যেন জীবন পেলেন ক্রিকেটাররা

মৃত্যুকে যেন খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হলো তামিম-তাইজুল–মিরাজদের। মসজিদে কাল জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে দেখেন নির্মম হামলায় নিহত মানুষদের ক্ষতবিক্ষত দেহ। মসজিদে না ঢুকে হ্যাগলি পার্কের ভেতর দিয়ে হ্যাগলি ওভালের দিকে তাঁদের দৌড়ে আসার মুহূর্তে।  ছবি: সংগৃহীত
মৃত্যুকে যেন খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হলো তামিম-তাইজুল–মিরাজদের। মসজিদে কাল জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে দেখেন নির্মম হামলায় নিহত মানুষদের ক্ষতবিক্ষত দেহ। মসজিদে না ঢুকে হ্যাগলি পার্কের ভেতর দিয়ে হ্যাগলি ওভালের দিকে তাঁদের দৌড়ে আসার মুহূর্তে। ছবি: সংগৃহীত

দুপুর সাড়ে ১২টায় নিউজিল্যান্ড দলের সংবাদ সম্মেলন শেষ হলো। কথা বললেন টিম সাউদি আর উইল ইয়াং। চোটের কারণে ছিটকে পড়া কেন উইলিয়ামসনের বদলে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে অধিনায়কত্ব করবেন সাউদি। অনেক দিন অপেক্ষায় থাকার পর অভিষেক হবে ইয়াংয়ের। নিউজিল্যান্ডের দুই–তিনজন সাংবাদিকের প্রশ্নের পর প্রশ্নে অনেক দীর্ঘ হলো সেই সংবাদ সম্মেলন।

এবার বাংলাদেশ দলের জন্য অপেক্ষা। বাংলাদেশ দলের বাস হ্যাগলি ওভালে ঢুকল বেলা একটায়। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সংবাদ সম্মেলনে এলেন আরও ২৭ মিনিট পর। হ্যাগলি ওভালের পেছনে সংবাদ সম্মেলনকক্ষে ঢোকার সময় আমাকে বললেন, ‘দাদা, আমাকে একটু তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবেন প্লিজ। নামাজ পড়তে যেতে হবে। দেরি হয়ে গেছে।’

অন্য সাংবাদিকদের কথাটা বললাম, ‘আজ বেশি প্রশ্ন করার দরকার নেই। রিয়াদের তাড়া আছে।’ সংবাদ সম্মেলন প্রায় শেষ। মাহমুদউল্লাহ সব প্রশ্নেরই বিস্তারিত উত্তর দিয়েছেন, তবে একটু উসখুস ভাবটা দৃষ্টি এড়াল না। নাকি আগে থেকেই তাঁর তাড়ার কথা জানি বলেই মনে হলো এমন! মাহমুদউল্লাহ উঠতে যাবেন, কী ভেবে যেন তাঁকে আরেকটা প্রশ্ন করলাম, ‘এই যে দেশের বাইরে কঠিন এক কন্ডিশনে দুই টেস্টে অধিনায়কত্ব করলেন, এ থেকে কী শিখলেন?’ মাহমুদউল্লাহ প্রশ্নটা না হলেই হয়তো খুশি হতেন। তারপরও গুছিয়ে মোটামুটি বড় একটা উত্তরই দিলেন। তারপর চেয়ার থেকে উঠেই দৌড় দিলেন বাসের দিকে। একে একে বাসে উঠলেন দলের ১৭ জন সদস্য। ১৪ জন ক্রিকেটারের সঙ্গে ম্যানেজার খালেদ মাসুদ, ভিভিও অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরন ও দলের ম্যাসিউর মোহাম্মদ সোহেল। ক্রিকেটারদের মধ্যে লিটন দাস আর নাঈম হাসানকে দেখলাম না।

বাস ছেড়ে যাওয়ার পর আমরা বাংলাদেশের সাত সাংবাদিক পার্কিংয়ের জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি। নামাজ পড়ে ক্রিকেটাররা অনুশীলন করতে আবার মাঠে ফিরবেন। সকালে বৃষ্টির কারণে নিউজিল্যান্ড দলের অনুশীলন বাতিল হয়ে গেছে। বাংলাদেশ দল একবার ২২ কিলোমিটার দূরের লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট একাডেমির ইনডোরে যাওয়ার কথা ভেবেছিল। বৃষ্টি একটু ধরে আসায় ঠিক হয়েছে, অনুশীলন হবে হ্যাগলি ওভালেই। টেস্টের আগের দিনের অনুশীলন একটু হালকা চালেই হয়। ভেজা মাঠেই যতটুকু করা যায় আরকি!

