যেভাবে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

ভারতের সেরা অস্ত্রকেই ভোতা বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ছবি: এএফপি
ভারতের সেরা অস্ত্রকেই ভোতা বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ছবি: এএফপি

নিজেদের মাঠে টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি—সব সংস্করণেই ভরাডুবি অস্ট্রেলিয়ার। ওদিকে অস্ট্রেলিয়ায় ইতিহাস গড়ে নিউজিল্যান্ডেও নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছিল কোহলিরা। মাটিতে যেন পা পড়ছিল না ভারতীয় দলের। আর সেটি খুবই স্বাভাবিক। জয়ের ধারাবাহিকতা এতটাই ছিল যে দলটা যে হারতে পারে, সেটিই মাথা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল সবার। সে কারণেই নাজুক অবস্থায় ভারত সফরে আসা অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে তাই অবজ্ঞা করতে বাধেনি সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকা ভারতীয় চ্যানেলের। টি-টোয়েন্টি সিরিজের জয়ের পরও ওয়ানডে সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে খুব একটা পাত্তা দেওয়া হচ্ছিল না। সেই অস্ট্রেলিয়াই কিনা ওয়ানডে সিরিজ জিতে গেল। সেটাও আবার ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যাওয়ার পরও! কীভাবে সম্ভব হলো?

এ প্রশ্নের অনেক উত্তর হতে পারে। উসমান খাজার দুর্দান্ত ফর্ম, ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেতে এ সিরিজকেই পিটার হ্যান্ডসকম্বের বেছে নেওয়া , অ্যাশলি টার্নারের অবিশ্বাস্য ইনিংস। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ভারতের সেরা বোলারের সেরা হতে না পারা। বিশ্বের এক নম্বর ওয়ানডে বোলার জসপ্রীত বুমরাকে আটকে দিয়েই ভারতে এসে সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়েছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের পরিকল্পনাটা ছিল খুব সোজা। ইনিংসের মাঝপথে স্পিনাররা প্রতিপক্ষকে আটকে রাখবে আর ম্যাচের শেষভাগে রান তোলায় মরিয়া ব্যাটসম্যানদের নিখুঁত লাইন লেংথ ও গতিতে নাস্তানাবুদ করবেন বুমরা। ২০১৮ ভারতের পেস বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন বুমরা। ১৬.৬৩ গড়ে ২২ উইকেট প্রাপ্তি তাঁকে ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায় তুলে দিয়েছে। আরও অস্ট্রেলিয়া সফরে ওয়ানডে সিরিজে বিশ্রাম দিয়ে তাঁকে তরতাজা রেখেছিল ভারত দল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সে পরিকল্পনা সফল হতে দেয়নি।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বুমরার গড় আগেও খুব একটা ভালো ছিল না (৩১.৮৫)। শুধু ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে এর চেয়ে বাজে গড় তাঁর। কিন্তু সেটা এবারের সিরিজ শেষে আরও বাজে হয়েছে। ৫ ম্যাচে ৭ উইকেট পেয়েছেন, কিন্তু সেটা এসেছে ৩৪.৮৫ গড়ে। এবং এক একটি উইকেট পেতে ৪১.৮ বল দরকার হয়েছে তাঁর। একজন স্ট্রাইক বোলারের কাছ থেকে নিশ্চয় এর চেয়ে আরও ভালো কিছু আশা করেছিল তাঁর দল।

বুমরার ইয়র্কার দেওয়ার ক্ষমতা ও গতির কারণে তাঁর ওভার কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় সাধারণত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এ সফরে বুমরার জন্য একদম ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। মাঝের ওভারগুলোতে সে কাজটা করলেও প্রথম পাওয়ার প্লে ও ডেথ ওভারে তাঁর ওপর চড়াও হয়েছে অস্ট্রেলিয়া দল। সফরের প্রথম ম্যাচ (টি-টোয়েন্টিতে) সেটা না করাতেই বিপদে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বুমরার ১৬ রানে ৩ উইকেটের স্পেলে ১২৭ তাড়া করতে নেমেও হারতে বসেছিল সফরকারীরা। দুই পেসার মিলে শেষ ওভারে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে সেদিন জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আর সে ভুল করেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ৪ ওভারে ৪৪ রান দরকার এমন অবস্থায় বুমরাকে পেয়ে খোলস বন্ধী হননি ম্যাক্সওয়েল। বরং ১২ রান তুলে প্রয়োজনের বেশি রানই নিয়েছেন, ‘আমি বুমরাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ৪৩/৪৪ রান দরকার ছিল, এমন অবস্থায় সে এল। এটা গুরুত্বপূর্ণ ওভার ছিল। যদি মাত্র ৪/৫ রান হতো, তাহলে লক্ষ্যটা ওভারে ১৩ রান হয়ে যেত। আর ওর মাত্র ছয়টা ভালো ইয়র্কারই সেটাকে ১৮-১৯ (ওভারপ্রতি) করে ফেলত। যেটা শেষ দুই ওভারে তোলা খুব কঠিন। আমি তাই আশা করছিলাম ও দুই একটা বলের লাইনে ভুল করবে এবং সে সুযোগ নিতে চেয়েছি।’

টি-টোয়েন্টি সিরিজের এ সাফল্য ওয়ানডে সিরিজেও ধরে রাখার চেষ্টা করে তারা। প্রথম ওয়ানডেতে বুমরার বলে ১০টি চার মেরেছে অস্ট্রেলিয়া। দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে খরচে ছিলেন বুমরা। কিন্তু অন্য বোলারদের বিপক্ষে ভালো না করায় হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিজেদের পরিকল্পনা থেকে সরে যাওয়ার ভুল করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৮ বলে ২১ রান দরকার এমন অবস্থায় স্টয়নিস বুমরাকে সাবধান হয়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন। মাত্র এক রান এসেছিল সে ওভারে। বুমরা শেষ ৩ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিলেন। শেষ ওভারে ১১ রান নেওয়ার চাপ নিতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।

এ ভুল আর পরের তিন ম্যাচে করেনি অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় ওয়ানডেতে বুমরার শেষ দুই ওভারে ১৭ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া, পরের ওয়ানডেতে সাড়ে তিন শর বেশি তাড়া করার পথে বুমরার প্রায় ইয়র্কারেও ছক্কা হাঁকিয়েছেন টার্নার। বুমরার শেষ ১১ বলে এসেছিল ১৯ রান। আর শেষ ওয়ানডেতে বুমরার ২ ওভারে ২৫ রান দিয়েছেন বুমরা। অথচ প্রথম ৮ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়েছিলেন এই পেসার। চতুর্থ ওয়ানডেতেই বুমরার ব্যাপারে পরিকল্পনাটা জানিয়ে দিয়েছেন হ্যান্ডসকম্ব, ‘বুমরাকে যতটা সম্ভব শ্রদ্ধা দেখাচ্ছি। শুধু ভালো শট খেলার চেষ্টা করছি। আমি টার্নারের সঙ্গে ছিলাম না শেষ দিকে কিন্তু বুমরাকে দারুণ খেলেছি। আমরা ওর বলে জোরে শট খেলার চেষ্টা করেছি।’

বিশ্বকাপে বুমরার বিপক্ষে কীভাবে খেলতে হবে, সে টোটকা কি অন্য দলগুলোকেও দিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া?