংস করে দিল, ভেতরে-ভেতরে রাগে জ্বলতে জ্বলতে বিড়বিড় করে বলছিল: আচ্ছা ঠিক আছে, ওকে দেখিয়ে দেব!

এই রকম একটা দৃশ্য কল্পনা করতে সবারই লোভ হবে। তবে এমন কিছু অনুমান করে নেওয়া ভুলই হবে, অন্তত মেসির দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলে। হ্যাঁ, অন্যভাবে হলেও মেসিও এটা দেখিয়ে দিয়েছে সেও রোনালদোর মতো খুবই লড়াকু। গোলের পর গোল আর ব্যক্তিগত সব অর্জনের বদলে এই আর্জেন্টাইনেরও আসল নেশা হলো দলের শিরোপা।

রোনালদোর ব্যাপারে বলাই যায়, মাঠে ওকে ততক্ষণ পর্যন্ত সুখী দেখায় না, যতক্ষণ না ও গোল পায়। আবার একটা গোল পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওকে অসন্তুষ্ট দেখাবে। কারণ সে যে আরও একটা গোল চায়। গোলের প্রতি তাঁর এই যে সীমাহীন ক্ষুধা, এটাই ওঁর ক্যারিয়ারকে এতটা দুর্দান্ত বানিয়েছে।

মেসি আবার অন্য ধাতের। নিজে গোল করার মতো সতীর্থদের দিয়ে গোল করাতেও ওর আনন্দ। এমনকি নিজে শট নিলেও হয়তো গোল হয়, এমন জায়গাতেও সে সতীর্থকে বল বাড়িয়ে দিতে পারে, প্রায়ই পেনাল্টি নেওয়ার সুযোগ অন্যদের দেয়, নিজে গোল করার পরও যে বলটা বাড়িয়ে দিয়েছে তার দিকে সোজা ঘুরে গিয়ে দারুণ একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে উদ্‌যাপন করে।

মেসির আশপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁদের ভাষ্যমতে, মেসির মূল নেশা কখনোই রোনালদোর চেয়ে ভালো হওয়ার নয়। বরং সে আরও ভালো লিওনেল মেসি হয়ে উঠতে চায়, জিততে চায় যতটা সম্ভব ট্রফি। লেস্টার কোচ ব্রেন্ডন রজার্সও এই তত্ত্বটা মানেন। মেসি রোনালদো একে অন্যকে কতটা অনুপ্রাণিত করে, এর জবাবে তিনি আমাকে বলেছিলেন, 'হয়তো অবচেতনভাবে কোনো না কোনো দিক দিয়ে ওরা দুজন দুজনকে তাড়িত করে। তবে আমি মনে করি, এই দুজনের মধ্যে জন্মগতভাবেই ক্ষুধাটা আছে আরও সেরা হয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাওয়ার। সব অঙ্গনের সেরা পারফরমারদের মধ্যেই কিন্তু এই ক্ষুধা নিজের ভেতর থেকেই আসে।'

মেসি বনাম রোনালদোর এই আগুনে লড়াইটাকে দুজনের ব্যক্তিগত লড়াই হিসেবে দেখা সমর্থকদের তর্ক-বিতর্কের জন্য ভালো, মিডিয়ার মুখরোচক খবর হিসেবেও দারুণ। তবে সম্ভবত দুজনের ব্যক্তিগত দ্বৈরথটা আসলে সত্যি নয়!