এতক্ষণ যা লিখলাম, তা আসলে অর্থহীন। নিউজিল্যান্ডের মধ্যরাত পেরিয়ে যাওয়ার যখন এই লেখাটা লিখছি, বেলা ১.৫২ মিনিটের আগ পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, তার কোনো কিছুরই আর অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। সময়টা একেবারে নিখুঁতভাবে মনে থাকার কারণ, মোহাম্মদ ইসামের কল লিস্টে সেটি স্থির হয়ে আছে। বাংলাদেশের অনুশীলন দেখার জন্য থাকব নাকি মোটেলে ফিরে যাব—এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের পর ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইসাম আর আমি যখন ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, তখনই তামিম ইকবালের ফোনটা এল। ইসামের কথাই শুধু শুনতে পাচ্ছিলাম। ‘কী বলছেন! আসলেই? সত্যি?’ এই–জাতীয় কিছু। ফোনটা রেখে ইসাম বললেন, ‘তামিম ফোন করে বলল, টিমের বাস নাকি মসজিদের সামনে আটকা পড়ে আছে। মসজিদের ভেতরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।’

দুজনেরই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটা হলো, নিউজিল্যান্ডে কখনো সন্ত্রাসী হামলা হয় নাকি! ডেইলি স্টার–এর মাজহারউদ্দিনও পাশেই দাঁড়ানো। একটু পরে আবারও তামিমের ফোন। এবার ইসামের পাশে দাঁড়িয়ে তামিমের কথাও শুনতে পেলাম। আতঙ্কগ্রস্ত এক কণ্ঠ, ‘পুলিশকে খবর দেন প্লিজ।’

ইসাম হঠাৎই সোজা মেইন রোডের দিকে হাঁটতে শুরু করল। পেছন পেছন মাজহারও। আমি বললাম, ‘মাঠে কাউকে আগে বলি, পুলিশে খবর দিতে।’ কিন্তু ইসাম আর মাজহার ততক্ষণে বেশ খানিকটা দূরে চলে গেছে। জানি না কী ভেবে আমি ওদের পিছু নিলাম। মাঠ থেকে গাড়ি নিয়ে বেরোতে থাকা এক মেয়ে আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি, আমাদের নিয়ে যেতে পারেন কি না।’ তামিম ফোন করে কী বলেছেন, ইসাম তাঁকে সেটি বললেন।

গাড়িতে ওঠার পর আমার মাথায় একই সঙ্গে যুক্তি আর আবেগ কাজ করতে শুরু করল। আবেগ ইসাম আর মাজহারের মতো আমাকেও হ্যাগলি ওভালের কাছেই আল নুর মসজিদের দিকে ছুটে যেতে বলছে। আর যুক্তি বারবার আমাকে দিয়ে বলাচ্ছে, ‘ইসাম, আমরা কোথায় যাচ্ছি? কী ভেবে যাচ্ছি? ওখানে গিয়ে কী করতে পারব? এর চেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া ভালো না!’ মিনিট তিনেকের মধ্যেই গাড়িটা মসজিদে যাওয়ার রাস্তার সামনে গিয়ে আটকে গেল। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। আমরা নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। ইসাম সামনে, পেছনে মাজহার, আরেকটু পেছনে আমি। রাস্তায় শুধু পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স। আমার একটু ভয় করতে লাগল। সেই ভয়টা আরও বাড়ল, যখন দেখলাম রাস্তার পাশেই একটা মোটেলের প্রবেশপথে রক্তাক্ত একজন মানুষ শুয়ে আছেন। দুই–তিনজন প্যারামেডিক তাঁর পাশে। দেহে প্রাণ আছে বলে মনে হচ্ছে না। আমার দুই পা যেন কেউ পেরেক দিয়ে রাস্তায় আটকে দিল। আমি আবারও বললাম, ‘আমরা কিন্তু বোকামি করছি। বড় বিপদ হতে পারে।’ ইসাম আর মাজহার ঘোরে পাওয়া মানুষের মতো এগিয়েই যাচ্ছে। আমিও আবার তাঁদের পিছু নিলাম। আরেকটু এগোতেই দেখি, রাস্তার মাঝখান দিয়ে আমাদের দিকে হেঁটে আসছেন রক্তাক্ত এক তরুণ। শরীরের বাঁ দিকের ওপরের অংশে মনে হয় গুলি লেগেছে। শরীরটা টেনে টেনে এগিয়ে আসছেন। তাঁকে পেরোনোর পরই আরেক তরুণকে দেখলাম, রাস্তার পাশে লাইটপোস্টে ভর দিয়ে মোবাইলে কার সঙ্গে যেন কথা বলতে বলতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।

