হার ভুলে সাবিনাদের চোখ সেমিফাইনালে

টিম হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে দিয়ে সকালের নাশতার জন্য ডাইনিংয়ে যাচ্ছিলেন বাফুফের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিকাল ডিরেক্টর পল স্মলি। শুভ সকাল বলতেই, সোফায় বসে পড়লেন। হাতে ধরা একটা নোটখাতা।

‘রাতে কেমন ঘুম হয়েছে?’ প্রশ্নটা শুনে একটু শুকনো হাসি দিয়ে বললেন, ‘ভালো হয়নি।’ মেয়েদের সাফের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নেপালকে হারাতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিমালয় জয় করা হয়নি সাবিনাদের। নেপালের কাছে পঞ্চমবারের মতো হেরেছে জাতীয় দল। পল স্মলির প্রশান্তির ঘুম না হওয়াটাই স্বাভাবিক।

তবে নেপালের হারটা এখন বাংলাদেশের জন্য অতীত। পেছনের ব্যর্থতা ভুলে সামনে তাকাতে চান পল, ‘আমি মনে করি, সবাই সন্তুষ্ট আমাদের খেলায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের মেয়েরা সত্যি অসাধারণ খেলছে। এখানে ভুটানের সঙ্গে জিতেছি। মেয়েরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছে। নেপালের সঙ্গে প্রথম ২৫ মিনিট মেয়েরা ভালো খেলেছে। শুধু কিছু ছোটখাটো ভুল করেছে। এ জন্যই আমাদের এমন হার। এখন আমাদের সব মনোযোগ সেমিফাইনালে।’ ২০ মার্চ যেখানে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত।

কাল টিম হোটেলে ফিরেই ব্যর্থতা নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মেয়েদের ওপর কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। বরং তাঁদের সারাক্ষণ উজ্জীবিত করেছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও পল স্মলি। শুধু কোথায় কোথায় ভুল করেছেন মেয়েরা, সেগুলো হাতেকলমে ধরে দেখিয়েছেন। আজ বিকেলে ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। শহীদ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি দেখতে যাবেন কোচ গোলাম রব্বানী ও পল স্মলি। তবে মেয়েদের কেউ আজ হোটেল থেকে বের হবেন না। কোনো অনুশীলন রাখেননি কোচ। আজ পুরো বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। শুধু টিম হোটেলের সামনে সকালের নাশতার পর হালকা স্ট্রেচিং করেছেন সাবিনা, মারিয়া মান্দারা। তখন তাঁদের চেহারায় ছিল না কোনো বিষণ্নতার ছাপ।

হালকা স্ট্রেচিং করেছেন সাবিনা, মারিয়া মান্দারা। ছবি: প্রথম আলো
হালকা স্ট্রেচিং করেছেন সাবিনা, মারিয়া মান্দারা। ছবি: প্রথম আলো

দলের জন্য সুসংবাদ, অনুশীলনে চোট পাওয়া কৃষ্ণা রানী সরকার এখন পুরো ফিট। কোচ ছোটন নিশ্চিত করেছেন, ২০ মার্চের সেমিফাইনালে খেলবেন টাঙ্গাইলের কিশোরী। প্রতিপক্ষ ভারত বা শ্রীলঙ্কা যেই আসুক না কেন, জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কোচ, ‘ভারতকেই আমাদের পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে যেই আসুক আমাদের খেলতে হবে। আমি আশাবাদী। আমরা নিশ্চয় পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াব। কারণ, মেয়েদের এমন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে লড়াই করে জেতার অভিজ্ঞতা আছে। সেমিফাইনাল ম্যাচ, এখানে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।’

স্বাগতিকদের মাঠে হচ্ছে সাফ। এ জন্য স্বাভাবিকভাবেই কাল দর্শক ছিল নেপালের পক্ষে। এ ছাড়া কাল মাঠে ছিল প্রচণ্ড বাতাস। কোচ চেয়েছিলেন টসে জিতলে বাতাসের অনুকূলের পোস্টে দাঁড়াবেন মেয়েরা। কিন্তু টসে হেরে প্রথমার্ধে খেলতে হয়েছে বাতাসের প্রতিকূলে। কোচ আজ হোটেলের সোফায় বসে বলছিলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম টসে জিততে। কিন্তু সেটা হয়নি। প্রথমার্ধে প্রচণ্ড বাতাস ছিল। বল একদিকে মারলে অন্যদিকে চলে যাচ্ছিল। বলের ফ্লাইট মিস করার এটাও একটা কারণ ছিল।’

নেপালের সবচেয়ে ভয়ংকর ফুটবলার সাবিত্রা ভান্ডারি। বাংলাদেশের রক্ষণ তছনছ করে বারবার বক্সে ঢুকেছেন নেপাল আর্মড পুলিশ দলের স্ট্রাইকার। গত নভেম্বরে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্বেও দুর্দান্ত খেলেছিলেন। ওই ম্যাচে মিসরাত জাহান মৌসুমী পাহারায় ছিলেন সাবিত্রার। কিন্তু কাল শিউলি আজিমের ওপর দায়িত্ব থাকলেও ব্যর্থ হয়েছেন। সেই সুযোগেই গোল দুটি হয়েছে।

আত্মঘাতী গোলই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন কোচ, ‘একটা আন্ডারডগ দল যদি প্রথম ১৫ মিনিটে গোল হজম করে তাহলে সেই দল এমনিতেই ভেঙে পড়ে। আমাদের মেয়েদেরও সেটাই হয়েছিল। ওরা এখনো ততটা পরিণত ফুটবলার হয়ে ওঠেনি।’

পেছনের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে শুধুই সামনে চোখ মেয়েদের। সবাই এটাও বুঝতে পেরেছেন, একটি ম্যাচ জিতলেই দলের চেহারা বদলে যাবে। মারিয়া মান্দাদের সেই জয়টা দরকার সেমিফাইনালেই।