নেপালের 'রোনালদো' হারিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে

নেপালের সাবিত্রাকে আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ। ছবি: গোল নেপাল
নেপালের সাবিত্রাকে আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ। ছবি: গোল নেপাল
>বাংলাদেশকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে নেপাল

দুপুর থেকেই উত্তাপটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। আজ নেপালের সাপ্তাহিক ছুটি। ঘরের মেয়েদের খেলা দেখতে তাই দল বেঁধে দর্শকেরা ছুটে এসেছিলেন বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গশালায়। উৎসবের বিকেলটা কীভাবে রাঙিয়ে রাখতে হয়, সেটা দেখিয়ে দিলেন সাবিত্রা ভান্ডারি, মঞ্জলি কুমারীরা। মেয়েদের সাফের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩-০ গোলে হারিয়ে হিমালয়কন্যারা আনন্দে নেচেছেন। নেপালের একটি গোল করেছেন সাবিত্রা ভান্ডারি, অন্যটি মঞ্জলি কুমারী। আরেকটি গোল আত্মঘাতী। টুর্নামেন্টে দুই জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নেপাল, রানার্সআপ বাংলাদেশ। 

গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে বাংলাদেশের সামনে আজ জয়ের বিকল্প ছিল না। নেপালকে শুধু ড্র করলেই চলত। কিন্তু কোথায় ড্র? বাংলাদেশ নেপালের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। আরও স্পষ্ট করে বললে নেপালের স্ট্রাইকার সাবিত্রা ভান্ডারির কাছেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। যেমন গতিময় স্ট্রাইকার, তেমন তাঁর স্কিল। নিজে একটি দুর্দান্ত গোল করেছেন, আরেকটি গোল করিয়েছেন। সাবিত্রা ঘরোয়া ফুটবলে খেলেন নেপালের আর্মড পুলিশ ফোর্স ক্লাবে। ২০১৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে হয়েছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা মহিলা স্ট্রাইকার। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সাবিত্রার প্রিয় খেলোয়াড়। গোল করে উদ্‌যাপনও করেছেন ‘রোনালদো স্টাইলে’। সাবিত্রাকে আটকাতেই সারাক্ষণ হিমশিম খেয়েছে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। যখনই বল নিয়ে বক্সে ঢুকেছেন সাবিত্রা, আতঙ্কে ভুগেছেন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। যদিও তিন গোলের দুটিই বাংলাদেশ হজম করেছে গোলকিপার রুপনা চাকমার হাস্যকর ভুলে।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ ফুটবলার অনূর্ধ্ব-১৬ দলের। সেই হিসেবে তারুণ্যের সঙ্গে চ্যালেঞ্জটা ছিল বয়স্ক নেপালিদের। সেই চ্যালেঞ্জে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। রক্ষণভাগে আঁখি খাতুন যা একটু খেলেছেন, কিন্তু মাসুরার ভুলে বাংলাদেশ খেয়েছে প্রথম গোল। বয়স আর অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ ভালো খেলেছে শুরুর পাঁচ মিনিট। কিন্তু এরপর থেকে মাঝমাঠ, ফরোয়ার্ড লাইনে কেউই বল বেশিক্ষণ দখলে রাখতে পারেননি। মিস পাসও ছিল।

অতীতে নেপালের সঙ্গে কখনোই জিততে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয় দল। এসএ গেমস, সাফ ও অলিম্পিক বাছাই মিলিয়ে এর আগে ৫ বারের মুখোমুখিতে ৪ বার জিতেছিল নেপাল। শুধু গত নভেম্বরে ড্র করেছিল বাংলাদেশ, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্বের ম্যাচে। সর্বশেষ ম্যাচের সেই সুখস্মৃতি নিয়েই আজ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ফিটনেস, স্ট্যামিনা, অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ ম্যাচে কখনোই ফিরতে পারেনি।

ম্যাচের ৫ মিনিটেই ভান্ডারির আক্রমণ। কিন্তু গোলরক্ষক রুপনাকে একা পেয়েও গোল দিতে পারেননি। বলটা শেষ পর্যন্ত ক্লিয়ার করেন শিউলি আজিম। কিন্তু পরের মিনিটে আর আটকাতে পারেননি ভান্ডারিকে। জটলায় নেওয়া ভান্ডারির শট হেডে ক্লিয়ার করতে যান মাসুরা। গোলরক্ষক লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসায় বল ঢোকে জালে। ২৩ মিনিটে আবারও সাবিত্রার আক্রমণ, বল নিয়ে বক্সে ঢুকেই রুপনাকে ফাঁকি দিয়ে কোনাকুনি শটে করেন নিজের প্রথম গোল, যেটি সাবিত্রার ২৪তম আন্তর্জাতিক গোল। আর ২৭ মিনিটে সাবিত্রার ক্রসে দারুণ প্লেসিংয়ে মঞ্জলি করেন স্কোর ৩-০।

৫৮ মিনিটে সাবিত্রার নিশ্চিত আক্রমণ গোললাইন সেভ করেন ডিফেন্ডার মাসুরা। বাকি সময়ে রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত থেকেছেন আঁখি খাতুনেরা। শুধু যোগ হওয়া সময়ে সিরাত জাহান স্বপ্নার শট ক্রসবারে লেগে ফেরে।