হঠাৎই একটু দূরে দেখতে পেলাম বাংলাদেশ দলের বাসটা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তার অন্য পাশে ক্রিকেটারদেরও। রাস্তাটা পেরিয়ে তাঁদের কাছে যেতে যেতে শুনলাম, কে যেন বলছেন, ‘কেউ দৌড় দিয়ো না। জোরে হাঁটো, কিন্তু দৌড় দিয়ো না।’ আমরা তিনজন ওদের সঙ্গে মিশে গিয়ে উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। ক্রিকেটারদের সবার চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। তামিম ইকবাল বললেন, ‘যা দেখেছি, কল্পনাও করতে পারবেন না। বাসের সামনে রাস্তায় তিন–চারটা লাশ পড়ে আছে।’

রাস্তার ডান পাশেই বিশাল হ্যাগলি পার্ক। সেই পার্কেরই শেষ অংশে হ্যাগলি ওভাল মাঠ। হাঁটু উচ্চতার রেলিং টপকে সবাই পার্কে ঢুকে শর্টকাট রাস্তা দিয়ে সেটির উদ্দেশে হাঁটছি। হঠাৎই মেহেদী হাসান মিরাজ আমার হাত ধরে বললেন, ‘আপনাদের জন্য আজ আমরা বেঁচে গেছি। রিয়াদ ভাইয়ের প্রেস কনফারেন্সের কারণেই মসজিদে যেতে আমাদের একটু দেরি হয়েছে। আমাদের দেড়টার মধ্যেই ওখানে পৌঁছানোর কথা ছিল।’

মুশফিকুর রহিম কিছুতেই কান্না থামাতে পারছেন না। তাঁকে জড়িয়ে ধরে হাঁটছেন ইসাম। তামিম বললেন, ‘আমরা আর পাঁচ মিনিট আগে পৌঁছালেই মসজিদে ঢুকে যেতাম। হয়তো সবাই শেষও হয়ে যেতাম।’ ক্রিকেটাররা যে যাঁর মতো করে কথা বলছেন। চোখমুখ দেখে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে খারাপ লাগছে। তামিম নিজে থেকেই বলছেন, ‘টেস্ট ম্যাচ হলে হোক, আমি কালই দেশে ফিরে যাব।’ ভিডিও অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরনের পাশে হাঁটতে হাঁটতে পুরো ঘটনা বর্ণনা করছেন। সেটি এ রকম—বাংলাদেশ দলের বাসটা যখন মসজিদ থেকে সামান্য দূরে, তখনই রক্তাক্ত এক নারী সবার চোখের সামনে রাস্তায় ঢলে পড়েন। পাশের গাড়ি থেকে ভয়ার্ত কণ্ঠে আরেকজন নারী বলেন, ‘তোমরা সামনে যেও না। গোলাগুলি হচ্ছে। আমার গাড়িতেও গুলি লেগেছে।’

তারপরও ড্রাইভার নাকি বাসটা আরও একটু সামনে নিয়ে যান। যাওয়ার পর স্থবির হয়ে বসে থাকেন। এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে পূর্ব পরিচয় নেই বলেই হয়তো তাঁর অমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। বাসের মধ্যে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আতঙ্কে অস্থির হয়ে ওঠেন ক্রিকেটাররা। সবাই মাথা নিচু করে বসে আছেন। কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করেছেন। একসময় তামিম ইকবালই বলেন, ‘চলো, আমরা সবাই নেমে মাঠের দিকে হাঁটতে শুরু করি।’

