তামিমদের নিয়ে দুশ্চিন্তা ভুলে সাবিনাদের আজ চ্যালেঞ্জ নেওয়ার দিন

বিরাটনগরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা। ছবি: বাফুফে
বিরাটনগরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা। ছবি: বাফুফে

বিরাটনগরের জেনিয়াল হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে রাখা একগাদা স্থানীয় পত্রিকা। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে নৃশংস হামলার ঘটনা সবগুলো পত্রিকার শিরোনাম। দি কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে-‘নিউজিল্যান্ড মসকুই শুটিং লিভ, ফোরটি নাইন ডেড।’ সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরার কথাও বড় করে লিখেছে পত্রিকাটি। নেপালের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা কান্তিপুরেও বড় শিরোনামে লিখেছে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। জেনিয়াল হোটেলেই আছে বাংলাদেশ দল। এমন ঘটনা শুনে কাল ভীষণ মন খারাপ ছিল মেয়েদের। তবে মন শক্তও করতে হয়েছে। সাফে নেপালের বিপক্ষে যে আজ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।

নেপালে মেয়েদের নিরাপত্তায় এতটুকু ঘাটতি নেই। গতকাল জুট মিল মাঠে অনুশীলন করেছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে। অনুশীলনের সময় আশপাশে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন না মোটেও, ‘বাংলাদেশের তিনটি দল দেশের বাইরে আছে। ক্রিকেট দল নিউজিল্যান্ডে। পুরুষ দল কাতারে ও মেয়েদের দল নিয়ে আমরা নেপালে। নিউজিল্যান্ডে যা হয়েছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ক্রিকেটাররা বেঁচে গেছেন। তবে এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়েছে আয়োজকেরা। আমরা কোনো অবস্থায় কারও অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারছি না। সবকিছু মিলিয়ে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

অধিনায়ক সাবিনা খাতুনও সন্তুষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে, ‘এখানে আমরা সবাই ভালো আছি। আমাদের সব রকম নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের ওই ঘটনা শুনে খুব খারাপ লাগছিল। এখন ওরা দেশে ফিরে আসছে শুনে ভালো লাগছে।’

তবে এসব ভুলে সাবিনাদের আজ মনোযোগ দিতে হবে খেলার মাঠে। দলে একটাই পরিবর্তন দেখা যাবে আজ। মিডফিল্ডার সানজিদা খাতুনের বদলে দলে ঢুকবেন নীলুফার ইয়াসমিন নীলা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ আজ খেলবে শিরোপা প্রত্যাশী নেপালের সঙ্গে। ভুটানের বিপক্ষে জিতে আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে দুই দল। আজকের ম্যাচটি তাই যতই আনুষ্ঠানিকতার হোক না কেন, পরোক্ষে বাংলাদেশ চাইছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে নেপালের প্রয়োজন ড্র, বাংলাদেশের জয়ের বিকল্প নেই। বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩-১৫ মিনিটে শুরু হবে খেলা।

নেপালের কোচ হরি খাড়কা জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার। প্রায় এক বছর হলো নেপালের মেয়েদের দায়িত্ব নিয়েছেন। ক্যারিয়ারের সবটুকু অভিজ্ঞতা উজাড় করে নেপালকে এনে দিতে চান প্রথম সাফ শিরোপা। এর আগে তিনবার ফাইনালে ওঠা নেপাল সব কটিতেই হেরেছিল ভারতের কাছে। এবার তাই প্রতিটি ম্যাচই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ‘আমরা মোটেও বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছি না। কাল আমরা অলআউট ফুটবল খেলব। আমরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’

একই লক্ষ্য বাংলাদেশেরও। কারণ ‘বি’ গ্রুপে মালদ্বীপ ৬-০ গোলে হেরেছে ভারতের কাছে। কাল শ্রীলঙ্কার কাছে ২-০ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে মালদ্বীপ। টুর্নামেন্টের চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে সেমিফাইনালে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে কেউই তাই পেতে চায় না।

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত সাফে দুই বার মুখোমুখি হয়েছে নেপালের। দুবারই হেরেছে। ২০১০ কক্সবাজার সাফে সেমিফাইনালে ৩-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। আর ২০১৪ ইসলামাবাদ সাফে ১-০ গোলে হেরেছিল। তবে এবার বাংলাদেশ জিততে মরিয়া। গত নভেম্বরে মিয়ানমারে অলিম্পিক ফুটবলের বাছাইপর্বে সর্বশেষ মুখোমুখিতে নেপালের সঙ্গে নাটকীয়ভাবে ড্র করে বাংলাদেশ।

নেপালের অনুশীলনে গিয়ে দেখা মিলল সেই পুরোনো সাবিত্রা ভান্ডারি, নিরু থাপা, মানজালি কুমারীদের সঙ্গে। টানা কয়েক বছর জাতীয় দলে খেলছে এই মহিলা ফুটবলাররা। যাদের গড় বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। অথচ বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ মেয়েই অনূর্ধ্ব-১৬ দলের। তাই বলা যায়, লড়াইটা হবে বয়সীদের সঙ্গে তারুণ্যের। চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেও বাংলাদেশ। মেয়েদের জন্য আশার জায়গা, টানা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে একটু একটু করে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছে মারিয়া মান্দারা। এটাই কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের সবচেয়ে ভরসার জায়গা, ‘এটা সত্যি আমরা পিছিয়ে আছি বয়স আর অভিজ্ঞতায়। কিন্তু আমার মেয়েদের ফিটনেস অনেক ভালো। এখন শুধু তাদের মাঠে গিয়ে শতভাগের চেয়ে বেশি দিতে হবে। তাহলে আমরাই জিতব।’

অনুশীলনে চোট পাওয়া কৃষ্ণা রানি সরকারের পায়ে ব্যথা নেই। কাল বরফ নিলেও দৌড়েছেন একা একা। তবে কোচ তাকে আজও বিশ্রামে রাখার পক্ষে। নেপাল খেলবে ঘরের মাঠে। স্বাগতিকদের এই চ্যালেঞ্জটা নিতে মুখিয়ে মেয়েরা, ‘ভুটানে এর আগে দুটো টুর্নামেন্ট খেলেছি। আমাদের বিপক্ষে তখন দর্শক ছিল। সেখানে আমরা জিতেছি। সর্বশেষ মিয়ানমারেও ভরা গ্যালারি ছিল। সেখানে ৯০ মিনিট সবকিছুর বিপক্ষে খেলে পুরো মনোবল ধরে রেখে জিতেছি। তাই আমি মনে করি এই বিষয়গুলো মেয়েরা আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠছে।’

সব মিলিয়ে উপভোগ্য এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকবে বাংলাদেশের মেয়েরা।