মেসি-রোনালদোর চেয়ে জোরে দৌড়ান বাংলাদেশের ফুটবলার

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গতির ফুটবলার এখন আরিফ। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গতির ফুটবলার এখন আরিফ। ফাইল ছবি
>বাংলাদেশের ফুটবলারদের গতি নেই, এমন অভিযোগ শোনা যায় মাঝেমধ্যেই। কিন্তু জাতীয় যুব দল ও আরামবাগের উইঙ্গার আরিফ ইসলামের গতির পরিসংখ্যান চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো।

‘আরামবাগে একজন উসাইন বোল্ট ফুটবল খেলেন। আসুন সবাই মিলে তাঁর গতি দেখে নিই।’

স্বাধীনতা কাপে সাইফ স্পোর্টিং ও আরামবাগের মধ্যকার ম্যাচের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনটি ব্যবহার করেছিলেন এক ফুটবলপ্রেমী। মাঝমাঠ থেকে দ্রুতগতিতে উঠে থ্রু বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বক্সে প্রবেশ করে সতীর্থকে দিয়ে গোল করালেন আরামবাগের তরুণ ফুটবলার আরিফ ইসলাম। এমন মুভে গোল করানো দেখা যায় অহরহ। কিন্তু তাঁর গতিতে মুগ্ধ না হয়ে পারেননি কেউ। এমনি এমনি তো আর বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টের সঙ্গে তুলনা করা হয়নি।

তুলনাটা বাড়াবাড়ি। গতিতে বিশ্বের দ্রুততম মানবের আশপাশেও নেই আরামবাগের এই উইঙ্গার। কিন্তু দেশের এই ফুটবলার বিশ্বের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে বেশি গতিতে দৌড়ানোর সামর্থ্য রাখেন। তথ্যে কোনো ভুল নেই। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস প্রযুক্তির বিশ্লেষণেই বেরিয়ে এসেছে গতির পরিসংখ্যান এবং সে অনুয়ায়ী ২০ বছর বয়সী এই টগবগে তরুণই বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুততম ফুটবলার। এর অর্থ এই নয় যে মেসি-রোনালদোর ফুটবলসত্তার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে আরিফের। বিষয়টা পেশাদার ফুটবলারদের গতির লড়াই।

নিজের মনকেই প্রশ্ন করুন, বাংলাদেশের এক ফুটবলারের সর্বোচ্চ গতি কেমন হতে পারে? পড়ুন ঘণ্টায় ৩৫.৮৫৬ কিলোমিটার। সেকেন্ডে ৯.৯৬ মিটার (চলতি মৌসুমের রেকর্ড অনুযায়ী)। হ্যাঁ জাতীয় যুবদলের উইঙ্গার আরিফ ইসলামের সর্বোচ্চ গতিতে দৌড়ানোর পরিসংখ্যান। তথ্যটি সংরক্ষিত আছে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্সধারী কোচ মারুফুল হকের কম্পিউটারে।

আরামবাগের কোচের ভাষায়, ‘আরিফ অনেক জোরে দৌড়াতে পারে, আমি আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু ঘণ্টায় যে ৩৫ কিলোমিটারের ওপরে দৌড়ায়, এতটা আমার ভাবনায় ছিল না। জিপিএস রেকর্ড দেখে আমি নিজেই অবাক হয়েছি। এই সামর্থ্য কখনোই অনুশীলন করে আয়ত্ত করা যায় না। ও এটা প্রাকৃতিকভাবে পেয়েছে। ক্রীড়া বিজ্ঞানের ভাষায় ওর শরীরে হোয়াইট ফাইবার বেশি। ফলে অ্যাজিলিটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের। যার জন্য এত জোরে দৌড়াতে পারে।’

গত বছর স্বাধীনতা (২০১৬-১৭ মৌসুমের) কাপ জয় করে হইচই ফেলে দিয়েছিল অখ্যাত তরুণদের নিয়ে গড়া মারুফুলের আরামবাগ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে দেখেছিলাম এক অখ্যাত তরুণের লম্ফঝম্ফ। ম্যাচে শুধু একটা গোলই করেননি, প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচকে বাধ্য করেছিলেন বারবার কৌশল বদলাতে। ৪-৩-৩ ফরমেশনের বাঁ প্রান্তে ফরোয়ার্ড হিসেবে খেললেও দৌড়ালেন টাচলাইন টু টাচলাইন। দুর্দান্ত গতির সঙ্গে বলটাও কথা শোনে কুমিল্লার ছেলেটির। বাঁ প্রান্তে কখনো ‘সাইড স্টেপে’, আবার কখনো ‘স্টেপ ওভারে’ অনায়াসে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলেছে প্রতিপক্ষ রাইটব্যাককে। আরিফের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পারায় ২৮ মিনিটেই মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনীর রাইটব্যাক পিন্টুকে। স্বীকৃতিস্বরূপ হাতে উঠেছিল ম্যাচসেরার পুরস্কার।

উচ্চতা মেরেকেটে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হতে পারে। কিন্তু মাঠে নামলেই দেখা যায় তাঁর ক্যারিশমা। এবার শুরু থেকেই মারুফুল হকের হাতে পড়ে হয়ে উঠেছেন আরও ক্ষুরধার। গোল করাতে জুড়ি নেই, লিগে নিজেও করেছেন তিন গোল। দ্রুতগতির এমন পরিণত ফুটবলারকে জাতীয় দলের কোন কোচই বাইরে রাখতে পারেন! বাংলাদেশের ইংলিশ কোচ জেমি ডেও পারেননি। যদিও ইনজুরির কারণে শেষ পর্যন্ত কম্বোডিয়ায় যাওয়া হয়নি। তবে এখন কাতারে আছেন এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ যুবদলের ক্যাম্পে।

এবার আসা যাক বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে দেশের উদীয়মান তরুণের গতির তুলনায়। গত বছরের শেষ দিকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন ফুটবলার গ্যারেথ বেল। রিয়াল মাদ্রিদের এই ফুটবলার ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ গতি তুলেছিলেন ঘণ্টায় প্রায় ৩৬.৯ কিলোমিটার। ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতানো কিলিয়ান এমবাপ্পে ৩৬ কিলোমিটার। তালিকায় দশের মধ্যে নেই বয়স ত্রিশ পেরিয়ে যাওয়া মেসি ও রোনালদো। ২০১৭ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, রোনালদোর গতি নেমে এসেছে ৩৩ কিমি আর ৩২.৫০ কিমি মেসির। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা যেমন বাড়ে, ঠিক তেমনি নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর গতিও কমে আসে। ক্রীড়া বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী সাধারণত ২৮ বছরের পরে খেলোয়াড়দের গতি কমে যায়।

আরিফের বয়স এখন বিশ। আশা করাই যায় ভবিষ্যতে আরও জোরে দৌড়ানোর ক্ষমতা রাখবেন এই তরুণ। আর গতির সঙ্গে টেকনিক্যালি ও ট্যাকটিক্যালি উন্নতি হলেই বাংলাদেশ পেতে পারে পরিপূর্ণ এক ফুটবলার।

দেখতে পারেন আরিফের (১১ নম্বর জার্সি) ঝড়ের গতির একটি নমুনা। এখানে ৪৭ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছেন ৪.৯১ সেকেন্ড সময়ে। অর্থাৎ সেকেন্ডে অতিক্রম করেছেন ৯.৫৭২ মিটার।