আইপিএলে কোহলি-গেইলদের চেয়ে ভয়ংকর যিনি

আইপিএলে ঝড় তোলার জন্য ভরসা করা যায় যাদের ওপর। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
আইপিএলে ঝড় তোলার জন্য ভরসা করা যায় যাদের ওপর। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
>আইপিএলে কোহলির চেয়ে কার্যকরী ব্যাটসম্যান আরও আছেন।

টি-টোয়েন্টির রাজা গেইল, ছক্কার রাজাও ‘ইউনিভার্স বস’। বয়স তাই চল্লিশ ছোঁয়ার পরও ক্যারিবীয় ওপেনারকে পাওয়ার জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে। আইপিএলে ইদানীং গেইলের গুরুত্ব কমেছে। কিন্তু রেকর্ডের পাতা থেকে তাঁকে সরাতে বহু কষ্ট করতে হবে। সর্বোচ্চ ইনিংস, ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা, সব মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা, দ্রুততম সেঞ্চুরি-সব রেকর্ডই নিজের দখলে রেখেছেন গেইল। তাই গেইল ক্রিজে থাকা মানেই দর্শক অপেক্ষায় থাকেন, এই বুঝি বল উড়ে এল গ্যালারিতে। কারণ, দর্শক তো জানেন গেইল যখন ফর্মে থাকেন, তখন চারের চেয়ে ছক্কাই বেশি হয়।

মজার ব্যাপার, পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে গেইলের চেয়েও ভয়ংকর ব্যাটসম্যান আছে আইপিএলে। একজন ব্যাটসম্যান বাউন্ডারি মারলে ছক্কা হওয়ার সম্ভাবনা কত, এ সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যান দিয়েছেন টিএস্ট্যাটের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিক ফিনলে। সোজা বাংলায় আইপিএলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পেশির জোর কার বেশি, সেটিই বের করার চেষ্টা করেছেন এই বিশেষজ্ঞ। তাঁর চোখে পেশির জোরে হেরে গেছেন গেইল!

আইপিএলে কমপক্ষে এক হাজার রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের প্রতি বাউন্ডারি থেকে কত রান আসে, সে হিসাবে দেখা গেছে গেইল আছেন দুই নম্বরে। তাঁর প্রতি বাউন্ডারি থেকে ৪.৯৫ রান আছে। এটা ৫ এর ওপর হলেই বলা যেত চারের চেয়ে ছক্কা বেশি মারেন গেইল। গেইলের জন্য স্বস্তির খবর, তাঁকে যিনি টপকেছেন তিনিও এই কীর্তি গড়তে পারেননি। প্রতি বাউন্ডারিতে ৪.৯৬ রান নিয়ে গেইলকে টপকে গেছেন তাঁর স্বদেশি কাইরন পোলার্ড। বছরের পর বছর কেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এই অলরাউন্ডারকে ধরে রাখছে, সেটি এবার বোঝা যাচ্ছে!

প্রতি বাউন্ডারিতে রান তোলার ক্ষেত্রে এই দুজনের পরেই আছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (৪.৯১)। শীর্ষ পাঁচের বাকি দুজনও বিদেশি খেলোয়াড়—ডেভিড মিলার (৪.৮৫৬) ও রস টেলর (৪.৮২১)। ছয় ও সাতে এসে দুই ভারতীয় জায়গা পেয়েছেন। টি-টোয়েন্টির দ্রুততম পঞ্চাশের মালিক যুবরাজ সিং এর প্রতি বাউন্ডারিতে ৪.৮১ রান আসে। আর মহেন্দ্র সিং ধোনি তোলেন ৪.৮০৭ রান।

শক্তির চেয়ে কবজি ব্যবহার করাতেই বেশি পারদর্শী বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন ও ডেভিড ওয়ার্নার। ফলে ছক্কার চেয়ে চারই বেশি মারেন তারা। এ কারণেই বাউন্ডারিতে বেশি রান তোলার শীর্ষ ২৫-এ জায়গা হয়নি এঁদের কারও।

শুধু চার ছক্কা মারলেই তো হয় না। এক-দুই রান নিয়ে রানের গতিটা ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কাজে সবচেয়ে সিদ্ধহস্ত স্মিথ। বাউন্ডারি মারতে পারেননি এমন বলে সবচেয়ে বেশি রান নেন এই অস্ট্রেলিয়ান। এমন ক্ষেত্রে বল প্রতি ০.৭৫৯ রান তোলেন স্মিথ। অর্থাৎ ডট বল খুবই কম দেন স্মিথ। এ ক্ষেত্রে তাঁর পরে আছেন উইলিয়ামসন (০.৭৪২)। তৃতীয়স্থানে থাকা নামটিই বিস্ময় জাগাচ্ছে। বাউন্ডারি মারার শীর্ষ পাঁচে থাকা কিলার ডাক নামের মিলার বাউন্ডারি না মেরেও দ্রুত রান তুলতে পারেন (০.৭৪২)। এরপরই আছেন ধোনি (০.৭৩৬)। কবজিকে কাজে লাগানোয় অন্যতম সেরা জেপি ডুমিনি নিয়েছেন পঞ্চম স্থানটি (০.৭৩৪)। সাধারণ চোখে প্রতি বলেই রান নিতে পারেন বলে মনে করান কোহলি। কিন্তু এ তালিকায় তাঁর অবস্থান (১৭) ও বল প্রতি রান (০.৬৭৫) বলছে সেটা দৃষ্টিভ্রম ছিল!

বাউন্ডারি মারা ও দৌড়ে রান নেওয়া-দুই ক্ষেত্রেই ক্ষমতা দেখিয়েছেন মিলার ও ধোনি। ফলে একটি বাউন্ডারি ছিল এমন প্রতি দুই বলে বেশি রান তোলার সেরা পাঁচেও আছেন তাঁরা। যেহেতু সব বলে ছক্কা মারা হয় না, এবং সব বলে ডটও হয় না, তাই টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কার্যকর ব্যাটসম্যানের সংজ্ঞায় এ তালিকাই বেশি কার্যকরী। একটি বাউন্ডারি সমৃদ্ধ দুই বলে মিলার তোলেন ৫.৫৯৮ রান। আর ধোনির সংগ্রহ এ ক্ষেত্রে ৫.৫৪৩। তবে এ দুজনের চেয়ে এগিয়ে আছেন চার-ছক্কা হাঁকানোর জন্য বিখ্যাত পোলার্ড ৫.৬০১। আরেক ছক্কাবাজ ম্যাক্সওয়েল আছেন চারে (৫.৫৩২)। পেশির শক্তিতে দশে থাকা ডুমিনি দৌড়ে রান তোলার মতোই এ তালিকাতেও আছেন পাঁচে (৫.৫০৫)। রস টেলর (৫.৪৯৩) ও এবি ডি ভিলিয়ার্স (৫.৪৫৪) আছেন এরপরই। দৌড়ানোয় খুব একটা আগ্রহ না দেখালেও নয়ে ঢুকে পড়তে অসুবিধা হয়নি গেইলের (৫.৪১৬)। মজার ব্যাপার, কোহলি-স্মিথ-ওয়ার্নার এখানেও স্থান পাননি শীর্ষ পঁচিশে!