সেটিতেও বড় বিপদ হতে পারত। ভাগ্য ভালো যে হয়নি। মাঠে ঢুকে ড্রেসিংরুমে ঢোকার পর সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলেন কিছুক্ষণ। কে যেন বললেন, ‘গুনে দেখেন তো আমরা সবাই ফিরে এসেছি কি না।’ লিটন আর নাঈম হোটেলে ছিলেন, পরে যাঁদের সরাসরি মাঠে গিয়ে অনুশীলনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। ফোন করে তাঁদের হোটেল থেকে বেরোতে নিষেধ করে দিলেন খালেদ মাসুদ। আমরা তিন সাংবাদিকও ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে গিয়ে ঢুকেছি। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে আমাদের হ্যাডলি প্যাভিলিয়নে নিয়ে যাওয়া হলো। মাঠকর্মী, টিভি ক্রু, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ও নিরাপত্তাকর্মী মিলিয়ে বড় সেই কক্ষটিও গিজগিজ করছে মানুষে। দোতলার সেই কক্ষ থেকে নিচে নামার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে এক নিরাপত্তাকর্মী। সিঁড়িতে পা রাখতে গেলেও যিনি সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন। নিরাপত্তা সংস্থার এক কর্মকর্তা কিছুক্ষণ পরপর শহরের পরিস্থিতির বর্ণনা দিচ্ছেন আর এভাবেই ঘরবন্দী থাকার সময়টা বাড়িয়ে নিচ্ছেন। আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে, যা দেখে তামিম শিউরে উঠেছিলেন, আসল ঘটনার তুলনায় সেটি তেমন কিছু নয়! আস্তে আস্তে জানতে পারলাম, দুই মসজিদে হামলায় নিহত হয়েছেন ৪৯ জন। আহত আরও ৪৮ জন। স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে মসজিদে নামাজ শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে হামলাটি হয়।

এর মধ্যেই খবর পেলাম, বাংলাদেশ দলকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা তখনো ওই ঘরেই বন্দী। সারা দিন কারও খাওয়া নেই, কিন্তু তা নিয়ে কারও কোনো হেলদোল নেই। ক্ষুধাও যেন পালিয়েছে এই নৃশংসতার কথা শুনে। শুধু শুনে নয়, মোবাইলে মোবাইলে তখন মসজিদের ভেতরে হত্যাযজ্ঞের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। মূল হোতা অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্টের নিজের করা ভিডিওটাও। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সবার মুক্তি মিলল। সবাইকে যাঁর যাঁর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা বলার পর জানিয়ে দিলেন, কোন কোন রাস্তা বন্ধ। বিশাল এক তালিকা। যেটির মধ্যে আমার মোটেলে আসার রাস্তাও আছে। ঘটনাস্থল থেকে যে সেটি খুব বেশি দূরে নয়। আমরা তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, টিমের হোটেলে যাব। ক্রিকেটারদের সর্বশেষ অবস্থাটাও জানা যাবে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের এক নারী কর্মকর্তা তিনটি আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করে সবাইকে সেখানে পৌঁছে দিলেন। এমনিতে নিউজিল্যান্ডে টিম হোটেলে বাড়তি নিরাপত্তা বলে কিছু থাকে না। আজ সেখানে পৌঁছে দেখলাম, বাইরে পুলিশের গাড়ি। কালো পোশাক পরা নিরাপত্তাকর্মীরাও আছেন। বাইরের কাউকে হোটেলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। খালেদ মাসুদ এসে আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন। সবাইকে টিম রুমে নিয়ে গিয়ে পুরো ঘটনার আনুষ্ঠানিক একটা বর্ণনাও দিলেন। তাঁর সৌজন্যেই প্রায় ১২ ঘণ্টা পর পেটে কিছু পড়ল।

ক্রিকেটারদের অনেকের সঙ্গেই দেখা হলো। সবার মুখে মুখে একটাই আলোচনা, তবে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক লাগছে তাঁদের। এবার মোটেলে ফিরতে হয়, কিন্তু ফিরব কীভাবে? ফেরার রাস্তা তো এখনো বন্ধ। এবারই এসে পরিচয় হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ মাহফুজুর রহমান তন্ময় একটা ট্যাক্সি পাঠালেন। সেটিতে করে আমি আর ইসাম তাঁর বাড়িতে গেলাম। যেটি মোটেলের খুব কাছেই। সেখানেই ঘণ্টা দুয়েক কাটল। তন্ময় একের পর একজনকে ফোন করছেন আর একটার পর একটা দুঃসংবাদ পাচ্ছেন। ৩৫টির মতো পরিবার, সব মিলিয়ে শ দেড়েক বাঙালির বাস ক্রাইস্টচার্চে। সবাই সবাইকে চেনেন। তন্ময়ের পরিচিত কেউ দুজন মারা গেছেন। মাথায়, পিঠে গুলি খেয়ে একজন আছেন আইসিইউতে। তন্ময় কথা বলছেন আর হাউমাউ করে কাঁদছেন। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর সেই কান্না মিলিয়ে দুঃস্বপ্নের এক দিন যেন আরও বেশি ভয়াল হয়ে উঠছে।

রাত সাড়ে নয়টার দিকে তন্ময় মোটেলে পৌঁছে দেওয়ার পর ইসাম তাঁকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন। আমি চলে গেলাম আমার রুমে। শূন্য রুমে ঢুকে আমার হঠাৎই খুব কান্না পেতে লাগল।

আরও পড়ুন: